জুমবাংলা ডেস্ক : সড়কের পাশেই সম্প্রতি প্রায় ৩০ ফুট গভীর খনন করা পুকুরই যেন মুহুর্তের মধ্যেই মৃত্যুকূপে পরিণত হয়েছে। একে একে পুকুর থেকে তোলা হয় ১৭ জনের নিথর দেহ। এ ছাড়া আরও অন্তত ৩৫ জনকে পুকুরটি থেকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।
ঝালকাঠি সদর উপজেলার ধানসিঁড়ি ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন ছত্রকান্দা এলাকায় আজ শনিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে একটি যাত্রীবাহী বাস উল্টে ওই পুকুরটিতে পড়ে। এতে এই হতাহতের ঘটনা ঘটে। বাসার স্মৃতি পরিবহন নামের বাসটি ভান্ডারিয়া থেকে বরিশাল যাচ্ছিল। বাসটির যাত্রীদের অভিযোগ, অতিরিক্ত যাত্রী ও অদক্ষ চালকের বেপরোয়া গতির কারণেই এ ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটেছে।
নিহত যাদের পরিচয় জানা গেছে তারা হলেন- তারেক রহমান (৪৫), সালাম মোল্লা (৬০), খাদিজা বেগম (৪৩), রাজাপুর থানার খুশবো আক্তার (১৭), শাহীন মোল্লা (২৫), সুমাইয়া (৬), আবদুল্লাহ (৮), রহিমা বেগম (৬০), আবুল কালাম হাওলাদার, নিপামনি (১), আইরিন আক্তার (২২), নয়ন (১৬), রাবেয়া বেগম (৮০), সালমা আক্তার মিতা (৪২)।
এ দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন বাসটির যাত্রী আজাদ হোসেন (৫০)। বর্তমানে ঝালকাঠি সদর হাসপাতালে ভর্তি আজাদ হোসেন জানান, তিনি লক্ষ্মীপুর থেকে পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া যান। এরপর বরিশালের উদ্দেশে বাসটিতে ওঠেন। তিনি বলেন, বাসটিতে ভেতরে বসা ও দাঁড়ানো অর্ধশতাধিক যাত্রী ছিল। গাড়ির ছাদেও নেওয়া হয় যাত্রী। চালকের অদক্ষতায় এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।
পিয়ারা বেগম (৪৫) নামের আরেক যাত্রী বলেন, ছোট মেয়ে সুমাইয়াকে (৬) নিয়ে চিকিৎসার জন্য বরিশাল যাচ্ছিলাম। পথে বাসটি উল্টে পুকুরে পড়ে যায়। আমি কোনো রকমে জানালা থেকে মাথা বের করে মেয়েকে হাতের কাছে পেয়ে টেনে বের হই। তখন দেখি সে মৃত। বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
ঝালকাঠি ফায়ার সার্ভিসের স্টেশন কর্মকতা শহিকুল ইসলাম বলেন, পুকুরটি প্রায় ৩০ ফুট গভীর হওয়ায় এতো বেশি মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। ঘটনার পর দ্রুত এসে পাম্প লাগিয়ে পুকুরটি সেচ দিয়ে পানি কমিয়ে উদ্ধার করায় অনেককে জীবিত উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে। দুপুর ১টা পর্যন্ত পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের অ্যাম্বুলেন্সে দুর্ঘটনাস্থল থেকে হতাহত যাত্রীদের ঝালকাঠি সদর হাসপাতাল ও বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
স্টেশন কর্মকর্তা বলেন, দুর্ঘটনার সঠিক কারণ জানা যায়নি। তদন্তে কারণ জানা যাবে। এ ছাড়া সড়কের পাশে এমন গভীর পুকুর কেউ যাতে খনন না করে, সে বিষয়েও পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
উদ্ধার কাজে অংশ নিয়ে আহত হওয়া স্থানীয় ইউপি সদস্য ফয়সাল রহমান বাবু বলেন, দুর্ঘটনার সময় আমি পরিষদের সামনেই ছিলাম। পুলিশ এবং দমকলবাহিনী পৌঁছার আগেই আমরা ৫০-৬০ জন মিলে উদ্ধার অভিযান শুরু করি।
ইউপি সদস্য বলেন, সড়কের পাশে পুকুর থাকার কারণে মৃতের সংখ্যা বেশি হয়েছে। মহাসড়কের কাছে পুকুর খনন বন্ধ করা উচিত।
উদ্ধার কার্যক্রমে অংশ নেওয়া ঝালকাঠি দমকল বাহিনীর সদস্য মামুন বলেন, স্থানীয়দের সহায়তায় গাড়ির ভেতরে ডুব দিয়ে এখন পর্যন্ত ১৭ জনের মরদেহ উদ্ধার করেছি।
ঝালকাঠি সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের মেডিকেল অফিসার দ্বীন মোহাম্মদ বলেন, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে এখানে ১২ জন চিকিৎসক আহতদের চিকিৎসা দিচ্ছি। আহতদের কাটা ও ব্যাথার চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। নিহতদের শনাক্ত ও ডাক্তারি পরীক্ষার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে স্বজনদের কাছে মরদেহ হস্তান্তর করা হয়।
এদিকে এ ঘটনায় জেলা প্রশাসন তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। জেলা প্রশাসক ফারাহ গুল নিঝুম স্বাক্ষরিত তদন্ত কমিটিতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মোহাম্মদ মামুন শিবলীকে প্রধান করা হয়েছে। আগামী ৩ দিনের মধ্যে তদন্ত কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
ঝালকাঠি বাসমালিক সমিতির যুগ্মসাধারণ সম্পাদক মু. নাসির উদ্দিন বলেন, দুর্ঘটনাকবলিত বাসের চালক এবং সুপারভাইজারের কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। তবে হেলপার আকাশকে (১৭) পাওয়া গেছে।
পুলিশ সুপার বলেন, এই ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো মামলা করার জন্য কেউ আগ্রহী নন। তবে নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে কেউ কোনো অভিযোগ না করলেও পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করবে। এই ঘটনায় চালক, সুপারভাইজার ও হেলপারকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।
ঝালকাঠির পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আফরুজুল হক টুটুল জানান, পুলিশের বরিশাল বিভাগের ডিআইজি নিহতদের দাফন ও সৎকারের জন্য জনপ্রতি ১ লাখ টাকা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। নিহতদের পরিবারের কাছে টাকা পৌঁছে দেওয়া হবে।
বরিশাল বিভাগীয় কমিশনার মো. শওকত আলী জানান, এ মুহুর্তে এই ঘটনায় নিহতদের জন্য সরকারে পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণের সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে যে সকল জেলার মানুষ এই ঘটনায় নিহত হয়েছেন, সে সকল জেলার জেলা প্রশাসকেরা যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।
ঝালকাঠির পুলিশ সুপার আফরুজুল হক টুটুল জানান, ১৫ জনের মৃতদেহ স্বজনেরা শনাক্ত করেছেন। সেগুলো হস্তান্তর করা হয়েছে। যারা ময়নাতদন্ত ছাড়া মরদেহ নেওয়ার আবেদন করেছেন, তাদের বিষয়টি বিশেষ বিবেচনায় রেখে মরদেহ দেওয়া হচ্ছে। বাকি মরদেহ শনাক্তের জন্য স্বজনেরা আসছেন, শনাক্ত হলে হস্তান্তর করা হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।