আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের সময় পরিবার থেকে আলাদা হয়ে ভারত রয়ে যাওয়া শিখ ভাই সাক্ষাৎ পেয়েছেন পাকিস্তানে বসবাসকারী তার মুসলিম বোনের। পাকিস্তানে অবস্থিত শিখ সম্প্রদায়ের উপাসনাস্থল গুরুদুয়ারা দরবার সাহিব করতারপুরে এসে বোনের সাক্ষাৎ পান তিনি।
শনিবার (১০ সেপ্টেম্বর) ভারতীয় গণমাধ্যম সূত্রে পাকিস্তানি সংবাদমাধ্যম জিও টিভি বিষয়টি নিশ্চিত করে।
সূত্র জানায়, শিখ ওই ভাইয়ের নাম ওমরজিত সিং। দেশভাগের সময় তার মা-বাবা পাকিস্তানে চলে আসেন। কিন্তু অনিবার্য কারণে ওমরজিত সিং ও তার আরেক বোন বাবা-মায়ের সাথে পাকিস্তানে আসতে পারেননি। অবশেষে ৭৫ বছর পর করতাপরপুরে এসে পাকিস্তানে বসবাসকারী আপন বোনের সাথে সাক্ষাৎ হলো তার।
ওমরজিত সিং বোনের সাথে সাক্ষাতের জন্য আটারি ওয়াঘা সীমান্ত দিয়ে পাকিস্তানে প্রবেশ করেন। ভাইকে পেয়ে আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন তার ৬৫ বছর বয়সী মুসলিম বোন কুলসুম আকতার। বোনের চোখে তখন আনন্দাশ্রু দেখা যায়।
ফয়সালাবাদের বাসিন্দা কুলসুম আকতার এ প্রসঙ্গে স্থানীয় মিডিয়াকে জানান, তার মা-বাবা জলান্ধর থেকে ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান চলে আসেন। তখন তার এক ভাই ও এক বোন সেখানে রয়ে যায়।
তিনি আরো জানন, তার বাবা-মা পাকিস্তানে স্থায়ী হওয়ার পর তার জন্ম। কিন্তু তিনি তার মায়ের মুখে ভারতে রয়ে যাওয়া তার দুই ভাই-বোনের কথা অনেক বার শুনেছেন। যখন তার মা দুই সন্তানের স্মৃতিচারণ করতেন, তখন কাঁদতে থাকতেন।
তবে কুলসুম আকতার কখনো ভাবেননি যে তিনি তার ভাই ও বোনের সাক্ষাৎ পাবেন। তবে তার বাবার বন্ধু সরদার দারা সিং কয়েক বছর আগে ভারত থেকে পাকিস্তানে আসেন এবং কুলসুম আকতারের সাথে দারা সিংয়ের সাক্ষাৎ হয়।
কুলসুম আকতার বলেন, ‘সাক্ষাতে আমি বাবার বন্ধু দারা সিংকে ভারতে থাকা আমার ভাই-বোনের কথা জানালাম। পরে তিনি ভারত ফিরে গিয়ে আমার ভাই-বোনের সন্ধান করলেন এবং আমাদের সুখবর দিলেন যে, ভাই এখনো জীবিত আছেন। কিন্তু বোনটি মারা গেছেন। আমার ভাই-বোনকে এক শিখ দম্পতি লালন-পালন করতেন, ফলে ভাইয়ের নাম হয়ে যায় ওমর জিত সিং।’
সন্ধান পাওয়ার পরই কুলসুম আকতার ভাইয়ের সাথে ওয়াটসাপে যোগাযোগ করেন। এরপর তারা সাক্ষাতের জন্য উদগ্রীব হয়ে পড়েন।
ভাই ওমর জিত সিং করতাপুর এসেছেন। বার্ধক্যজনিত অসুস্থতা ও তীব্র কোমর ব্যথা সত্ত্বেও ফয়সালাবাদ থেকে করতাপুর আসেন কুলসুম আকতার। এরপরই দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর ভাই-বোনের কাঙ্ক্ষিত সাক্ষাৎ লাভ হয়।
এ প্রসঙ্গে ভাই ওমর জিত জানান, যখন তিনি জানেন যে তার জন্মদাতা বাবা-মা পাকিস্তানে থাকেন এবং তারা মুসলমান, তখন তিনি খুব পেরেশান হন ও দুশ্চিন্তায় পড়ে যান।
তিনি বলেন, ‘তবে এটি জেনে খুব আনন্দ অনুভব করি যে আমার আরো তিন ভাই এখনো জীবিত আছেন। অবশ্য ভাইদের একজন জার্মান থাকতেন, তিনি মারা গেছেন।’
ওমর জিত সিংয়ের শেষ ইচ্ছা- জীবনের অন্তিম মুহূর্তটা পরিবারের সাথে কাটাবেন। এজন্য হয়ত পাকিস্তানে চলে আসবেন তিনি।
সূত্র : ডেইলি জং
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।