গত বছর মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সিতে একটি নতুন সৌরজগতের সন্ধান পেয়েছিলো জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা। ওই সৌরজগতের নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে ঘুরছে ৬টি গ্রহ। এই গ্রহগুলো ঘুরছে একটি নির্দিষ্ট ছন্দে, অনেকটা গাণিতিকভাবে। যে জ্যামিতিক ছন্দে গ্রহগুলো নক্ষত্রের চারপাশে ঘুরছে, বিজ্ঞানীরা তাকে ‘অরবিটাল রেজোন্যান্স’ নামে আখ্যায়িত করেছেন। জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মতে, এ এক বিরল আবিষ্কার। ২৯ নভেম্বর, বুধবার বিশ্বখ্যাত জার্নাল নেচার-এ নতুন এই সৌরজগত নিয়ে প্রবন্ধটি প্রকাশিত হয়েছে।
পৃথিবী থেকে ১০০ আলোকবর্ষ দূরে অবস্থিত এ সৌরজগতের কেতাবি নাম ‘এইচডি ১১০০৬৭’। মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসার ট্রানজিটিং এক্সোপ্ল্যানেট সার্ভে স্যাটেলাইট (টেস) ও ইউরোপীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসার ক্যারেক্টারাইজিং এক্সোপ্ল্যানেট স্যাটেলাইট (সিএইচওপিএস)-এর তথ্য যুগ্মভাবে ব্যবহার করে সন্ধান পাওয়া গেছে এই সৌরজগতের।
জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের মতে, এই সৌরজগতে আরও গ্রহ থাকতে পারে। এখন পর্যন্ত ৬টির সন্ধান পাওয়া গেছে। গ্রহগুলো পৃথিবী থেকে প্রায় দুই থেকে তিন গুণ বড়। ঘনত্বও অনেক বেশি। আমাদের সৌরজগতের গ্রহদানব বৃহস্পতির কাছাকাছি ঘনত্ব এসব গ্রহের। এগুলো নিজ সূর্যের চারপাশে ৯ থেকে ৫৪ দিনের মধ্যে একবার ঘুরে আসে। তবে গ্রহগুলো ঘোরে নির্দিষ্ট জ্যামিতিক ছন্দ মেনে। এ ধরনের ছন্দ খুব বেশি সৌরজগতে দেখা যায়নি।
এ ক্ষেত্রে নক্ষত্রের সবচেয়ে কাছের গ্রহ, অর্থাৎ প্রথম গ্রহটি তিনবার কক্ষপথে প্রদক্ষিণ করলে দ্বিতীয়টি করে দুইবার। একে ৩/২ রেজোন্যান্স বলা হয়। নক্ষত্রের নিকটস্থ চারটি গ্রহের জন্য এই ছন্দ দেখা যায়। আবার তৃতীয় গ্রহটি ছয়বার প্রদক্ষিণ করলে চতুর্থটি ঘোরে মাত্র একবার। এদিকে পঞ্চম গ্রহটি চারবার প্রদক্ষিণ করলে ষষ্ঠ গ্রহটি ঘোরে তিনবার, যাকে ৪/৩ রেজোন্যান্স বলছেন বিজ্ঞানীরা। এভাবে পর্যায়ক্রমে প্রক্রিয়াটি চলতে থাকে।
গ্রহগুলো নিজ সূর্যের খুব কাছাকাছি থেকে আবর্তন করে। তাই সর্বোচ্চ ৫৪ দিনে গ্রহগুলোর বছর পূর্ণ হয়ে যায়। এই দূরত্ব সূর্য থেকে শুক্রের দূরত্বের চেয়েও কম। এ জন্য গ্রহগুলোর তাপমাত্রা অনেক বেশি থাকে। তাই সেখানে প্রাণ থাকার সম্ভবনা খুব কম।
বিজ্ঞানীদের ধারণা, গ্রহগুলো গ্যাসীয় হলেও কেন্দ্র পাথুরে। হয়তো এর বায়ুমণ্ডল হাইড্রোজেন দিয়ে আবৃত। তবে আসলেই বায়ুমণ্ডলে কোন কোন গ্যাস রয়েছে বা এর কেন্দ্রে আসলেই ধাতু আছে কি না, তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য আরও পর্যবেক্ষণ দরকার।
বিজ্ঞানীরা মনে করেন, মহাবিশ্বের সব সৌরজগতের সূচনা এভাবেই হয়েছিল। এমনকি আমাদের সৌরজগতও। কিন্তু পরে আর সেভাবে থাকেনি। কালের আবর্তে পরিবর্তিত হতে হতে বর্তমান অবস্থায় পৌঁছেছে।
এ ব্যাপারে শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের জ্যোতির্বিজ্ঞানী রাফায়েল লুক বলেন, ‘হয়তো গোটা মহাবিশ্বে মাত্র এক শতাংশ সৌরজগতে এরকম রেজোন্যান্স রয়ে গেছে। এগুলোর সন্ধান পাওয়া গেলে যেকোনো সৌরজগত বা গ্রহব্যবস্থার সূচনাকালের অবস্থা জানা যাবে। কারণ, শুধু এই সৌরজগতগুলোই এখনো অপরিবর্তিত রয়ে গেছে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।