জুমবাংলা ডেস্ক : বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃত্বে সংঘটিত গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের টানা সাড়ে ১৫ বছরের ক্ষমতার অবসান ঘটেছে। সরকার পতনের পর এখন ওই আমলের মন্ত্রী-এমপিসহ প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দুর্নীতি, অর্থপাচার ও ঋণ কেলেঙ্কারির বিভিন্ন খবর বেরিয়ে আসতে শুরু করেছে। এমন পরিস্থিতিতে আর্থিক অনিয়মের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের ব্যাংক হিসাব তলব ও জব্দ করছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)।
ইতোমধ্যে সদ্য বিগত সরকারের এমন শতাধিক প্রভাবশালী ব্যক্তির ব্যাংক হিসাব জব্দ ও স্থগিত হয়েছে। সাবেক মন্ত্রী-এমপি থেকে শুরু করে ব্যবসায়ী, গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন সংস্থার শীর্ষ ব্যক্তি, সাবেক সেনা ও পুলিশ কর্মকর্তাদের নাম রয়েছে এ তালিকায়।
সবশেষ এ তালিকায় যুক্ত হয়েছে ব্যাংকের উদ্যোক্তাদের সংগঠন বিএবি ও এক্সিম ব্যাংকের চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদার ও তার স্ত্রী নাছরিন ইসলাম, পদ্মা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান, আর্থিক খাতের আলোচিত নাম চৌধুরী নাফিজ সরাফাত ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রেস সচিব সাংবাদিক নাঈমুল ইসলাম খান ও তাদের স্ত্রী-সন্তানদের নাম। গত ২৫ আগস্ট তাদের সবার ব্যক্তিগত এবং স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব ও লেনদেন স্থগিত করা হয়েছে।
এর দুদিন আগে, গত ২৩ আগস্ট বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ও সাবেক প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) সদ্য পদত্যাগ করা সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন, আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও সাবেক বস্ত্র ও পাটমন্ত্রী জাহাঙ্গীর কবির নানক এবং দিনাজপুর-৬ (হাকিমপুর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য শিবলী সাদিকের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়েছে। একই সঙ্গে তাদের স্ত্রী-সন্তানদের ব্যক্তিগত এবং স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব ও লেনদেন স্থগিত করা হয়েছে।
তার আগের দিন, ২২ আগস্ট সাবেক অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল (লোটাস), তার স্ত্রী কাশ্মিরি কামাল ও মেয়ে নাফিসা কামাল এবং সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, তার স্ত্রী আইরিন মালবিকা মুনশি ও মেয়ে তানিয়া অনন্যা মুনশি এবং তৃষা মুনশির ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়। এছাড়াও এদিন দেশের ব্যাংকিং খাতের মাফিয়াখ্যাত শিল্পগ্রুপ এস আলম গ্রুপের স্বত্বাধিকারী এস আলম ও তার পরিবারের ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের নামে-বেনামে কত টাকা ঋণ আছে, তা জানতে ২২ আগস্ট ব্যাংকগুলোকে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ বাংক।
গত ২০ আগস্ট বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) সদ্য পদত্যাগ করা চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম ও তার ছেলে জুহায়ের সারার ইসলাম, মার্চেন্ট ব্যাংকারদের সংগঠন বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সাবেক সভাপতি মো. ছায়েদুর রহমান, শেয়ারবাজারের আলোচিত কারসাজিকারক মো. আবুল খায়ের, শেয়ারবাজারের আলোচিত ব্যক্তি জাভেদ এ মতিন, সম্পদ ব্যবস্থাপক কোম্পানি সিডব্লিউটির এমডি মনিজা চৌধুরীসহ আট ব্যক্তির ব্যাংক হিসাব স্থগিত করা হয়। একই সঙ্গে তাদের মালিকানাধীন ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবের লেনদেনও স্থগিত করা হয়। এ আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, বিগত সরকারের আমলে দেশের পুঁজিবাজার অস্থির করার পেছনে জড়িত ছিলেন তারা।
একইদিন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিমের ৯১ ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সকল হিসাব তলব করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। এদিন আলোচিত সাবেক বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু এবং ঢাকা মহানগর পুলিশের সাবেক যুগ্ম কমিশনার বিপ্লব কুমার সরকার, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) শামীম ওসমান, নারায়ণগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এ কে এম সেলিম ওসমান, সাবেক শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের ব্যাংক হিসাবও জব্দ করা হয়েছে।
সাবেক স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণমন্ত্রী জাহিদ মালেক স্বপনের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করার চিঠি দেওয়া হয় গত ১৯ আগস্ট। ওই চিঠিতে জাহিদ মালেক তার মেয়ে সিন্থিয়া মালেক, ছেলে রাহাত মালেকের নাম, জাতীয় পরিচয়পত্রের তথ্য দেওয়া হয়। একই সঙ্গে তাদের মালিকানাধীন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবের লেনদেন স্থগিত করতে বলা হয়।
একইদিন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এবং অতীশ দীপঙ্কর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান লিয়াকত সিকদারের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়েছে। একই সঙ্গে তার স্ত্রী মাহমুদা আলী সিকদার এবং তাদের মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠান কম্পিউটার ওয়ার্ল্ড বিডির ব্যাংক হিসাবের লেনদেন স্থগিত করা হয়।
১৯ আগস্ট জব্দ করা হয় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই সাবেক সংসদ সদস্য শেখ হেলাল উদ্দিন ও তার ছেলে শেখ সারহান নাসের তন্ময়ের ব্যাংক অ্যাকাউন্টও। একই সঙ্গে তাদের মালিকানাধীন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবের লেনদেন স্থগিত করা হয়েছে।
সাবেক শিক্ষা ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রী ডা. দীপু মনি, তার স্বামী তৌফীক নাওয়াজ এবং বড় ভাই ডা. জে আর ওয়াদুদ টিপুর ব্যাংক অ্যাকাউন্টও জব্দ করা হয় এদিন। পাশাপাশি তাদের মালিকানাধীন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবের লেনদেন স্থগিত রাখারও নির্দেশ দেওয়া হয়। এদিন সেনাবাহিনীর চাকরিচ্যুত মেজর জেনারেল জিয়াউল আহসানের স্ত্রী-সন্তান এবং তাদের মালিকানাধীন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টও জব্দ করা হয়।
গত ১৮ আগস্ট ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার সাবেক ডিবি প্রধান আলোচিত হারুন অর রশিদ এবং তার স্ত্রী, সন্তান ও তাদের মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবের লেনদেন স্থগিত করা হয়।
ঝালকাঠি-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, কেন্দ্রীয় ১৪ দলের সমন্বয়ক ও মুখপাত্র আমির হোসেন আমু তার সন্তান এবং তাদের মালিকানাধীন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবও স্থগিত করা হয় একইদিন।
পিরোজপুর-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মহিউদ্দিন মহারাজ ও নাটোর-২ (সদর ও নলডাঙ্গা) আসনের শফিকুল ইসলাম শিমুলের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয় ১৫ আগস্ট। একইসঙ্গে তাদের স্ত্রী, সন্তান এবং মালিকানাধীন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবের লেনদেন স্থগিত রাখতে বলা হয়।
গত ১৪ আগস্ট সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও আরও সাবেক তিন সংসদ সদস্য ও তাদের স্ত্রী, সন্তান এবং তাদের মালিকানাধীন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাবের লেনদেন স্থগিত করে বিএফআইইউ। ওই তিন সাবেক সংসদ সদস্যরা হলেন- আওয়ামী লীগ নেতা জামালপুর-৩ (মাদারগঞ্জ-মেলান্দহ) আসনের মির্জা আজম, সিরাজগঞ্জ-২ (সদর ও কামারখন্দ) আসনের জান্নাত আরা হেনরী এবং ময়মনসিংহ-১০ (গফরগাঁও) আসনের সাবেক এমপি ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফাহমী গোলন্দাজ বাবেল।
গত ১৩ আগস্ট সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, তার স্ত্রী আরিফা জেসমিন কনিকাসহ তার সন্তান এবং তাদের মালিকানাধীন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করা হয়।
একইদিন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও তার স্ত্রী সন্তানদের ব্যক্তিগত ও তাদের মালিকানাধীন সব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জব্দ করার নির্দেশ দেয় বিএফআইইউ। আর্থিক সংস্থাটির পক্ষ থেকে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়েছে আসাদুজ্জামান খান, তার স্ত্রী লুৎফুল তাহমিনা খান, ছেলে সাফি মুদ্দাসির খান এবং মেয়ে সাফিয়া তাসনিম খানের নামে থাকা সব ধরনের ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক অ্যাকাউন্ট বন্ধ থাকবে।
আগের দিন, ১২ আগস্ট সাবেক তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত ও তার স্ত্রীর নামে থাকা ব্যাংক হিসাব জব্দের নির্দেশ দেয় বিএফআইইউ। একইসঙ্গে তাদের হিসাবের সব তথ্য চেয়েছে সংস্থাটি। বিএফআইইউ’র পক্ষ থেকে ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, মোহাম্মদ আলী আরাফাত ও তার স্ত্রী শারমিন মুশতারীর ব্যক্তিগত ও ব্যবসায়িক অ্যাকাউন্টের মাধ্যমে সব ধরনের টাকা তোলা বন্ধ থাকবে।
একই দিন সাবেক সাইফুজ্জামান চৌধুরী ও তার স্ত্রী রুখমিলা জামান চৌধুরীর নামে থাকা ব্যাংক হিসাবও জব্দের নির্দেশ দেওয়া হয়। একইসঙ্গে তাদের হিসাবের সব তথ্য চায় সংস্থাটি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।