জুমবাংলা ডেস্ক : বগুড়ার শিবগঞ্জে সিনিয়র এএসপিসহ তিন পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ৮৮ বোতল ফেনসিডিল বিক্রি ও তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়ে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে।
অভিযানের আগে ও পরে পুলিশ কর্মকর্তাদের জিডি এবং এজাহারে উদ্ধার করা ফেনসিডিলের সংখ্যা ঠিক থাকলেও কীভাবে এত সংখ্যক ফেনসিডিল বিক্রি করা হয়েছে- তার সদুত্তর কেউ দিতে পারছেন না।
যে ডায়েরির সূত্র ধরে কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে, তাতে লেখাগুলো একাধিকজনের। আবার অভিযানে এএসপি ছাড়াও উপস্থিত শিবগঞ্জ থানার ওসি এবং অন্য কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। ওসিকে তদন্ত কমিটিতে রাখা হয়েছে। এসব নিয়ে নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে।
শাস্তি হিসেবে শিবগঞ্জ সার্কেল থেকে বরিশাল রেঞ্জে বদলি হওয়া সিনিয়র এএসপি আরিফুল ইসলাম সিদ্দিকী জানান, তার নেতৃত্বে অভিযানে ১৬০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার হয়েছে। জিডি ও এজাহারে উপস্থিত কর্মকর্তাদের স্বাক্ষরও রয়েছে। আর যে ডায়েরির সূত্র ধরে তাকে শাস্তি দেওয়া হয়েছে, তাতে সব লেখা তার নয়; কোন ষড়যন্ত্রকারী অপর অংশ লিখেছে। এছাড়া ঘটনার ১৭ দিন পর বিক্রির অভিযোগ মূলত পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন ও দায়িত্বশীল কর্মকর্তাদের বিব্রত করতে কোনো কুচক্রী মহলের ষড়যন্ত্র। গত শিবগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে পরাজয়ের পর কোনো কোনো প্রার্থী তাকে দায়ী করে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করেন। আর এতে সাবেক এক পুলিশ কর্মকর্তা ইন্ধন দেন।
তিনি আশা করেন, কাগজপত্র পর্যালোচনা ও সঠিক তদন্ত হলে অভিযোগ থেকে রেহাই পাবেন।
পুলিশ সুপারের নির্দেশে গঠিত প্রাথমিক তদন্ত কমিটির প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) আলী হায়দার জানান, কোনো মাধ্যমে ফেনসিডিল বিক্রির অভিযোগ পাওয়ার পর সংশ্লিষ্টদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছিল। কিন্তু তারা সদুত্তর দিতে পারেননি। তাই তাদের বদলি ও প্রত্যাহার করা হয়েছে। পরবর্তীতে পুলিশ সদর দফতর থেকে গঠিত তদন্ত কমিটি পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করবে। এতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে অপরাধ না পেলে তাদের অবশ্যই রেহাই দেয়া হবে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ৩ এপ্রিল রাতে বগুড়ার শিবগঞ্জ সার্কেলের সিনিয়র এএসপি আরিফুল ইসলাম সিদ্দিকীর নেতৃত্বে মোকামতলা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের পাশে ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে চেকপোস্ট বসানো হয়। এ অভিযানের আগে ও পরে রীতি অনুসারে জিডিতে মোকামতলা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর শাহীনুজ্জামান উল্লেখ করেন, সিনিয়র এএসপি আরিফুল ইসলাম সিদ্দিকী ও শিবগঞ্জ থানার ওসি সিরাজুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের এসআই সুজাউদ্দৌলা সরকার, এএসআই মিজানুর রহমান ও অন্যরা অভিযানে অংশ নেন।
তল্লাশির সময় ঢাকাগামী খালেক পরিবহন থেকে নাজিম উদ্দিন নামে এক ব্যক্তিকে ৫০ বোতল ও পিংকি পরিবহন থেকে সাইফুল ইসলাম নামে একজনকে ১১০ বোতল ফেনসিডিলসহ গ্রেফতার করা হয়। এ ব্যাপারে এসআই সুজাউদ্দৌলা সরকার পরদিন শিবগঞ্জ থানায় দুটি মামলা করেন। তাতেও দুটি অভিযানে মোট ১৬০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধারের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
জব্দ তালিকা প্রস্তুত করেন এসআই সুজাউদ্দৌলা এবং তাতে স্বাক্ষর করে শিবগঞ্জ থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম। সাক্ষী ছিলেন এএসআই মিজানুর রহমান প্রমুখ। আবার ইন্সপেক্টর শাহীনুজ্জামানের ডায়েরির লেখা অনুসারে কর্মকর্তা বিশেষ করে এএসপি সিদ্দিকীকে বদলি করা হয়েছে। অথচ ডায়েরির ওই পাতার সব লেখা তার (এএসপি) নয়।
এদিকে ঘটনার ১৭ দিন পর গত ২০ এপ্রিল অভিযোগ উঠে পিংকি পরিবহন থেকে ১৯৮ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়েছিল। কিন্তু এজাহার ও জিডিতে ১১০ বোতল উদ্ধার দেখানো হয়েছে। পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভুঞা অভিযোগের সত্যতা পেয়ে পরদিন মোকামতলা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের ইনচার্জ ইন্সপেক্টর শাহীনুজ্জামান সরকারকে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইন্সের ওয়্যার হেডকোয়ার্টারে ও ফেনসিডিল উদ্ধার মামলার বাদী এসআই সুজাউদ্দৌলা সরকারকে পুলিশ লাইন্সে সংযুক্ত করেন।
এছাড়া দায়িত্বে অবহেলায় পুলিশ সদর দফতর থেকে শিবগঞ্জ সার্কেল সিনিয়র এএসপি আরিফুল ইসলাম সিদ্দিকীকে বরিশাল রেঞ্জে বদলি করেন। তবে জিডি ও এজাহার অনুসারে অভিযানে ওসি সিরাজুল ইসলাম ও এএসআই মিজানুর রহমান মিজান উপস্থিত থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
এ প্রসঙ্গে শিবগঞ্জ থানার ওসি সিরাজুল ইসলাম জানান, তিনি সেদিনের অভিযানে ছিলেন না। গদ হিসেবে তার নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
একই কথা বলেছেন, এএসআই মিজান। তিনি জানান, তিনি ১৬০ বোতল দেখেছেন। বাড়তি ৮৮ বোতলের তথ্য ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা কীভাবে পেয়েছেন তা তিনি জানেন না।
ইন্সপেক্টর শাহীনুজ্জামান সরকার ও এসআই সুজাউদ্দৌলা সরকার তদন্ত চলাকালে এ প্রসঙ্গে কোনো কথা বলতে রাজি হননি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।