স্পোর্টস ডেস্ক : পুঁচকে সৌদি আরবের কাছে পরাশক্তি আর্জেন্টিনার হার দুটি কাজ করেছে। প্রথমত, বিশ্বকাপের রোমাঞ্চ বাড়িয়ে দিয়েছে। দ্বিতীয়ত, শিরোপাপ্রত্যাশী বড় দলগুলোর মনে ঢুকিয়ে দিয়েছে ভয়। সেই ভয় সঙ্গে নিয়েই আজ কাতার বিশ্বকাপের পঞ্চম দিনে মাঠে নামছে পাঁচ বারের চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল ও ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর পর্তুগাল। জি গ্রুপে নেইমারদের ব্রাজিলের প্রতিপক্ষ সার্বিয়া। লুসাইল স্টেডিয়ামে ম্যাচটা শুরু হবে বাংলাদেশ সময় রাত ১টায়। এইচ গ্রুপে পর্তুগাল মুখোমুখি হবে আফ্রিকার দেশ ঘানার। দোহার স্টেডিয়াম ৯৭৪-এ ম্যাচটা শুরু হবে বাংলাদেশ সময় রাত ১০টায়।
আজ ম্যাচ আছে আরো দুটি। জি গ্রুপের অন্য ম্যাচে সুইজারল্যান্ডের প্রতিপক্ষ ক্যামেরুন। ম্যাচটা শুরু হবে বিকাল ৪টায়। এইচ গ্রুপের অন্য ম্যাচে দুই বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন উরুগুয়ের সামনে এশিয়ার প্রতিনিধি দক্ষিণ কোরিয়া। বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৭টায় বাজবে এই ম্যাচ শুরুর বাঁশি। চারটি ম্যাচ হলেও ফুটবলপ্রেমীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে ব্রাজিল-সার্বিয়া ও পর্তুগাল-ঘানার ম্যাচ দুটি। উরুগুয়েও দুই বারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন। দলটিতে রয়েছে লুইস সুয়ারেজ, এডিনসন কাভানি, দিয়েগো গডিনদের মতো বিশ্বমানের তারকা। তারপরও দক্ষিণ আমেরিকার এই দলটিকে নিয়ে ফুটবলপ্রেমীদের কৌতূহলটা কম। বিশেষ করে বাংলাদেশে।
সে যাই হোক, বাংলাদেশে বিশ্বকাপ উত্তেজনার সত্যিকার ঢেউটা লেগেছে আর্জেন্টিনার মাঠে নামার মধ্যদিয়ে। তারপরও যে খামতিটুকু রয়েছে, সেটুকু কানায় কানায় পরিপূর্ণ হবে আজ। ব্রাজিল মাঠে নামার মধ্যদিয়ে বিশ্বকাপ উত্তেজনা পরিপূর্ণভাবে গ্রাস করে নেবে বঙ্গোপসারের এই বদ্বীপ রাষ্ট্রটিকে। সমর্থকসংখ্যার ভিত্তিতে বাংলাদেশিদের কাছে দ্বিতীয় জনপ্রিয় দল ব্রাজিল। কাজেই এই দেশের যারা ব্রাজিল সমর্থক, তাদের গায়ে বিশ্বকাপ উন্মাদনার কম্পনটা এখনো সেভাবে লাগেনি। লাগবে আজ। শুধু বাংলাদেশ নয়, নেইমারদের মাঠে নামার মধ্যদিয়ে পুরো বিশ্বই উত্তেজনার কোরাসের তলে তলিয়ে যাবে!
ব্রাজিল বিশ্বকাপের চিরকালীন ফেভারিট। একমাত্র দেশ হিসেবে বিশ্বকাপের সবগুলো আসরেই খেলা ব্রাজিল চ্যাম্পিয়ন হয়েছে সর্বোচ্চ পাঁচ বার। কাতারে নেইমারদের মিশন ‘হেক্সা’ জয়ের। নিজেদের এই স্বপ্নপূরণের পথে নেইমার-রিচার্লিসন-ভিনিসিয়ুসদের দল সবচেয়ে ফেভারিটও। কিন্তু সৌদির কাছে মেসিদের পরাজয় নেইমারদের মনে একটু হলেও ভয়ের রেখা আঁকিয়ে দিয়ে থাকবে। তবে লক্ষ্য যাদের শিরোপা, তাদের কি গ্রুপ পর্বের ম্যাচ নিয়ে ভয় পেলে চলে!
তাই শঙ্কা যদি ভর করেও থাকে, তা মনের ভেতরেই চাপা রেখে নেইমাররা একমাত্র জয়ের ছবি এঁকেই নামবেন। ফিফা র্যাংকিং, পরিসংখ্যান, সাম্প্রতিক ফর্ম, দলীয় শক্তিমত্তা—সব দিক থেকেই এগিয়ে তিতের ব্রাজিল। র্যাংকিংয়ের ১ নম্বর দল ব্রাজিলের বিপক্ষে ২১ নম্বরের সার্বিয়ার এ পর্যন্ত বিশ্বকাপ মঞ্চে মোট পাঁচ বার মুখোমুখি হয়েছে। এর মধ্যে চার বার মুখোমুখি হয়েছে যুগোস্লাভিয়া নামে। সার্বিয়া নামে মুখোমুখি হয়েছে একবার, ২০১৮ আসরে। পাঁচ সাক্ষাতের মধ্যে ব্রাজিল দুবার জিতেছে, ড্র হয়েছে দুটি ম্যাচ। যুগোস্লাভিয়া নামে সার্বিয়া জিতেছে একবার, সেটা সেই ১৯৩০ সালের প্রথম বিশ্বকাপে।
দুই দলের সর্বশেষ সাক্ষািট ২০১৮ বিশ্বকাপের এই গ্রুপ পর্বেই। ২৭ জুনের সেই ম্যাচে ব্রাজিল জিতেছিল ২-০ গোলে। গোল দুটো করেছিলেন পাওলিনহো ও অধিনায়ক থিয়াগো সিলভা। সেই থিয়াগো সিলভা এবারও ব্রাজিলের অধিনায়ক। নিজের রক্ষণ দায়িত্ব সামলে আজও নিশ্চই গোল করতে চাইবেন তিনি! থিয়াগো সিলভা গোল পেলে সেটা হবে ব্রাজিলের জন্য বোনাস। কারণ, তিতের দলে গোল করার লোকের অভাব নেই। নেইমার, ভিনিসিয়ুস, রদ্রিগো, পেদ্রি, রিচার্লিসন, রাফিনহা, গ্যাব্রিয়েল জেসুস, অ্যান্তনিদের নিয়ে আক্রমণভাগই ব্রাজিলের মূল শক্তির জায়গা। কাসেমিরো, ফ্রেড, ফাবিনহো, পাকুয়েতা, এভারটন রিভেইরোদের নিয়ে মাঝমাঠও দারুণ। সিলভা, দানিলো, মারকুইনহোস, অ্যালেক্স সান্দ্রো, এদের মিলিতাও, দানি আলভেজদের রক্ষণও ভরসা দিচ্ছেন কোচ তিতেকে। আর গোলপোস্টের নিচে আলিসন বেকার ও এডারসন তো বর্তমান বিশ্বেরই অন্যতম সেরা দুই গোলরক্ষক।
দলটি ভারসাম্যপূর্ণ বলেই কি না, কিংবদন্তি পেলে থেকে শুরু করে ব্রাজিলের ১৯৯৪ বিশ্বকাপ জয়ের নায়ক রোমারিও, ২০০২ বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক কাফুরাও আশাবাদী—এবার তাদের ‘হেক্সা’র স্বপ্ন পূরণ হবে। বিশ্বকাপ জিতলে কোপাকাবানা সমুদ্রসৈকতে উদ্যাপন করাটাকে রীতি বানিয়ে ফেলেছেন ব্রাজিলিয়ানরা। যেভাবেই হোক দেশবাসীকে নিয়ে কোপাকাবানার সমুদ্রসৈকতে উত্সব করতে চান নেইমাররা। পিএসজি তারকা এতটাই আশাবাদী যে, ক্লাব সতীর্থ মেসিকে মজা করে তিনি বলেছেন, আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে শিরোপা জিতবেন তারা। এই আশাকে পুঁজি করেই আজ অভিযাত্রা শুরু করছেন নেইমাররা। তবে আশার উলটো পিঠে প্রতিপক্ষের প্রতি সমীহও আছে।
নেইমারদের ব্রাজিলই মূল আকর্ষণ। তবে রোনালদোর কারণে পর্তুগালের ম্যাচটিও ফুটবলপ্রেমীদের বিশেষ রাডারে থাকবে। খেলোয়াড়ি জীবনে সম্ভাব্য সবকিছুই জিতেছেন ৩৭ বছর বয়সি রোনালদো। আক্ষেপ শুধু একটিই, কখনো জেতা হয়নি বিশ্বকাপ। ছোঁয়া হয়নি স্বপ্নের সোনার ট্রফিটা। নিজের সম্ভাব্য শেষ বিশ্বকাপ হিসেবে কাতারেই আজন্ম সেই আক্ষেপটা পূর্ণ করতে মরিয়া পর্তুগিজ সুপারস্টার। সতীর্থরাও মহাতারকা রোনালদোকে একটা বিশ্বকাপ জেতাতে উন্মুখ। পর্তুগাল দলটিও খারাপ না। রোনালদোর সঙ্গে হুয়াও ফেলিক্স, বার্নার্ডো সিলভা, আন্দ্রে সিলভা, ব্রুনো ফার্নান্দেজদের সামর্থ্য আছে লক্ষ্য ছোঁয়ার।
ব্রাজিল-পর্তুগাল, দুই দলই জানে লক্ষ্য ছোঁয়াটা হবে কঠিন। তবে সেই লক্ষ্যে দুই দলই চায় শুরুটা ভালো করতে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।