স্পোর্টস ডেস্ক : ম্যাচ শুরু হতে না হতেই গোল, এরপর খেলা শেষ হওয়ার একেবারে শেষ মুহূর্তে দারুণ একটি গোল সেইভ- এই দুই কীর্তিতেই অস্ট্রিয়াকে হতাশ করে ১৬ বছর পর ইউরোর শেষ আট নিশ্চিত করেছে তুরস্ক।
লাইপসিগের রেড বুল আরেনায় মেরিহ দেমিরালের জোড়া গোলে অস্ট্রিয়াকে ২-১ গোলে হারিয়েছে তুরস্ক। এর ফলে ইউরোর চলতি আসরে কোয়ার্টার ফাইনাল নিশ্চিত করেছে ভিনসেন্সো মনতেল্লার শিষ্যরা।
৬০ শতাংশ সময় নিজেদের পায়ে বল রেখে ২১টি শট নেয় অস্ট্রিয়া, যার পাঁচটি ছিল লক্ষ্যে। তবে একবারের বেশি জাল খুঁজে পেল না রাল্ফ রাংনিকের শিষ্যরা।
অন্যদিকে, ৪০ শতাংশ সময় বল দখলে রেখে ৬টি শটের তিনটি লক্ষ্যে রাখতে পারল তুরস্ক, যার দুটি থেকেই পেল সফলতা। ফলে অস্ট্রিয়ানদের হৃদয় ভেঙে শেষ আট নিশ্চিত করল তারা।
এর ফলে ২০০৮ সালের পর আবারও শেষ আটে উঠল তুরস্ক। সেবার পেনাল্টিতে ক্রোয়েশিয়াকে হারিয়ে সেমিফাইনালও খেলেছিল দেশটি, যা ইউরোতে তাদের সেরা দৌড়।
ম্যাচ শুরুর প্রথমেই আক্রমণে ওঠে অস্ট্রিয়া। তবে সেই আক্রমণ থেকে বল নিয়ে পাল্টা আক্রমণে গিয়ে ম্যাচের ৫৭ সেকেন্ডের মাথায় গোল করে অস্ট্রিয়ানদের দুঃস্বপ্নময় শুরু উপহার দেয় তুরস্ক।
পাল্টা আক্রমণে গিয়ে কর্নার আদায় করে তুরস্ক। কর্নার থেকে রিয়াল মাদ্রিদের তরুণ প্রতিভা আর্দা গুলেরের উড়ন্ত শটটি অস্ট্রিয়ান ফুলব্যাক স্টেফান পশের পায়ে লেগে গোল পেয়েই যাচ্ছিল তুরস্ক। কিন্তু গোললাইন থেকে বলটি কোনোমতে ঠেকান গোলরক্ষক পাট্রিক পেন্টস। তবে মুহূর্তেই তা দেমিরালের পায়ে চলে গেলে লক্ষ্যভেদ করেন তিনি।
ফলে ম্যাচ শুরু হতেই এগিয়ে যায় তুরস্ক। দেমিরালের এই গোলটি ইউরোর নকআউট পর্বের ইতিহাসে দ্রুততম গোল।
এর দুই মিনিট পরই সমতায় ফেরার মতো সুযোগ তৈরি করে অস্ট্রিয়া। তবে ক্রিস্টফ বাউমগার্টনারের শট পোস্ট ঘেঁষে বেরিয়ে গেলে তা আর হয়ে ওঠে না। একটু পর কর্নার থেকে ফের গোলের সুযোগ আসে অস্ট্রিয়ার সামনে। তবে গোলমুখে বল গেলেও শেষ ছোঁয়া দিতে ব্যর্থ হওয়ায় আরও একবার হতাশ হতে হয় তাদের।
এই শেষ। এরপর থেকে মাঝমাঠেই বেশি ঘোরাঘুরি করে বল। যদিও অস্ট্রিয়াই এর মাঝে সবচেয়ে বেশি আক্রমণ তৈরি করে, তবে গোলে একটি শটও আর রাখতে পারেনি তারা। ফলে এক গোলে পিছিয়ে থেকেই বিরতিতে যায় অস্ট্রিয়া।
বিরতির পর ফিরেই তুরস্ককে চেপে ধরে অস্ট্রিয়া। প্রথম দশ মিনিটের মধ্যেই চারটি শট নেয় তারা। তবে এর মধ্যে লক্ষ্যে রাখতে পারে কেবল একটি, তাও রক্ষণে প্রতিহত হয়।
প্রতিপক্ষের চাপের মুখেও মাথা ঠান্ডা রেখেছিল তুরস্কের ফুটবলাররা। আর উত্তেজিত অস্ট্রিয়ানদের আক্রমণের ভেতর থেকে আরও একটি গোল বের করে নেন দেমিরাল।
পাল্টা আক্রমণে উঠে ফের কর্নার আদায় করে তুরস্ক। এরপর আবারও গুলেরের ক্রস পেয়ে প্রতিপক্ষের দুই ডিফেন্ডারের মাঝ দিয়ে খানিকটা লাফিয়ে উঠে হেডারে অতিমানবীয় এক গোল করে বসেন দেমিরাল। ফলে ২-০ গোলে এগিয়ে যায় তুরস্ক।
এরপর পাল্টা জবাব দিতে অবশ্য খুব বেশি সময় নেয়নি অস্ট্রিয়া। ৭ মিনিট পরই কর্নার থেকে আসা ক্রসে হেড পাস দেন পশ, তা থেকে ছয় গজ বক্সের মধ্যে বল পেয়েই জালে জড়িয়ে দেন মিখায়েল গ্রেগরিটশ।
এরপর সমতায় ফিরতে মরিয়া হয়ে ওঠে অস্ট্রিয়া। একের পর এক আক্রমণে তুরস্ককে আক্রমণে ওঠার কথা ভুলিয়ে দেয় তারা। কিন্তু কোনোভাবেই পাচ্ছিল না গোলের দেখা। অবশেষে যোগ করা সময়ের একেবারে শেষ মুহূর্তে এসেছিল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। কিন্তু অসাধারণ দক্ষতায় বাউমগার্টনারের সেই হেডার ঠেকিয়ে দেন তুরস্কের গোলরক্ষক মের্ট গুনোক।
সেইভটি এমন দর্শনীয় ছিল যে, গ্যালারিতে তুরস্কের দর্শক থেকে শুরু করে ডাগআউটে বসে থাকা খেলোয়াড়, সবাই গোল পাওয়ার মতো উল্লাসে ফেটে পড়ে। এরপর আর সময় না থাকায় ২-১ গোলের ব্যবধানে জয় নিয়েই ম্যাচ শেষ করে তুরস্ক।
বার্লিনে আগামী শনিবার (৬ জুলাই) রাত একটায় সেমিফাইনালে ওঠার লড়াইয়ে নেদারল্যান্ডসের মুখোমুখি হবে তুরস্ক।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।