নীলফামারীর ডোমারে ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের জেরে করোনা মহামারিকালে ব্র্যাকের এক নারী কর্মীকে চাকরিচ্যুতির অভিযোগ করেছেন জেলা মহিলা পরিষদ। শনিবার (১৭ জুলাই) বিকাল ৩টার দিকে জেলা শহরের মিডিয়া হাউজে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে ওই অভিযোগ করেন।
জেলা মহিলা পরিষদের আয়োজনে ওই সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, জেলার ডোমার উপজেলার মিরজাগঞ্জ শাখায় ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রমে ব্যবস্থাপক পদে কর্মরত ছিলেন মৌসুমী দাস (৩৯)। সংস্থাটিতে টানা ১৫ বছর কর্মরত থেকে ওই শাখায় ব্যবস্থাপক পদে তিনি কাজ করেছেন পাঁচ বছর। দীর্ঘ সময় সুনামের সঙ্গে কাজ করলেও সম্প্রতি এক হাজার ৪০০ টাকা হিসাবের গরমিলের অজুহাতে চলতি বছর ২৪ জুন চাকরিচ্যুত করা হয় তাকে। বিষয়টি নিয়ে মহিলা পরিষদের নেতৃবৃন্দ সরেজমিনে মৌসুমী দাস এবং ব্র্যাকের ডোমার এরিয়া কার্যালয়ে কর্মরত একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলেন। তাতে বেরিয়ে আসে মৌসুমী দাসের সঙ্গে এলাকা ব্যবস্থাপক নাজমুল হকের ব্যক্তিগত দ্বন্দ্বের কথা।
তারা বলেন, এলাকা ব্যবস্থাপক নাজমুল হক নারীর উন্নয়নকে বিশ্বাস করেন না। তিনি মনে করেন নারীরা ঘরের শোভা এবং ভোগের পাত্র। পাশাপাশি দুশ্চরিত্রের হওয়ায় বিভিন্ন সময়ে অধীনস্ত নারী কর্মীরা তার কাছে হেনস্তার শিকার হচ্ছেন। সে হেনস্তা থেকে বাদ পড়েননি মৌসুমী দাস। তাকে বিভিন্ন সময়ে কুপ্রস্তাব দিয়েছিলেন তিনি। এতে সাড়া না পেয়ে মাত্র এক হাজার ৪০০ টাকার আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ এনে ওই টাকা জমা নিয়ে ক্ষমা প্রার্থনা চাওয়ার পরও চাকরিচ্যুত করা হয়েছে তাকে। একই সময়ে ওই কার্যালয়ে মৌসুমী দাসের সঙ্গে আরেক নারী কর্মীর নামেও দুই হাজার টাকার আর্থিক গরমিলের অভিযোগ আনা হলে তিনিও টাকা জমা করে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। অথচ একই অভিযোগে ওই নারী কর্মীর চাকরি বহাল থাকলেও চাকরিচ্যুত করা হয় মৌসুমী দাসকে।
ওই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জেলা মহিলা পরিষদের সভাপতি দৌলত জাহান ছবি, সহ-সভাপতি মহসেনা বেগম, আইন বিষয়ক সম্পাদক আফরোজ আরা রাণী ও ব্র্যাকের চাকরিচ্যুত কর্মী মৌসুমী দাস।
মৌসুমী দাস বলেন, ‘আমি সেখানে পাঁচ বছর ধরে কাজ করছি। বর্তমান এরিয়া ম্যানেজার নাজমুল হক এই কর্মস্থলে এসেছেন এক বছর নয় মাস আগে। তিনি সেখানে যোগদানের পর থেকেই নানা অজুহাতে আমাকে হেনস্তার মিশনে নামেন। এমন মিশনে বিভিন্ন সময়ে আমাকে রাতে অফিসে ডাকতেন। সেটিতে সাড়া না পেয়ে চাকরিচ্যুতির খড়গ নামে আমার ওপর।’ এসব বিষয় তিনি পূর্বকালীন বিভাগীয় ব্যবস্থাপক গোলাম সারোয়ারকে একাবিকবার অবগত করেছিলেন।
তিনি বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে যে অভিযোগ আনা হয়েছে একই দিনে সে অভিযোগ আরেক কর্মীর বিরুদ্ধেও আনা হয়। অথচ ওই কর্মীর চাকরি বহাল থাকলেও করোনাকালীন সময়ে আমাকে চাকরিচ্যুত করা হয়। চাকরি হারিয়ে আমি যে সময়ে পরিবার নিয়ে দিশেহারা, সে সময়ে এরিয়া ম্যানেজার নাজমুল হক আমাকে ওই এলাকা থেকে তাড়াতে নানা হুমকি দিয়েই ক্ষান্ত হননি। তিনি আমার বিরুদ্ধে ডোমার থানায় জিডিও করেছেন’।
তার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগের বিষয়ে বলেন, ‘২০২০ সালের ফ্রেব্রুয়ারি মাসের শেষের দিকে সংশ্লিষ্ট মাঠকর্মীর অনুপস্থিতিতে একজন ঋণগ্রহিতার এক হাজার ৪০০ টাকা জমা নিয়ে অফিসে জমা না করার অভিযোগ আনা হয়। দায়িত্বটি আমার না হলেও ওই টাকা আমি তাৎক্ষণিক অফিসে জমা করে ক্ষমা প্রার্থনা করি। একইভাবে আরেক কর্মীর বিরুদ্ধে দুই হাজার টাকার অভিযোগ আনা হলে তিনিও অফিসে টাকা জমা করে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। একই অপরাধে তাকে ক্ষমা করা হলেও আমাকে চাকরিচ্যুত করা হলো’।
জেলা মহিলা পরিষদের সভাপতি দৌলত জাহান ছবি বলেন, ‘অভিযোগ পাওয়ার পর আমরা সরেজমিনে সেখানে যাই। অফিস এবং মাঠ পর্যায়ে বিভিন্ন জনের সঙ্গে কথা হলে ব্যক্তিগত আক্রোসের বিষয়টি আমাদের কাছে প্রমাণিত হয়। মানবতার সেবায় নিয়োজিত ব্র্যাকের কাছে করোনাকালীন সময়ে এজজন নারী কর্মীকে চাকরিচ্যুত করার বিষয়টি আমাদের কাছে অমানবিক বলে মনে হয়েছে। আমরা তার চাকরি পুনর্বহাল এবং তদন্ত করে সঠিক ঘটনাটি উদঘাটনের মাধ্যমে ন্যায় বিচার আশা করছি’।
এ বিষয়ে এলাকা ব্যবস্থাপক নাজমুল হকের সঙ্গে মুঠো ফোনে কথা হলে তিনি বলেন, ‘ওই শাখা ব্যবস্থাপকের অর্থিক অনিয়মের বিষয়টি আমাদের মনিটরিং সেলের কাছে ধরা পরে। এরপর তিনি দোষ স্বীকার করে অফিসে টাকা জমা করেছেন। কোনো কর্মীর চাকরিচ্যুতির বিষয়ে হেডঅফিস থেকে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তার বিষয়েও হেড অফিস সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এখানে আমার কোনো হাত নেই’।
একই অনিয়মের অভিযোগে আরেক কর্মীর চাকরি বহাল থাকার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘ওই কর্মীর এক দফায় দুই হাজার টাকার অভিযোগ আসে। কিন্তু মৌসুমী দাসের বিরুদ্ধে দুই দফায় আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ থাকায় হেড অফিস তাকে টার্মিনেশন লেটার দিয়েছে’। বিভিন্ন সময়ে মৌসুমী দাসকে অনৈতিক প্রস্তাবের বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।
অভিযোগের বিষয়ে ব্র্যাকের জেলা প্রতিনিধি আখতারুল ইসলাম বলেন, ‘বিভিন্ন সময়ে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ মনিটরিং এবং অডিট করা হলে সত্যতা পাওয়া যায়’। একই কথা বলেন, ব্র্যাকের রংপুর বিভাগীয় ব্যবস্থাপক আফজাল হোসেন। তবে মৌসুমী দাস দ্বিতীয় দফায় আর্থিক অনিয়মের কথা অস্বীকার করেছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।