জুমবাংলা ডেস্ক : প্রথমবারের মতো সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষকদের পদোন্নতির সুযোগ এবং পাঠদান কার্যক্রম সুচারুভাবে সম্পাদনে সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেবে সরকার। সারা দেশে ৬৫ হাজার ৫৬৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মধ্যে ৯ হাজার ৫৭২টি বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।
নিয়োগ হচ্ছে ৯,৫৭২ প্রাইমারি স্কুলেপ্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, ২৫০ জনের বেশি শিক্ষার্থী আছে—এমন বিদ্যালয় একজন করে সহকারী প্রধান শিক্ষক পাবে। এসব পদে পদোন্নতি পাবেন শুধু সহকারী শিক্ষকরা।
সরাসরি কোনো নিয়োগ হবে না। সৃজনকৃত পদগুলো পদোন্নতিযোগ্য হওয়ায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় শিক্ষক নিয়োগ বিধিমালায় এটি অন্তর্ভুক্ত করার পর সহকারী শিক্ষকদের পদোন্নতি দেওয়া হবে। সহকারী প্রধান শিক্ষকদের মর্যাদা হবে প্রধান শিক্ষকদের নিচে এবং সহকারী শিক্ষকদের ওপরে।
এ ব্যাপারে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা সচিব ফরিদ আহম্মদ বলেন, ‘৯ হাজার ৫৭২টি সহকারী প্রধান শিক্ষকের পদ সৃষ্টিতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় গত বৃহস্পতিবার সম্মতি দিয়েছে।
এখন অর্থ বিভাগ, প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটি ও প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের অনুমোদন পেলে আমরা প্রজ্ঞাপন জারি করব।’ তিনি বলেন, ‘সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগ হলে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার মান আরো বাড়বে। আশা করি, পর্যায়ক্রমে সব স্কুলে সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেবে সরকার।’
আর্থিক চাপ বাড়বে
প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ‘চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি (পিইডিপি-৪)’ শীর্ষক প্রকল্পের মাধ্যমে এসব সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে।
এর আগে ২০১৯ সালে সহকারী শিক্ষকের (প্রাক-প্রাথমিক) ২৬ হাজার ৩৬৬টি, ২০২২ সালে সহকারী শিক্ষক (সংগীত) দুই হাজার ৫৮৩টি এবং সহকারী শিক্ষক (শারীরিক শিক্ষা) দুই হাজার ৫৮৩টি পদ সৃষ্টি করা হয়। এই শিক্ষকদের বেতনের জন্য পিইডিপি-৪ চলাকালে এই প্রকল্প থেকে অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হচ্ছে। কর্মসূচি শেষে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের রাজস্ব বাজেটের সংশ্লিষ্ট খাতের বরাদ্দ থেকে বেতন দিতে হবে। এতে এই কর্মসূচি শেষ হলে সরকারের ওপর আর্থিক চাপ বাড়বে। কারণ চলতি অর্থবছরের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) সব মিলিয়ে প্রকল্প আছে এক হাজার ২৫৮টি।
মোট দুই লাখ ৬৫ হাজার কোটি টাকা এসব প্রকল্পে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে পাঁচটি প্রকল্পে পুরো এডিপির ১৩ শতাংশের বেশি বা ৩৫ হাজার ৯৫৪ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। সর্বোচ্চ বরাদ্দ আছে চতুর্থ প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি। চলতি অর্থবছরে এই প্রকল্পের জন্য ১১ হাজার ৫৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। ২০১৮ সালে চতুর্থবারের মতো এই গুচ্ছ কর্মসূচিটি শুরু হয়। ২০২৫ সালের জুন মাসে প্রকল্প শেষ করতে আগামী এডিপিতে এই বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। সব মিলিয়ে এই প্রকল্পের আওতায় খরচ হবে ৩৮ হাজার ২৯১ কোটি টাকা।
জানা যায়, প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীন সারা দেশে ৬৫ হাজার ৫৬৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এসব স্কুলে শিক্ষকের পদসংখ্যা চার লাখ ২৭ হাজার ৯৭১। প্রতিটি বিদ্যালয়ে একজন প্রধান শিক্ষক এবং চার-পাঁচজন সহকারী শিক্ষক নিয়োজিত আছেন।
বর্তমানে ২৫১ থেকে ৩০০ জন শিক্ষার্থী আছে তিন হাজার ৯৮৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে, ৩০১ থেকে ৩৫০ জন শিক্ষার্থী আছে দুই হাজার ২৮০টি স্কুলে, ৩৫১ থেকে ৪০০ জন শিক্ষার্থী আছে এক হাজার ১১৮টি স্কুলে, ৪০১ থেকে ৪৫০ জন শিক্ষার্থী আছে ৭৩২টি স্কুলে, ৪৫১ থেকে এক হাজারের বেশি শিক্ষার্থী আছে এক হাজার ৪৫৯টি স্কুলে। এসব স্কুলে সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগ হবে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, একটি বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকসহ সহকারী শিক্ষকদের নানা কাজে সম্পৃক্ত থাকতে হয়। বিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ও একাডেমিক কার্যক্রমসহ সব বিষয় দেখভাল করতে হয় প্রধান শিক্ষককে। এ ছাড়া ভোটার তালিকা হালনাগাদকরণ, শিশু জরিপ, কৃষিশুমারি, আদমশুমারি ইত্যাদি কাজ সম্পাদন করতে হয়। এসব কাজ বিবেচনায় একজন সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগের প্রস্তাব দেওয়া হয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।