জুমবাংলা ডেস্ক : লালিত স্বপ্নকে দীর্ঘ ১৬ বছর বুকে ধারণ করে পুনরায় শিক্ষাকে মেরুদণ্ড হিসেবে গ্রহণ করেন খিজির আহমেদ। জীবনের জন্য শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। শত কর্মব্যস্থতার ও পরিবারের ভরণ পোষণের দায়িত্ব পালনে সদা সচেষ্ট থেকেও শিক্ষা জীবন থেকে পিছপা না হয়ে অর্ধেক জীবনের মাঝপথেই মাধ্যমিক সার্টিফিকেট অর্জনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ছিলেন তিনি। তাই আজ উদ্যমী প্রচেষ্টায় ফলের প্রায়ই দ্বারপ্রান্তে তার অবস্থান।
২০০৫ সালের শেষদিকে পারিবারিক অসচ্ছলতার কারণে পড়ালেখা থেকে ছিটকে পড়তে হয় চাঁদপুরের খিজিরকে। ঐ সময়ে তিনি চাঁদপুরের সিতুষী উচ্চবিদ্যালয়ের এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন। পরিবারের বড় ছেলে হিসেবে তাকে পারিবারের হাল ধরতে হয়। করতে হয় দিনমজুরের কাজ। নিজের হেয়ালি মনোভাব আর পরিবারের অভাব মোচন করতে গিয়ে আর পড়ালেখা করা হয়ে ওঠেনি। কিন্তু আশেপাশের পড়ুয়া ছেলে মেয়েদের দেখে তার মনে উদ্দীপনা কাজ করতো। আর ভাবতো সময় একদিন আসবে আমি আবার পড়াশোনা করবো। স্কুলে গিয়ে ক্লাস করব। কিন্তু দেখতে দেখতে ছয়টি বছর পার হয়ে যায়। সেভাবে আর পড়ালেখার প্রতি মনযোগ দেয়া হয়ে ওঠেনি।
এখন তার বয়স ৩৩ এর প্রায় শেষের দিকে। পরিবারে এখন তার স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়ে এবং তার বাবা মা রয়েছে। খিজির বর্তমানে ঢাকা বিশ্বিদ্যালয়ের হাজী মুহাম্মদ মহসীন হলের দোকানের কর্মচারী হিসেবে কাজ করেন।
২০১৭ সালে তিনি মহসীন হলের দোকানে কাজ করা অবস্থায় বিভিন্ন ছাত্রদের পরামর্শে বাংলাদেশ উন্মোক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস টেনে ভর্তি হন। কিন্তু কর্মব্যস্ততার কারণে সেখানেও ছিলেন অনিয়মিত। অবশেষে ২০২১ সালে এসে তিনি এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে সক্ষম হন।
এতো বছর পরে পরীক্ষা দিতে গিয়ে এবং পড়ালেখা করার প্রধান মনোভাব সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি জানান, আমার বয়স মাত্র ৩৩ শেষ হতে চললো। তাই বলে কি আমি পাওয়া সুযোগ হাতছাড়া করে ফেলবো? বাংলাদেশে আমাদের মত পড়াশুনায় আগ্রহী ছাত্রদের জন্য উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষ সুযোগ সুবিধা রয়েছে। এরই প্রেক্ষিতে আমিও আমার লালিত স্বপ্ন বাস্তবায়নের জন্য লেগে গেলাম। তাছাড়া কোনোরকম এসএসসি পরীক্ষা পাস করে একটি যোগ্যতা লাভ করতে পারলে মানুষ আমাকে ভিন্নভাবে গ্রহণ করবে আর কোনোমতে একটি চাকরি পাওয়ারও গ্রহণযোগ্যতা পাবো। তাহলে আর আমাকে সারাজীবন দোকান করে কাটাতে হবে না। আমার পরীক্ষা যথাযথ ভালো হয়েছে। আশা করছি একটি ভালো ফল পাবো।
এই সম্পর্কে মহসীন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী আমিনুল ইসলাম বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠ। আমরা যেমন গ্রাম-গঞ্জ থেকে উচ্চশিক্ষার জন্য এখানে ছুটে আসি তেমনি অনেকে আসে জীবীকার তাগিদে। সেখানে অনেকে অন্নের অভাবে পড়ালেখা করতে পারে না। তারাও চায় কোনোমতে কাজের ফাঁকে নিজেকে সমাজের যোগ্য হিসেবে গড়ে তুলতে। খিজির ভাইকে অনেকদিন থেকে চিনি। তিনি প্রায়ই বলতো আমিও সার্টিফিকেট অর্জন করবো। দোকানদার থেকে একদিন চাকরিজীবী হবো। বুঝাই যাচ্ছে তার মধ্যে এক প্রকার উদ্দীপনা ছিলো। যা আজকে তাকে এই পর্যন্ত এনেছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।