জুমবাংলা ডেস্ক : আবারও হাসপাতালে ভর্তি হলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। আজ রাত পৌনে ১০টার দিকে তাকে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য পরীক্ষার জন্য ছয় দিনের মাথায় আবারও একই হাসপাতালে ভর্তি হলেন তিনি।
এর আগে সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে গুলশানের বাসা ‘ফিরোজা’ থেকে তাকে নিয়ে তার গাড়ি বহর হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা হয় এবং রাত ৯টা ৫ মিনিটে তিনি হাসপাতালে প্রবেশ করেন। দলের চেয়ারপারসনের হাসপাতালের আসার খবরে বিকাল থেকেই দল ও অঙ্গ সংগঠনের অসংখ্য নেতাকর্মী এসে হাসপাতালের সামনের রাস্তায় এসে জড়ো হতে থাকেন। সন্ধ্যার পর এক পর্যায়ে হাসপাতালের সামনের রাস্তায় যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটে।
সোমবার তার বেশ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হবে। পরীক্ষা শেষে সুস্থ্যবোধ করলে আজকেই বাসায় ফিরতে পারেন সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। এক সপ্তাহ আগের পরীক্ষাগুলোর রিপোর্ট দেখে নতুন করে বেশ কিছু টেস্ট করাতে বলেছেন মেডিকেল বোর্ড।
তার ব্যক্তিগত চিকিৎসক ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন এ সম্পর্কে বলেন, ‘ম্যাডামের’ কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার কথা বলেছে মেডিকেল বোর্ড। সেজন্য তাকে এই এভারকেয়ার হাসপাতালে আনা হয়েছে। কাল থেকে এই পরীক্ষাগুলো করা হবে। সেগুলোর রিপোর্ট পাওয়ার পর পর্যালোচনা শেষে বোর্ড-ই সিদ্ধান্ত নিবে পরবর্তী করণীয় কী হবে?
হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা হওয়ার আগে গুলশানের বাসায় এবং হাসপাতালে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালাম, বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শামসুদ্দিন দিদারসহ যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দল, মহিলা দল, শ্রমিক দল ও ছাত্রদলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গত ২২ আগস্ট খালেদা জিয়াকে গুলশানের ওই হাসপাতালে নিয়ে হৃদযন্ত্রের কয়েকটি পরীক্ষা করা হয়। সেগুলোর প্রতিবেদন পাওয়ার পর মেডিকেল বোর্ড আরও কয়েকটি পরীক্ষা করার জন্য জরুরি ভিত্তিতে তাকে হাসপাতালে নিতে বলেছে। সেজন্যে তাকে আবারও হাসপাতালে নেওয়া হয়েছে।
এভারকেয়ার হাসপাতালের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. শাহাবুদ্দিন তালুকদারের নেতৃত্বে মেডিকেল বোর্ডের তত্ত্বাবধায়নে চিকিৎসা চলছে সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীর।
গত জুন মাসে একই হাসপাতালে বেগম খালেদা জিয়ার হৃৎপিণ্ডের ব্লক অপসারণ করে একটি ‘স্টেন্ট’ বসানো হয়েছিল। ওই সময়ে তার হৃৎপিন্ডে আরও দু’টি ব্লক ধরা পড়ে। এক সঙ্গে এতগুলো ব্লক-এর অস্ত্রোপচারের ধকল তার পক্ষে কাটিয়ে উঠা সম্ভব নয় বলে চিকিৎসকরা কিছুটা সময় নিয়েছেন।
সেগুলোর বর্তমান অবস্থাসহ তার সার্বিক শারীরিক পরিস্থিতি জানার জন্যেই মূলত এই টেস্টগুলো করার নির্দেশনা দিয়েছে মেডিকেল বোর্ড। বোর্ডের একজন সদস্য এসব তথ্য জানিয়েছেন। ৭৭ বছর বয়সী বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে হৃৎপিণ্ডের রক্তনালীতে ব্লক, আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, কিডনি, ফুসফুস, চোখের সমস্যাসহ নানা জটিলতায় ভুগছেন। গত বছর এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর তার ‘পরিপাকতন্ত্রে’ রক্তক্ষরণ এবং লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত হওয়ার কথাও জানান চিকিৎসকরা। নানা জটিলতার উন্নত চিকিৎসার দাবি করে তাকে বিদেশে পাঠানোর জন্য কয়েক দফা আবেদন করা হয়েছিল তার পরিবারের পক্ষ থেকে। কিন্তু মুক্তি প্রদানের ক্ষেত্রে শর্তের কথা উল্লেখ করে প্রতিবারই তা নাকচ করে দিয়েছে সরকার।
২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি মাসে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় সাজা হলে কারাগারে যেতে হয় সাবেক এই প্রধানমন্ত্রীকে। পরে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলাতেও তার সাজার রায় আসে। দেশে করোনাভাইরাস মহামারী শুরুর পর বেগম খালেদা জিয়ার পরিবারের আবেদনের প্রেক্ষিতে ২০২০ সালে ২৫ মার্চ তাকে নির্বাহী আদেশে সাময়িক মুক্তি দেয় সরকার। শর্ত দেওয়া হয়, তাকে দেশেই থাকতে হবে এবং বিদেশে যাওয়া যাবে না।
কারাগার থেকে বেরিয়ে খালেদা জিয়া গুলশানের বাসা ফিরোজায় ওঠেন, এখন সেখানেই তিনি থাকছেন। ২০২১ সালের এপ্রিলে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর তাকে ছয় দফায় এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।