শিল্পবিপ্লবের পর এই প্রথম কোনো বছরের গড় তাপমাত্রা দেড় ডিগ্রি বৃদ্ধি পেল। গত বছরের তাপমাত্রাও অনেক বেশি ছিল। ১৯৯১-২০২০ সালের গড় তাপমাত্রা থেকে গত বছরের তাপমাত্রা ছিল ০.৬০ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। এবার তা বেড়ে গেছে অনেকখানি। এ তথ্য নিশ্চিত করেছে কোপার্নিকাস ক্লাইমেট চেঞ্জ সার্ভিস, বার্কলি আর্থ ও ইউকে মেট অফিস। আজারবাইজানে চলমান কপ২৯ সম্মেলন উপলক্ষ্যে এ তথ্য জানানো হয়েছে নিশ্চিতভাবে।
বছরের শুরুতে এই প্রচণ্ড উত্তাপে ঘি ঢেলে এল নিনো। পরে এল নিনো বিদায় নিয়েছে বটে, কিন্তু প্রচণ্ড উত্তাপ টের পাওয়া গেছে বছরজুড়েই। চারপাশে তাকিয়ে আপনি নিশ্চয়ই নিজেই বুঝতে পারছেন, বাড়ছে পৃথিবীর তাপমাত্রা। গরমের সময় আমরা দেখেছি, কাঠফাটা রোদ। এই রোদে, প্রচণ্ড গরমে টেকা দায়।
অনেকেই ভাবছেন, এভাবে গরম পড়লে আসলে বাঁচা সম্ভব? এ সবই জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব। মানুষের ইতিহাসে শিল্পবিপ্লব ছিল একটা বড় ব্যাপার। মানুষ যখন আবিষ্কার করল জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানোর মাধ্যমে অনেক দ্রুত, অনেক কম চেষ্টায় কাজ করা যায়; তখন কয়লা, তেল ও গ্যাসের মতো জীবাশ্ম জ্বালানি হয়ে ওঠে তাপ এবং বিদ্যুতের নির্ভরযোগ্য উৎস। এই আবিষ্কার আধুনিক সভ্যতাকে বর্তমান রূপ দিয়েছে। সেই সঙ্গে পৃথিবীকে ঠেলে দিয়েছে বিপন্নতার মুখে।
দেখা যাচ্ছে, জীবাশ্ব জ্বালানি ব্যবহারের ফলে সৃষ্ট প্রচণ্ড উত্তাপ বহু প্রাণী এবং অগণিত মানুষের মৃত্যুর জন্য সরাসরি দায়ী। শুধু তা-ই নয়। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে দেখা যাচ্ছে ভয়ংকর সব প্রাকৃতিক দুর্যোগ। প্রাণঘাতী বন্যা হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার ভ্যালেন্সিয়ায়, হারিকেন আঘাত হেনেছে যুক্তরাষ্ট্রের মিল্টনে, পেরুতে দেখা গেছে প্রচণ্ড দাবানল, বাংলাদেশের বন্যায় নষ্ট হয়েছে ১ মিলিয়ন বা ১০ লাখ টন ধান, মারা গেছেন ও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন বহু মানুষ।
দ্য ওয়ার্ল্ড মিটিওরলজিক্যাল অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউএমও) মহাসচিব সেলেস্টে সাউলো বলছেন, ‘এই রেকর্ডভাঙা বৃষ্টিপাত, বন্যা, ভয়ংকর সাইক্লোন ও প্রাণঘাতী উত্তাপ বা ভয়ংকর খরা—এ সবই আমাদের ভবিষ্যতের প্রতিচ্ছবি, নতুন বাস্তবতা।’
অস্ট্রেলিয়ান ন্যাশনাল ইউনির্ভার্সিটির জলবায়ুবিজ্ঞানী মার্ক হাউডেন বলছেন, বিশ্বনেতা ও ব্যবসায়ীরা শিগগিরই ব্যবস্থা না নিলে দ্রুতই গড় তাপমাত্রা বৃদ্ধির মান দাঁড়াবে ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। হাউডেন বলছেন, ‘২.৫-২.৯৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের দিকে তাপমাত্রা বৃদ্ধি এগোতে থাকলে ভয়ংকর পরিস্থিতির মুখোমুখি হব আমরা।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।