জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার করা জামিন আবেদনের শুনানি আগামীকাল বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর)। কালই জানা যাবে তিনি জামিন পাচ্ছেন কিনা। সম্প্রতি এই দিনকে ঘিরে নানান রকম বক্তব্য দিয়েছে বিএনপি নেতারা। তাদের মন্তব্য ঘিরে তৈরি হয়েছে উত্তেজনা।
জানা গেছে মামলায় রায় দেখে রাজপথের কর্মসূচি ঘোষণা করবে বিএনপি। রায় যদি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার পক্ষে যায় তাহলে দলটি কোন কর্মসূচি দেবে না। তবে খালেদা জিয়ার জামিনের বিষয়ে নেতিবাচক সিদ্ধান্ত এলে তার প্রতিবাদে দেশব্যাপী বিক্ষোভসহ ধারাবাহিক কর্মসূচি ঘোষণা করবে দলটি। এজন্য এদিন আদালতের ভিতরে ও বাইরে শোডাউন করার পরিকল্পনাসহ দল সমর্থিত সব আইনজীবীকে হাইকোর্টে যাওয়ার নির্দেশও দিয়েছে দলটি। বিএনপির একটি নির্ভরযোগ্য সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, আমরা যদি দেখি ৫ ডিসেম্বর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া মুক্ত হন নাই। তাহলে বুঝতে হবে শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী। তার সরাসরি হস্তক্ষেপে বেগম জিয়া মুক্ত নাও হতে পারেন। আর সেটা হলে, আমি বলতে চাই- ৫ ডিসেম্বরের পরে এদেশে শুধু এক দফার আন্দোলন হবে। তা হবে, শেখ হাসিনা স্বৈরাচার ও ফ্যাসিস্ট সরকার পতনের আন্দোলন।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, দেখি না বৃহস্পতিবার কী হয়? আমরা কতদিন অপেক্ষা করবো? …….. এজন্য আইনী প্রক্রিয়া দেখে কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। আর যখন গণতন্ত্রের জায়গা বন্ধ হয়ে যায় তখন রাজপথেই তার সমাধান করতে হবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির এক শীর্ষ নেতা এই প্রতিবেদককে বলেন, ঢাকার পাশাপাশি বাইরে থেকেও বিএনপিপন্থি আইনজীবীদেরকে বৃহস্পতিবার আদালতে উপস্থিত হতে বলা হয়েছে। আর দলের যেসব আইনজীবী নেতা নিয়মিত প্রাকটিস করেন না তাদেরকেও আইনজীবীর পোশাক পরে আদালতে যাওয়ার নিদের্শ দিয়েছেন বিএনপির হাই কমান্ড।
এদিকে খালেদা জিয়ার মুক্তির ইস্যূটি বিএনপি কূটনৈতিক পর্যায়েও জোর দিয়ে তুলে ধরেছে। দলটি এক্ষেত্রে প্রভাবশালী দেশগুলোর একটি কার্যকর ভূমিকাও আশা করছে।
কূটনৈতিক পর্যায়ে যোগাযোগ রাখেন বিএনপির এমন এক নেতা জানান, শর্তযুক্ত হলেও সুচিকিৎসার জন্য বেগম জিয়ার মুক্তি চান তারা। এই মনোভাব তারা সরকারের উচ্চ পর্যায়েও জানিয়েছেন।
গত ১৮ নভেম্বর বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার সবশেষ স্বাস্থ্যগত অবস্থা জানাতে মেডিকেল বোর্ড গঠন করে তার রিপোর্ট আদালতে দাখিল করতে নির্দেশ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। বৃহস্পতিবারের মধ্যে এই রিপোর্ট দাখিল করতে বলা হয়েছে। এদিন আদেশের জন্য দিন ধার্যও করেছেন আদালত।
গত বছরের ২৯ অক্টোবর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলার রায় ঘোষণা করেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত-৫-এর বিচারক। এই রায়ে খালেদা জিয়াকে সাত বছরের কারাদণ্ড ও ১০ লাখ টাকা অর্থদণ্ড করা হয়।
বিচারিক আদালতের দেওয়া সাজা বাতিল ও খালাস চেয়ে গত বছরের ১৮ নভেম্বর হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় আপিল করেন খালেদা জিয়া। এর গ্রহণযোগ্যতার ওপর শুনানি নিয়ে গত ৩০ এপ্রিল হাইকোর্ট খালেদা জিয়ার আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন। একই সঙ্গে ওই মামলায় খালেদা জিয়াকে বিচারিক আদালতে দেওয়া জরিমানার আদেশ স্থগিত করেন হাইকোর্ট। এছাড়া বিচারিক আদালতে থাকা মামলাটির নথি তলব করেন হাইকোর্ট। দুই মাসের মধ্যে নথি পাঠাতে বলা হয়।
বিচারিক আদালত থেকে মামলার নথি গত ২০ জুন হাইকোর্টে পাঠানো হয়। এরপর খালেদা জিয়ার জামিন আবেদন আদালতে তুলে ধরেন তার আইনজীবীরা। শুনানি নিয়ে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ও বিচারপতি এস এম কুদ্দুস জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ গত ৩১ জুলাই জামিন আবেদন খারিজ করেন। পরে খালেদা জিয়ার জামিন চেয়ে তার আইনজীবীরা আপিল বিভাগে যান।
অপরদিকে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে গত বছরের ৮ ফেব্রুয়ারি পাঁচ বছর কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত। প্রসঙ্গত, দুর্নীতির পৃথক দুটি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত খালেদা জিয়া চিকিৎসার জন্য বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে রয়েছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।