জুমবাংলা ডেস্ক: উপজেলা কি বাপ-দাদার পৈত্রিক সম্পত্তি মনে করেন মিয়া? এখানে ঘাস খেয়ে আসিনি। পাঁচ বছরের জন্য চেয়ারম্যান হয়ে ভাব দেখান নাকি? একবার আমরা ক্ষেপলে সরকারের চেয়ার থাকে না আপনি তো দুই পয়সার উপজেলা চেয়ারম্যান।
এভাবেই লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েসকে উদ্দেশ্য করে উপজেলা পরিষদের মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা মনসুর উদ্দিন শাসিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
রবিবার বিকেলে স্টেশন এলাকার নিজ বাসভবনে সংবাদ সম্মেলন করে এসব কথা বলেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ইমরুল কায়েস ফারুক।
লিখিত বক্তব্যে তিনি আরো বলেন, মনসুর উদ্দিন এই উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগদানের পর উপজেলাটিকে দুর্নীতির আখড়া বানিয়েছেন। প্রত্যেকটি কাজেই উৎকোচ আদায় করেন তিনি। তার অনিয়ম দুর্নীতিতে ঠিকাদার, ইউপি চেয়ারম্যান, অধ:স্তন কর্মকর্তারা অতিষ্ট হয়ে উঠেছেন। কিস্তু ভয়ে কেউ-ই মুখ খোলার সাহস পাচ্ছেন না। ইউএনও মনসুর উদ্দিন কাল্পনিক প্রকল্প দেখিয়ে এবং একই প্রকল্প বারবার দেখিয়ে সরকারের অপ্রত্যাশিত খাতের টাকা নিজের খেয়াল খুশিমত ব্যক্তিগত কাজে খরচ করছেন। পূর্বের গাড়িচালক আজিজুলকে দুর্নীতির হাতিয়ার হিসেবে বেছে নিয়ে তার মাধ্যমে উপজেলা চত্তরের গাছ কেটে সাবার করেছেন। তার মাধ্যমে সরকারী গাড়ি ব্যবহার করে চাকুরির প্রলোভন, ঠিকাদারি কাজ দেয়ার কথা বলে বিভিন্ন ব্যক্তির কাছে আর্থিক অনিয়ম করেছেন। পরবর্তীতে নিজের পিঠ বাঁচাতে গাড়ি চালক আজিজুলকে সাময়িক বহিস্কার করে নিজে বহাল তবিয়তে রয়েছেন।
শুধু তাই নয়, হাট-বাজারের ইজারার ২০ শতাংশ টাকা ইউনিয়ন পরিষদের উন্নয়নমূলক কাজে ব্যয় করার নিয়ম থাকলেও সেই টাকা তহবিলে রেখে তাদের হয়রানি করেন। পরে মোট টাকার ১০ শতাংশ টাকা কমিশন নিয়ে ছাড় করেন তিনি। প্রত্যেকটি উন্নয়ন কাজে নিজের পছন্দসই ঠিকাদার নিয়োগ ও কোন কোন কাজের ঠিকাদারি নিজেই করেন। এক্ষেত্রে কোন নিয়মের তোয়াক্কা করেন না। বর্তমানে কোন রেজুলেশন ছাড়া উপজেলা কোয়ার্টার মেরামতের কাজ তিনি নিজেই করছেন।
এছাড়াও, মুজিবশতবর্ষ উদযাপনের নাম করে বিভিন্ন জনপ্রতিনিধি, ব্যবসায়ী, ঠিকাদার, সরকারের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের চাঁদাবাজি করে সেই টাকা নিজে আত্মসাৎ করেছেন ইউএনও।
এসবের প্রতিবাদ করায় ইউএনও তার ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে অন্যান্য দপ্তর প্রধানদের উষ্কে দিয়ে পরিকল্পিতভাবে ১২নভেম্বর জেলা প্রশাসকের নিকট তার বিরুদ্ধে মিথ্যা বানোয়াট, কাল্পনিক অভিযোগ দিয়েছে বলে দাবি করেন চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েস।
এদিকে, গত বৃহস্পতিবার অশোভন-অপেশাদার, উচ্ছৃঙ্খল আচরণ ও মারপিটের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ তুলে উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েসের বিরুদ্ধে অধঃস্তন ১৮ কর্মকর্তার পক্ষে জেলা প্রশাসক বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন ইউএনও মনসুর উদ্দিন।
অভিযোগে উল্লেখ করেন, ওইদিন মাসিক সমন্বয় সভায় ভিজিডি ও মাতৃত্ব ভাতার তালিকায় নিজের অংশ দাবি করেন উপজেলা চেয়ারম্যান। যা বিধি সম্মত না হওয়ায় ইউএনও নাকোচ করে দেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সভা অসমাপ্ত রেখে চলে যান চেয়ারম্যান। এরপর চেয়ারম্যান ইউএনও অফিসের সিসিটিভি ক্যামেরা লোক দিয়ে খুলতে গেলে তার ছবি তোলেন ইউএনও। একইসঙ্গে ক্যামেরা খুলে ফেলার কারণ জানতে চান। এসময় চেয়ারম্যান ইউএনওকে অশ্রাব্য ভাষায় গালমন্দ করে বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।
তবে দুপক্ষেরই অভিযোগ তদন্ত করছে স্থানীয় সরকার বিভাগের উপ-পরিচালক রফিকুল ইসলাম। লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর তাকে ঘটনা তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিল করার নির্দেশ দিয়েছেন।
এদিকে, উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েস ইউএনওকে হত্যার হুমকি দিয়েছে অভিযোগ তুলে আজ একটি সাধারণ ডায়েরী করেছেন ইউএনও মনসুর উদ্দিন। পাশাপাশি পরিষদের সরকারী চেক বইয়ের ১৯টি পাতা ছিড়ে ফেলার অভিযোগ এনে ইউএনওর সুপারিশে সাঁট-মুদ্রাক্ষরিক কাম-কম্পিউটার অপারেটর হাবিবুর রহমানের একটি আবেদন থানায় সাধারণ ডায়েরিভূক্ত করা হয়েছে।
যদিও উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক ইমরুল কায়েস এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, সব ক্ষেত্রে ইউএনও’র অনিয়ম দুর্নীতির বিষয়গুলো এখন সাধারণ মানুষের কাছে স্পষ্ট হচ্ছে। তাই সাধারণ জনগনের নজর ভিন্ন দিকে প্রভাবিত করতে নাটক করছেন ইউএনও। তিনি আরো বলেন- আমার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ ও বিশেষ স্বার্থান্বেসী প্রভাবশালী মহলের সাথে যোগ সাজস করে আমাকে বিপদে ফেলার ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবারের ঘটনা সম্পর্কে ফারুক বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী প্রকল্পের আওতায় সুবিধাভোগী ব্যক্তির নামের তালিকাকরণ ও সুবিধা প্রদানে ব্যাপক অসঙ্গতি ও অনিয়মের অভিযোগ ওঠেছে। মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরে মাতৃকালীন ভাতার চেক ইস্যু করার পরেও সংশ্লিষ্ট ব্যাংক হিসেবে টাকা না থাকায় জনসাধারণ হয়রানি হয়ে আসছে। এসব বিষয় নিয়ে প্রতিদিন পরিষদে হয়রানীর শিকার ভুক্তভোগীরা হট্টগোল করে। যা আমার স্বাভাবিক কাজের পরিবেশকে বাধাগ্রস্থ করছে। বিষয়গুলো ১২ নভেম্বর মাসিক সমন্বয় সভায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে দায়িত্বশীল ও অনিয়ম না করার তাগিদ দেওয়া হয়। এতে আকস্মিক ভাবে ইউএনওসহ ঐ কর্মকর্তা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। একপর্যায়ে অশোভন আচরণের চেষ্টা করলে আমি নিজের সম্মান রক্ষার্থে উঠে কক্ষে যাই। সেখানে সিসিটিভি’র সংযোগটি বিচ্ছিন্ন মনে হওয়ায় আমার ব্যক্তিগত সহকারী হুমায়ূন দেখতে বলি। সে দেখার চেষ্টা করলে ইউএনও এসে হুমায়ূনকে অশালীন আচরণ করে মারপিট করতে তেড়ে যায়।
এসময় সে কুরুচিপূর্ণ ভাষায় গালিগালাজ করে এবং বলে ব্যাটা তোর কোন বাবার ওর্ডারে এখানে উঠেছিস। মোবাইল কোর্ট করে চৌদ্দ শিকের ভাত খাওয়াই ছেড়ে দিবো। তোর কোন বাপ আছে তোকে বাঁচায় দেখবো। হুমায়ূন হতবম্ব হলে আমি এগিয়ে যাই এবং বলি সংযোগটি ছেঁড়া মনে হল, তাই আমি উঠতে বলেছি। আমার কথা শেষ না হতেই ইউএনও পরিস্থিতি উতপ্ত করে।
এ ব্যাপারে আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনসুর উদ্দিন বলেন, আমার সকল অভিযোগ লিখিত আকারে কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি এবং সাধারণ ডায়েরি করেছি। এর বাইরে আমার কোন বক্তব্য নাই। জেলা প্রশাসক বরাবর প্রেরিত লিখিত অভিযোগে ‘বেশি কথা বললে পিটিয়ে নরসিংদী পাঠিয়ে দেবো, কিন্তু সাধারণ ডায়েরিতে লিখেছেন- বেশি কথা বললে পিটিয়ে লাশ নরসিংদী পাঠিয়ে দেবো’- আসলে কোনটি সত্য? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি কোন জবাব দেন নি।
সাম্প্রতিক সময়ে আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা চেয়ারম্যানের মধ্যকার দ্বন্দ তুঙ্গে ওঠেছে। দুপক্ষের বিরোধ নিয়ে সর্বত্র চলছে সমালোচনার ঝড়। একে একে বেড়িয়ে আসছে চাঞ্চল্যকর সব দুর্নীতির তথ্য।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।



