২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে ফের ইলিশ ধরা শুরু

২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে ফের ইলিশ ধরা শুরু

জুমবাংলা ডেস্ক : ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে আবারও ইলিশ ধরা শুরু হয়েছে। শুক্রবার মধ্যরাত থেকেই ইলিশ ধরা শুরু করেন জেলেরা। ফলে আজ সকাল থেকেই বাজারে মিলবে ইলিশ। নতুন ইলিশ আসার খবরে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। এদিকে নিষেধাজ্ঞা কঠোরভাবে বাস্তবায়নের পাশাপাশি সিত্রাংয়ের প্রভাবে মা ইলিশ অবাধে ডিম ছাড়তে পারায় এবার রেকর্ডসংখ্যক উৎপাদন হবে বলে আশা করছে মৎস্য বিভাগ।

২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা শেষে ফের ইলিশ ধরা শুরু

কর্মকর্তারা বলছেন, সিত্রাংয়ের প্রভাবে বাড়তি বৃষ্টি হওয়ায় এবং নদীতে ব্যাপক স্রোতসহ পানির লবণাক্ততা কমে যাওয়ায় মা ইলিশ নদীর মিষ্টি পানিতে এসে ডিম ছেড়েছে। এতে ইলিশের উৎপাদন বাড়বে। ব্যুরো ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

সরগরম চট্টগ্রামের মৎস্য ঘাটগুলো : চট্টগ্রামে বিভিন্ন ফিশারি ঘাটে জেলেরা শুক্রবার সকাল থেকে সাগরে নামার প্রস্তুতি নেন। জাল সংগ্রহ ও ট্রলারে খাবারের ব্যবস্থা করেন। পাইকার ও আড়তদারদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে ওঠে মৎস্য ঘাটগুলো। বিগত সময়ে সাগরে মাছ কম ধরা পড়লেও এবার আশায় বুক বাঁধছেন তারা।

জেলা মৎস্য অফিসের কর্মকর্তারা জানান, মাছ ধরা বন্ধ থাকাকালে চট্টগ্রামের ১৭ হাজার ৫শ নিবন্ধিত জেলে পরিবারকে ২০ কেজি করে চাল সাহায্য দেওয়া হয়েছে। ইলিশের বিকিকিনি বন্ধ করতে বিভিন্ন হাটবাজারেও অভিযান চালানো হয়েছে। শুক্রবার জেলার পাঁচটি উপজেলা ও মহানগরীর একাধিক ঘাটে জেলেরা অবস্থান নেন।

এসব ঘাটের মধ্যে রয়েছে-ফিশারি ঘাট, রাসমনি ঘাট, আনন্দ বাজার ঘাট, উত্তর কাট্টলি, দক্ষিণ কাট্টলি, আকমল আলী ঘাট। এছাড়া বাঁশখালী, মীরসরাই, আনোয়ারা, সন্দ্বীপ ও সীতাকুণ্ডের উপকূল এলাকায় বিভিন্ন ঘাট থেকেও বিপুলসংখ্যক জেলে দিনভর মাছ ধরার প্রস্তুতি নেন। রাত ১২টায় নিষেধাজ্ঞার সময়সীমা পার হলে তারা একযোগে সাগরে মাছ ধরতে যান। ইলিশের নিরাপদ প্রজননের লক্ষ্যে ৭ অক্টোবর থেকে সাগরে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছিল।

সকালে নতুন ফিশারি ঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, জেলেরা কর্মব্যস্ত সময় পার করছেন। কেউ মাছ ধরার জাল ঠিক করছেন। কেউ জাল বুনছেন, কেউ নৌকা ধোয়ামোছা করছেন। কেউ কেউ রান্নার উপকরণ লাকড়ি জোগাড় করছেন। আবার কেউ কেউ শিকার হওয়া মাছ সংরক্ষণ করতে ককশিটের বক্সও প্রস্তুত করছেন। আবার কেউ ট্রলার, ইঞ্জিন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করছেন। জেলেরা বলছেন, সাগরে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা থাকায় ইলিশসহ অন্যান্য মাছ অবাধে বিচরণ ও বংশবিস্তার করেছে। ফলে এবার বিপুল পরিমাণ ও বড় আকারের ইলিশ পাওয়ার আশা করছেন তারা।

সূত্র জানায়, কিছু অসাধু জেলে সরকারের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে গভীর সমুদ্রে গিয়ে মা ইলিশ আহরণ করেছিল। আহরিত এসব মা ইলিশ সরাসরি বাজারে বিক্রির পাশাপাশি তারা বিভিন্ন কোল্ডস্টোরেজে গুদামজাত করে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তারা অন্যান্য সামুদ্রিক মাছের আড়ালে এসব মাছ বাজারে নিয়ে যায়।

বোট মালিক সমিতির নেতারা জানান, ২২ দিন মৎস্য ঘাট ও জেলেপল্লিগুলো নীরব ছিল। বন্ধ ছিল উপকূলীয় মৎস্য আহরণ কেন্দ্রগুলো। কয়েক হাজার মৎস্য ব্যবসায়ী ও শ্রমিক দীর্ঘ সময় বেকার ছিলেন। এ সময় তালিকাভুক্ত জেলেরা খাদ্য সহায়তা পেয়েছেন। তবে তালিকার বাইরের কয়েক হাজার জেলে সরকারি কোনো সহযোগিতা না পেয়ে পরিবার-পরিজন নিয়ে কষ্টে দিন কাটিয়েছেন।

সমিতির নেতা আবদুর রহমান বলেন, গত দুই বছর বঙ্গোপসাগরে খুব কম মাছ ধরা পড়ছে। এবার নিষেধাজ্ঞা শুরু হওয়ার আগে ৬ বার সাগরে যাই। এতে খরচ হয়েছে ৭ লাখ ৪০ হাজার টাকা। প্রতিবারই ঘাটে ফিরে মাছ বিক্রি করেছি সর্বোচ্চ ৬০-৭০ হাজার টাকা। ধারদেনা করে এখন পথে বসতে হয়েছে আমাদের। একজন জেলেকেও বেতন দিতে পারিনি। অভাবের তাড়নায় হতাশা নিয়েই আজ (শুক্রবার) মধ্যরাতে সাগরে যাব।

ইলিশ নিয়ে শঙ্কায় চাঁদপুরের জেলেরা : চাঁদপুর প্রতিনিধি জানান, শুক্রবার মধ্যরাতে জেলেরা ইলিশ শিকারে নেমেছে। কিন্তু এখানকার জেলেদের একাংশের মধ্যে রয়েছে ক্ষোভ। কারণ নিষেধাজ্ঞা সময়ে তারা মাছ ধরা থেকে বিরত থাকলেও এক শ্রেণির অসাধু জেলে নির্বিচারে মা ইলিশ শিকার করেছে। ফলে এখন নদীতে নেমে ইলিশ পাওয়া না পাওয়ার শঙ্কায় তারা।

চাঁদপুর সদর উপজেলার হানারচর ইউনিয়নের জেলে নবীর হোসেন জানান, সরকার মা ইলিশ রক্ষায় যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে তা আমরা মেনেছি। আমরা নদীতে নামিনি। কিন্তু এক শ্রেণির অসাধু ও মৌসুমি জেলে ঠিকই মা ইলিশ নিধন করে টাকা কামিয়েছে। একই এলাকার জেলে শরাফত জানান, নিষেধাজ্ঞা আমরা সব সময় মানি। কিন্তু এ সময় আমাদের সংসার চলে না। প্রতিবছর এ সময়টা আমাদের ঋণ করে চলতে হয়। বছর শেষে দেখা যায়, একেকজন ২০-৩০ হাজার টাকা ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়ি।

আনন্দবাজার জেলেপল্লির জেলে সৈয়দ আহমেদ জানান, কয়েক বছর ধরে নদীর অবস্থা ভালো নয়। মেঘনা নদীতে চর জেগে উঠায় আগের মতো মাছ পাওয়া যায় না। যে কারণে নিষেধাজ্ঞার সময় অন্য কাজ করতে হয়। কারণ মাছ ধরার কাজ করে সংসার চলে না। আমাদের অনেক জেলে এখন রিকশা-ভ্যান চালান, কেউ কৃষিকাজ করেন।

চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা গোলাম মেহেদী হাসান জানান, জেলায় মা ইলিশ রক্ষা অভিযান আমরা সফলভাবে সম্পন্ন করেছি। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে যারা নদীতে নেমেছে তাদের বিরুদ্ধে মৎস্য আইনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

জন্ম মাস দেখেই বুঝে নিন আপনার গোপন জীবন কেমন