দীর্ঘ অপেক্ষার পর অবশেষে ২০ আগস্ট দ্বিতীয় তিস্তা সেতুর উদ্বোধন করা হবে বলে জানা গেছে। স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মোহাম্মদ শামীম বেপারীর স্বাক্ষরিত এক অফিসিয়াল এক চিঠিতে এ তারিখের কথা জানানো হয়।
মঙ্গলবার (১২ আগস্ট) বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গাইবান্ধা এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী উজ্জ্বল চৌধুরী।
জানা যায়, গত কয়েক মাসে সেতুটির উদ্বোধন নিয়ে তারিখ পরিবর্তনের ঘটনা ঘটেছে। জুলাইয়ে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব সেতু পরিদর্শন করে জুলাই মাসেই উদ্বোধনের ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। এরপর আগস্টের শুরুতে ২ আগস্ট, পরে ২৫ আগস্ট ঘোষণা হয়, সর্বশেষ ২০ আগস্ট তারিখ নিশ্চিত করা হয়।
এ বিষয়ে এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী উজ্জ্বল চৌধুরী বলেন, সেতুর লাইটিং ও রংয়ের কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে এবং ২০ আগস্ট থেকে কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধার মানুষের জন্য সরাসরি সড়কপথে যাতায়াত শুরু হবে।
তিনি বলেন, দ্বিতীয় তিস্তা সেতু শুধুমাত্র দুই জেলার মানুষকে সংযুক্ত করবে না, বরং উত্তরবঙ্গের অর্থনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন নিয়ে আসবে। কুড়িগ্রাম থেকে গাইবান্ধা হয়ে ঢাকায় যাত্রার দূরত্ব প্রায় ১৩৫ কিলোমিটার কমবে, যার ফলে তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টা সময় বাঁচবে। অনুষ্ঠানে মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া সেতুটি উদ্বোধন করবেন।
সূত্র জানায়, সৌদি সরকারের অর্থায়নে নির্মিত এবং চায়না স্টেট কনস্ট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড কর্তৃক তত্ত্বাবধানে নির্মিত এই সেতুটি এলজিইডির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় প্রকল্প। মোট ব্যয় হয়েছে ৮৮৫ কোটি টাকা, দৈর্ঘ্য ১,৪৯০ মিটার এবং প্রস্থ ৯.৬ মিটার।
সেতুর সংযোগে প্রায় ৮৬ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ করা হয়েছে, যেখানে রয়েছে ৫৮টি বক্স কালভার্ট ও ৯টি আরসিসি সেতু। সেতুতে বসানো হয়েছে ৩১টি স্প্যান। সংযোগ সড়ক হরিপুর, বেলকা বাজার, পাঁচপীর, ধর্মপুর, হাট লক্ষ্মীপুর, সাদুল্যাপুর ও ধাপেরহাটসহ গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জ ও কুড়িগ্রামের চিলমারী অঞ্চলকে বিভিন্ন বাজার ও মহাসড়কের সঙ্গে যুক্ত করবে। এছাড়া নদী ভাঙ্গন রোধে সেতুর দুইপাশে প্রায় সাড়ে ৩ কিলোমিটার নদী শাসন কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
২০১৪ সালের ২৫ জানুয়ারিতে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন হলেও প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০২১ সালে। এলজিইডির প্রধান প্রকৌশলী গোপাল কৃষ্ণ দেবনাথ ২০২৪ সালের নভেম্বরে পরিদর্শনকালে জানিয়ে ছিলেন, সেতুটি ২০২৫ সালের মার্চে উদ্বোধন হতে পারে। এরপর চূড়ান্তভাবে এবছর আগস্টেই উদ্বোধনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
দ্বিতীয় তিস্তা সেতু উদ্বোধন হলে উত্তরাঞ্চলের যাতায়াত সহজতর হবে এবং এ অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বড় ধাক্কা আসবে বলে আশা করছেন স্থানীয়রা।