লাইফস্টাইল ডেস্ক : অনেক সময় দেখা যায়, ছেলেমেয়েদের সঙ্গে বাবা–মায়েরা সুন্দরভাবে কথোপকথন শুরু করলেও সেটা ভুল পথে এগোতে থাকে।একটা বাচ্চার পক্ষে সেই কথোপকথনের সময় যুক্তি খাড়া করা সম্ভব হয় না। আর এতে সে নিজেকে আরও গুটিয়ে নেয়। ছোটখাটো যুক্তিতর্ক বিশাল কথা–কাটাকাটি ও মনোমালিন্যে পরিণত হয়। আসলে বুঝতে হবে প্রকৃত সমস্যাটি কোথায়।
বিভিন্ন প্যারেন্টিং বিশেষজ্ঞদের গবেষণা অভিজ্ঞতা থেকে প্রকাশিত বেশ কয়েকটি রিভিউ রিপোর্ট থেকে দেখা যাচ্ছে, কিছু কথা যতই মঙ্গলের জন্য বলা হোক, ঠিক এভাবে বললে আমাদের সন্তানদের ওপরে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। তাদের ভালো রাখতে হলে আমাদেরকে অবশ্যই জানতে হবে এই বহুল প্রচলিত কথাগুলো কী কী।
১. এখন যদি কঠোর পরিশ্রম না করো, তুমি আজীবন পস্তাবে
বাচ্চাদের মোটিভেশন বাড়ানোর জন্য ভয়কে মনে গেঁথে দেওয়া কিংবা চাপ সৃষ্টি করা কখনোই কার্যকরী হতে পারে না। বরং এতে শিশুরা মূল লক্ষ্য থেকে সরে আসে। তারা এ নিয়ে স্ট্রেস অনুভব করে যে ভালো করতেই হবে। এর বদলে বয়স অনুযায়ী তাদের ছোট ছোট স্বল্পমেয়াদি লক্ষ্য স্থির করে দেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। শিশুরা পূর্ণবয়স্কদের মতো করে ভাবতে পারে না,আর এ জন্যই তারা শিশু।
এর বদলে যা বলা যায়
তাদেরকে উৎসাহিত করুন এই বলে যে, ‘তুমি এবার হয়তো এই কাজটি খুব ভালো করে করতে পারোনি। কিন্তু এরপর নিশ্চয়ই ভালো করতে পারবে। কারণ, এখনই অনেকটা করে ফেলেছ তুমি।’ তাদেরকে ইতিবাচকভাবে ভাবতে সাহায্য করুন। বলতে পারেন, ‘আমি জানি এই কাজটা করা কঠিন। কিন্তু তুমি যদি প্র্যাকটিস করতে থাকো, তাহলে ভবিষ্যতে তুমি এই চ্যালেঞ্জ ভালোভাবে মোকাবিলা করতে পারবে।’
২. তোমার সবকিছু দেখার দায়িত্ব আমার
যখন বাচ্চারা বড় হয়ে যায় এবং টিনএজ পর্যায়ে চলে আসে, তখন আমরা যতই তাদেরকে চোখে চোখে রাখি না কেন, অনেক সময় তা সম্ভব হয়ে ওঠে না।আমরা সারাক্ষণ তাদের সঙ্গে থাকতে পারি না কিংবা তারা কোথায় যাচ্ছে কী করছে, তা ট্র্যাক করতে পারি না। আর এমন সময় এরকমভাবে বললে আমাদের ছেলেমেয়েরা ভাবতে শুরু করে যে তাদের রক্ষা করা পিতামাতারই দায়িত্ব। তখন তারা অনেকটা খেয়ালখুশি মতো চলাফেরা করে। তারা ভাবে যে আমার বাবা–মা তো আছেনই আমাদেরকে রক্ষা করতে। তাই তাদের মধ্যে একধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীন ভাব দেখা যায়।
এর বদলে যা বলা যায়
ঠেকে না শিখলে সে শেখা দীর্ঘস্থায়ী হয় না। তাদেরকে নিজে থেকে নিজেদের ভুল বুঝতে দিন এবং এরপর তাদের সঙ্গে এ ব্যাপারে কথা বলুন যে কেন এই ব্যাপারটা ভুল ছিল, কিংবা কী করলে ভালো হতো। তবে যদি ছেলেমেয়েদের মধ্যে আশঙ্কাজনক বা ঝুঁকিপূর্ণ কোনো আচরণ দেখা যায়, তখন সুযোগ বুঝে দুজনে মিলে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করুন। বলতে পারেন, ‘আমার এই বিষয়ে কিছু দোনোমনা আর দুশ্চিন্তা কাজ করছে কিন্তু আমি এ–ও বুঝতে পারছি যে তোমার এই ব্যাপারে মতামত ভিন্ন। তুমি কি বিষয়টি আবার ভালোভাবে ভেবে দেখবে?’
৩. আমি তোমাকে শাস্তি দিচ্ছি, কারণ আমি মনে করি তোমার এই আচরণ গ্রহণযোগ্য নয়
সম্পর্কে শাস্তি দেওয়ার বাড়াবাড়ি থাকলে সেখানে সমস্যা তৈরি হতে বাধ্য। হয়তো আপনার মনে হতে পারে, এভাবে আপনি আপনার সন্তানকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছেন। কিন্তু গবেষণা বলে যে এটি আপনার সন্তানের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত করে। আর এটি হচ্ছে সবচেয়ে অকার্যকর হাতিয়ার, যদি আপনার সন্তানের কোনো আচরণ আপনি বদলাতে চান। কঠোর শাস্তি দিলে অনেক সময় ছেলেমেয়েদের অতিরিক্ত বাজে ব্যবহার কিংবা কান্নাকাটি, চিৎকার—এসব থেমে যায় সাময়িকভাবে। কিন্তু মা–বাবা যত হুমকি কিংবা ধমক দিতে থাকবেন, বাচ্চারা মিথ্যা বলা শুরু করবে সমস্যা এড়াতে কিংবা সেসব সমস্যা লুকিয়ে রাখবে, যা তাদের বাবা–মায়ের সঙ্গে শেয়ার করা উচিত ছিল।
এর বদলে কী বলা যায়
যখন আপনি শান্ত ও সুস্থিরভাবে তাদের সঙ্গে পুরো বিষয় নিয়ে আলোচনা করতে চাইবেন, তখন তারা নিজে থেকে আপনার কাছে ছুটে আসবে। তাদের সঙ্গে চিৎকার না করে কথা বলুন। বলতে পারেন, তোমার জানা দরকার, যে ঘটনাটি ঘটেছে, সেটা আমি মোটেও পছন্দ করিনি এবং আমি সত্যি বুঝতে চাই তোমার এ রকম করার কারণটা কী।
৪. তুমি তো সারা দিন মোবাইল ফোন নিয়েই থাকো
‘তুমি তোমার মোবাইল ফোনে অনেক সময় নষ্ট করো’—এই বক্তব্যের মূল কথাটি সত্য। কিন্তু মোটা দাগে সর্বক্ষণ এ কথা বলা মানে ছেলেমেয়েরা তাদের দুনিয়া যেভাবে দেখে, সে সম্পর্কে অসম্মানজনক কথা বলা। আর এতেই তাদের সঙ্গে দূরত্ব আরও বেড়ে যায় আমাদের। সোশ্যাল মিডিয়া আর গেমিং এ সময়ের বাস্তবতা। আবার আমরা এটাও চাই যে বাচ্চাদের প্রযুক্তি ও সাম্প্রতিক দুনিয়া নিয়ে সম্যক ধারণা থাকুক। সব মিলে সন্তানেরা তখন ভাবে যে মা–বাবা আমাকে বোঝে না, আমি কী চাই বা কী পছন্দ করি—এ নিয়ে মা–বাবার কোনো মাথাব্যথা নেই।
এর বদলে যা বলা যায়
আপনার সন্তানের ভালো লাগার বিষয়ে আপনার উৎসাহ থাকতে হবে। গল্পের ছলে তারা কী গেম খেলছে জিজ্ঞেস করুন, কাদেরকে ফলো করছে, কী দেখছে কিংবা কী পড়ছে—এমন সব গঠনমূলক আলোচনা করুন। তাদেরকে যথেষ্ট সময় দিন, যাতে তারা তাদের ফোন থেকে দূরে থাকে। একসঙ্গে হাঁটতে যান, জিম করুন, ঘুরতে যান বা রান্না করুন। সচেতনভাবে তাদের প্রিয় গেম নিয়ে কথা বললে বা সোশ্যাল মিডিয়ার কোনো মিম নিয়ে প্রাণ খুলে হাসলে সে আপনাকে নিজেদের একজন ভাববে। এরপর ধীরে ধীরে তার স্ক্রিন টাইম কমানোর চেষ্টা করুন।
লেখক: আর্লি চাইল্ডহুড ডেভেলপমেন্ট ও এফেক্টিভ টিচিং-এ বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।