জুমবাংলা ডেস্ক : শত কষ্টের মাঝেও মা তার সন্তানকে আগলে রাখেন পরম মমতায়। ঝড়-বৃষ্টি, রোগ-ব্যাধি যা-ই হোক না কোনো, সন্তানের পাশে ছায়ার মতো থাকেন মা। তেমনিই এক মা ৯০ বছর বয়সী জোছনা রানী দে। বয়সের কাছে শরীর হার মানলেও ছেলের প্রতি একটু মমতা কমেনি মায়ের।
খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বারান্দার মেঝেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন ৫৮ বছর বয়সের চঞ্চল কুমার দে। তার মাথার কাছে বসে সন্তানের সেবা করছেন মা জোছনা রানী। এর আগে কোনো দিন তিনি এই হাসপাতালে আসেননি। এই পরিবেশটি তার খুব অচেনা। নিজেই ভালোভাবে চলাফেরা করতে পারেন না। তারপরও চঞ্চল কুমারের এই সময়ে তিনিই একমাত্র ভরসা।
গত ১৮ জুলাই রাতে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে দেখা হয় এই মা-ছেলের সঙ্গে। কয়েকজন তরুণ তাদের খোঁজ-খবর নিচ্ছেন, ওষুধপত্র এগিয়ে দিচ্ছেন। কাছে গিয়ে জানা গেলো তারা মূলত তাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি হতে সহযোগিতা করেছেন। গত ১৪ জুলাই বাড়িতে স্ট্রোক করেন চঞ্চল কুমার। তবে তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসার মতো কেউ না থাকায় ৪ দিনপর স্থানীয়দের মাধ্যমে খবর পান খুলনা ব্লাড ব্যাংকের এই তরুণরা। এরপর তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন।
চঞ্চল কুমার জানান, নগরীর সোনাডাঙ্গা এলাকার একটি বাড়ির প্রবেশদ্বার দেখাশোনা করেন তিনি ও তার মা। আর সেই বাড়ির প্রবেশদ্বারের পাশের একটি রুমে তারা থাকেন। ২০১৮ সালে প্রথম স্ট্রোক করে প্যারালাইসিস হয়ে, সেই থেকে বিছানায় তিনি। তার মা-ই তার সেবাযত্ন করেন। নগরীর কয়লাঘাট এলাকায় তার শৈশব কেটেছে। চার ভাই, এক বোন ও বাবা-মা নিয়ে তাদের পরিবার ছিল। ভাইদের মধ্যে তিনি ছোট।
তিনি আরও বলেন, ১৯৮৭ সালে খুলনা জেলা স্কুলে দশম শ্রেণিতে পড়া অবস্থায় ছাত্রজীবন থেকে ঝরে পরেন। বাবার মৃত্যুর পর মাকে নিয়ে তিনি আলাদা থাকেন। চাকরি করতেন একটি ক্যাবল কোম্পানিতে। চাকরিরত অবস্থায় বয়স যখন ২৫ থেকে ৩০, তখন ফেনীতে ডাকাতের হামলার শিকার হন। এতে তার শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়েন। এরপর অন্য একটি গ্লাস কোম্পানির মার্কেটিং বিভাগে চাকরি করতেন। মাকে নিয়ে চলতেন কোনো রকম। সংসার চালাতে হিমশিম আর অসুস্থতার কারণে আর বিয়ে করেননি। আর চার ভাইয়ের মধ্যে বড় ভাই ও সেজো ভাই মারা গেছেন। মেজো ভাই বাগেরহাট থাকেন। বোন পরিবার নিয়ে ভারতে থাকেন।
চঞ্চল কুমারের মা জোছনা রানী দে বলেন, ৬ বছর ধরে চঞ্চল বিছানায়। খাওয়া-দাওয়া থেকে শুরু করে প্রস্রাব-পায়খানা তার পরিষ্কার করতে হয়। সন্তান যতই বড় হোক মায়ের কাছে সে সবসময় ছোট খোকা। উপার্জন করার মতো কেউ না থাকে আশপাশ থেকে যে যা দেয় তা দিয়েই কোনো রকম দিন চলে যায়।
খুলনা ব্লাড ব্যাংকের সেচ্ছাসেবী তুহিন হোসেন বলেন, সোনাডাঙ্গা এলাকা থেকে আমরা একটি ফোন পাই যে, একটি বাড়িতে প্রায় ৪ থেকে ৫ দিন ধরে একজন অসুস্থ ব্যক্তি পড়ে আছেন। বাসায় শুধু তার বৃদ্ধ মা রয়েছেন। তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসার মতো কেউ নেই। আমরা এমন সংবাদের ভিত্তিতে খুলনা ব্লাড ব্যাংকের অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে তাকে হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করাই। তাদের সকল ওষুধ কেনা থেকে শুরু করে সকল ধরনের সহযোগিতা করি। বিষয়টি আমাদের কাছে অনেক অবাক লেগেছে এই বয়সেও তার মা তার সেবাযত্ন করছেন। যদিও তিনি নিজেই ঠিক মতো চলাফেরা করতে পারে না।
এদিকে এক সপ্তাহ হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার পর এখন কিছুটা সুস্থ চঞ্চল কুমার। ফিরেছেন আশ্রয়স্থলে। তাদের জন্য গত ২৭ আগস্ট চাল, ডাল, তেলসহ প্রয়োজনীয় নিত্যপণ্য নিয়ে এসেছেন খুলনা ব্লাড ব্যাংকের সেই তরুণরা।
সংগঠনটির সভাপতি সালেহ উদ্দিন বলেন, এই মা-ছেলের খবর পাওয়ার পর থেকে আমরা তাদের পাশে আছি। হাসপাতাল, ওষুধপত্র থেকে শুরু করে নিত্য পণ্যসহ যত ধরনের সহযোগিতা করা সম্ভব আমরা করছি। তবে আমাদের একার পক্ষে কষ্টকর। এই পরিবারের পাশে সমাজের বৃত্তবানদের এগিয়ে আসা উচিত।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।