জুমবাংলা ডেস্ক: টানা ১৫ দিনের সফরে জাপান, যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রথমে তিনি জাপানে যাবেন। এরপর ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংকের ৫০ বছর পূর্তি অনুষ্ঠানে এবং সবশেষে বৃটেনে রাজার অভিষেকে যোগ দেবেন তিনি।
বাংলাদেশের সঙ্গে জাপানের সম্পর্কের ৫০ বছর পূর্তিতে আগামী ২৫ থেকে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত জাপান সফর করবেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রীর সফরে দুই পক্ষের মধ্যে আট থেকে ১০টি সমাঝোতা স্মারক ও চুক্তি সই হওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে পররাষ্ট্র দপ্তর জানিয়েছে।
উত্তর-পূর্ব ভারত এবং নেপাল ও ভুটানের বাজার ধরতে বাংলাদেশে অর্থনৈতিক হাব প্রতিষ্ঠার যে পরিকল্পনা করছে জাপান, এই সফরে সে বিষয়ে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিস্তারিত আলাপ হবে বলে জানা গেছে।
জাপানের বিনিয়োগ পরিকল্পনার মধ্যে একটি শিল্পাঞ্চল তৈরিসহ বাংলাদেশে শিল্প স্থাপন ও বন্দর তৈরিতে বিনিয়োগ রয়েছে। শিল্পাঞ্চলে উৎপাদিত পণ্য তারা ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল, নেপাল ও ভুটানে বাজারজাত করতে চায়। এজন্য তারা যোগাযোগ অবকাঠামোও গড়ে তুলতে চায়।
বাংলাদেশের তিনটি অবকাঠামো প্রকল্পে বিনিয়োগ করবে জাপান। যার মধ্যে আছে মাতারবাড়ি এলাকায় নতুন একটি বাণিজ্যিক বন্দর। এই বন্দরের সঙ্গে ত্রিপুরাসহ ভারতের স্থলবেষ্টিত উত্তর-পূর্বাঞ্চল সংযুক্ত হবে। তবে এই বন্দরের মাধ্যমে তারা বৃহত্তর আন্তর্জাতিক বাজারও ধরতে চায়।
এই সফরে জাপানের প্রধানমন্ত্রী ফুমিও কিশিদার সঙ্গে বৈঠক ছাড়াও শেখ হাসিনা তার সম্মানে নৈশ ভোজে অংশ নেবেন। তিনি জাপানের সম্রাট নারুহিতোর সঙ্গেও সাক্ষাৎ করবেন। সফরে প্রধানমন্ত্রী একটি বিনিয়োগ সম্মেলন, স্থানীয় বাংলাদেশিদের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানসহ কয়েকটি দ্বিপাক্ষিক অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে অবদান রাখায় কয়েকজন জাপানি বন্ধুর হাতে ‘ফ্রেন্ডস অব লিবারেশন ওয়ার’ শীর্ষক সম্মাননা তুলে দেবেন প্রধানমন্ত্রী।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সেহেলী সাবরীন সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, সফরে দুইপক্ষের মধ্যে সই হওয়া চুক্তি বা সমাঝোতা স্মারকের মধ্যে রয়েছে মেট্রোরেলের সমীক্ষা, জাহাজভাঙা শিল্পের আধুনিকায়ন, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ আধুনিকায়ন, বিনিয়োগ সহায়ক মেধাস্বত্ব, শিল্পের মানোন্নয়নের অংশীদারত্ব এবং শুল্ক খাতের সমন্বয়। প্রতিরক্ষা খাতেও তিনটি সমাঝোতা সই হতে পারে। এছাড়া ঢাকা ও টোকিওর মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট চালু এবং নারায়ণগঞ্জ ও নারুতুর মধ্যে টুইন সিটি চালুর বিষয়েও ঘোষণা আসতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শেখ হাসিনা এর আগে পাঁচ বার জাপান সফর করেন। তিনি প্রথমবার জাপান সফর করেন ১৯৯৭ সালের জুলাই মাসে।
জাপান থেকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৮ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্র যাবেন। বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে সম্পর্কের সুবর্ণজয়ন্তী পালন উপলক্ষে তিনি ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংকের একটি বিশেষ অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। ১ মে ওয়াশিংটনে বিশ্বব্যাংকের সদর দপ্তরে সমাপনী অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেবেন।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর এই সফরে বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে একাধিক প্রকল্পে অন্ততঃ ১২৫ কোটি ডলারের ঋণসহায়তার চুক্তি হতে পারে। বাংলাদেশি মুদ্রায় যা প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা।
আঞ্চলিক যোগাযোগ বৃদ্ধির জন্য বিশেষ করে নেপাল ও বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য সম্প্রসারণে সড়কসহ অন্য যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্পে ৭৫ কোটি ডলার এবং ভাঙন থেকে নদীতীর রক্ষা ও বন্যা নিয়ন্ত্রণের আরেকটি প্রকল্পে ৫০ কোটি ডলার দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক।
এছাড়াও আরও দুই-তিনটি প্রকল্পে ঋণসহায়তা নিয়ে আলোচনা চলছে। দর-কষাকষি চূড়ান্ত হয়ে গেলে প্রধানমন্ত্রীর সফরের সময় এসব ঋণচুক্তি হতে পারে। সে ক্ষেত্রে সহায়তার পরিমাণ আরও বাড়বে।
গত ৫০ বছরে বাংলাদেশকে সব মিলিয়ে তিন হাজার ৮০০ কোটি ডলার দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। বর্তমানে ৫৭টি চলমান প্রকল্পে এক হাজার ৬০০ কোটি ডলার বিনিয়োগ করেছে বিশ্বব্যাংক।
বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে গত পাঁচ দশকের সম্পর্ক সবচেয়ে বড় ধাক্কা খায় পদ্মা সেতুর অর্থায়ন নিয়ে। পদ্মা সেতুতে ১২০ কোটি ডলার দেওয়ার কথা ছিল বিশ্বব্যাংকের। কিন্তু দুর্নীতি হতে পারে, এমন অভিযোগ তুলে ২০১১ সালে অর্থায়ন থেকে সরে দাঁড়ায় সংস্থাটি। শেষ পর্যন্ত বাংলাদেশ নিজস্ব অর্থায়নে ৩২ হাজার কোটি টাকায় পদ্মা সেতু নির্মাণ করে।
আগামী ৬ মে বৃটেনের রাজা তৃতীয় চার্লসের অভিষেক অনুষ্ঠান। ওই অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার কথা রয়েছে শেখ হাসিনার। তিনি ওয়াশিংটন থেকে ৪ এপ্রিল লন্ডন যাবেন। ৯ মে প্রধানমন্ত্রীর দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।