৩ বছর স্মার্টফোন ব্যবহার করেননি সুমাইয়া, জজ হয়ে স্বপ্ন পূরণ
জুমবাংলা ডেস্ক : পরিবারে অর্থসংকট থাকলেও পড়াশোনা কখনো ব্যাহত হয়নি। পড়াশোনার প্রয়োজন মেটাতে কার্পণ্য করেনি সুমাইয়া জান্নাতের পরিবার। সবার ইচ্ছা ছিল তিনি জজ হন। সেই আশা তিনি পূরণ করেছেন। এর পেছনে যে শ্রম ও ত্যাগ রয়েছে তারই একটা নমুনা দিয়েছেন সুমাইয়া—খুব দরকার থাকা সত্ত্বেও তিন বছর স্মার্টফোন ব্যবহার করেননি তিনি।
অতিপ্রয়োজনীয় যোগাযোগের জন্য ব্যবহার করেছেন বাটন ফোন। অবশ্য প্রয়োজন পড়লে—ক্লাস শিডিউল জানতে, চাকরির আবেদন, থিসিস ও অন্যান্য দরকারি কাজে বড় ভাইয়ের স্মার্টফোন দিয়ে কাজ সেরেছেন। এর বাইরে মোবাইল ফোনে বা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোনো সময় নষ্ট করতেন না।
চারদিকে সোশ্যাল মিডিয়ায় সবার এত মাতামাতি দেখলেও নিজেকে সামলে রেখেছেন সুমাইয়া। পড়াশোনার বাইরে সময় নষ্ট করা তাঁর ধাতে নেই।
সুমাইয়া জান্নাত পলি মৃত আব্দুল মতিন ও রহিমা খাতুনের সাত সন্তানের মধ্যে ষষ্ঠ। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন ও বিচার বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। ১৫ তম বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষায় সহকারী জজ বা জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে নির্বাচিত হয়েছে। গত ২৪ জানুয়ারিতে প্রকাশিত বাংলাদেশ জুডিশিয়াল সার্ভিস পরীক্ষার ফলাফলে ৫৮ তম হয়েছেন সুমাইয়া। এর আগে ২২ জানুয়ারি সহকারী শিক্ষক হিসেবে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জয়েন করেছিলেন তিনি। এ ছাড়া গত ১১ মার্চ প্রকাশিত আইনজীবী হিসেবে এনরোলমেন্টের (তালিকাভুক্তি) জন্য বার কাউন্সিলের মৌখিক পরীক্ষায়ও উত্তীর্ণ হয়েছেন সুমাইয়া জান্নাত। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁর বিভাগ থেকে পাস করেছেন মোট ১৭ জন।
নকলা পাইলট স্কুল থেকে এসএসসি এবং চৌধুরী ছবরুন নেছা মহিলা ডিগ্রি কলেজ থেকে মানবিকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন সুমাইয়া। ২০১৪ সালে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন ও বিচার বিভাগে ভর্তির সুযোগ পান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ না হওয়ায় একটু চিন্তায় ছিলেন। কখনো জজ হওয়ার স্বপ্ন ছাড়েননি। ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার কোনো ইচ্ছা তাঁর কখনো ছিল না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে না পারার দুঃখ ঘোচাতে সেই থেকে সুমাইয়া জান্নাত স্বপ্ন পূরণে আরও উঠেপড়ে লেগে যান।
বার জুডিশিয়ারি পরীক্ষায় প্রথমবারই সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন সুমাইয়া। কিন্তু পরে বাদ পড়ে যান। তবে হতাশ হননি। লিখিততে সব সময়ই ৬০০–এর বেশি নম্বর পেয়েছেন। সুমাইয়ার আত্মবিশ্বাস ছিল, তিনি পারবেন। তবে বিভিন্ন চাকরির পরীক্ষায় সাতবার সাক্ষাৎকার পর্যন্ত গিয়েও ব্যর্থ হওয়ার পর মনোবল কিছুটা ভেঙে গিয়েছিল। স্নায়ুচাপ বেড়ে যাচ্ছিল, কারণ অন্য কোনো চাকরির পরীক্ষার জন্য কখনো প্রস্তুতি নেননি তিনি।
পরিবারের সদস্য ও শিক্ষকেরাই তাঁকে অনুপ্রেরণা ও সাহস জুগিয়েছেন বলে জানান সুমাইয়া জান্নাত। তিনি বলেন, ‘সব সময় অনুপ্রেরণা জুগিয়েছে আমার মা, আমার বড় বোন, আমার কলেজের শিক্ষকেরা, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা। আমার কলেজের শিক্ষকদের প্রতি আমি অনেক কৃতজ্ঞ। আমার বেস্ট ফ্রেন্ড, যার বাসায় থেকে আমি জুডিশিয়ারি রিটেন দিয়েছি, তার এবং তার ফ্যামিলি প্রতি আমি অনেক কৃতজ্ঞ। তাই আমার এ অর্জন আমি আমার ফ্যামিলি, স্কুলের শিক্ষকদের, কলেজের শিক্ষকদের, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের, আমার বান্ধবী বৃষ্টি, মিম এবং তাদের ফ্যামিলিকে উৎসর্গ করতে চাই যারা আমাকে সব সময় সাহায্য করেছে। বাবা বেঁচে থাকলে নিঃসন্দেহে অনেক খুশি হতেন। বাবাকে সব সময় মিস করি। মাও অনেক খুশি হয়েছেন।’
প্রস্তুতির বিষয়ে সুমাইয়া জান্নাত বলেন, ‘প্রস্তুতি শুরু করেছিলাম জেনারেল বিষয়গুলো পড়ার মাধ্যমে, ক রো না র সময় ছয় মাস শুধু জেনারেল বিষয়গুলো পড়েছি, পরবর্তীতে শুধু ল–এর সাবজেক্টগুলো পড়েছি।’
যারা জজ হতে চান তাদের প্রতি সুমাইয়ার পরামর্শ—একদম প্রথম সেমিস্টার থেকে যেসব সাবজেক্ট জুডিশিয়ারিতে আছে সেগুলো ভালোভাবে নোট করে পড়া এবং সঙ্গে প্রিলি, রিটেনের প্রশ্নগুলো সলভ করা, আর ৪র্থ বর্ষ থেকেই জেনারেল বিশেষ করে ম্যাথ, ইংরেজি পড়া উচিত। একটা গোছানো প্রিপারেশন থাকলে প্রথমবার জজ হওয়া সম্ভব।
দেশের সেবা করার ইচ্ছা ছোটবেলা থেকেই ছিল, এ পেশা দিয়ে কিছুটা হলেও দেশের সেবা করতে পারবেন বলে আশা করছেন সুমাইয়া। তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে একজন সৎ, নিষ্ঠাবান, ন্যায়বিচারক হয়ে দেশের সেবা করতে চাই। নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগ নিয়ে আমার প্রত্যাশা অনেক, আমার জুনিয়রদের প্রতি আমার আস্থা আছে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো আমাদের স্টুডেন্টদের দ্বারা আইন অঙ্গন মুখরিত হবে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।