ইলিশ মাছ পছন্দ করে না এমন মানুষ হয়তো দুই বাংলায় খুঁজে পাওয়া যাবে না। ইলিশের রাজধানী বলতে চাঁদপুর জেলাকে বুঝায়, ইলিশ বলতেই চাঁদপুরকে বুঝে অনেকে। চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনার রূপালী ইলিশ সারা বিশ্বে জনপ্রিয়।
বছর জুড়ে কম-বেশি ইলিশ পাওয়া যায় জেলা সদরসহ আশাপাশের নদী উপকূলীয় মৎস্য আড়ৎগুলোতে। তবে এখন শুধুমাত্র তাজা ইলিশ বিক্রিই নয়, খাবার হোটেলগুলোতে পাওয়া যায় বিভিন্নভাবে রান্না করা ইলিশ। বিশেষ করে সদর উপজেলার হরিণা ফেরিঘাটের হোটেলগুলোতে তাজা ইলিশ ভেজে বিক্রি করা হচ্ছে ৮০ থেকে শুরু করে ২শ’ টাকার মধ্যে। গোটা ইলিশের স্বাদ নিতে এখন প্রতিদিনি জেলার ও জেলার বাইরের লোকজন ছুটে আসছে সেখানে।
মঙ্গলবার (১১ জানুয়ারি) দুপুরে সদর উপজেলার হানারচর ইউনিয়নের হরিণা ফেরিঘাটে গিয়ে দেখা গেছে তাজা ইলিশের পসরা সাজিয়ে রেখেছেন হোটেল ব্যবসায়ীরা। পাশেই ইলিশের আড়ৎ। জেলেরা পদ্মা-মেঘনা থেকে ধরে নিয়ে আসছে ইলিশ। আড়তদাররা হাঁকডাক দিয়ে পাইকারি বিক্রি করছেন। সেখান থেকে সুবিধামত দামে তাজা ইলিশ কিনে আনছেন হোটেল মালিকরা। দুপুর ১২টার পর থেকে সেই ইলিশ ভেজে বিক্রির প্রক্রিয়া শুরু করছেন।
হরিণা ফেরিঘাটে বিচ্ছিন্নভাবে প্রায় ১২টি হোটেলে তাজা ইলিশ বিক্রি করা হয়। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে দেখা গেছে চাঁদপুর-শরীয়তপুর ফেরিরুটের হরিণাঘাটে গাড়িচালক, গণপরিবহনের যাত্রী ও জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে আসা লোকজন এসব হোটেলে ইলিশ খাওয়ার জন্য ভিড় করছেন। অনেক হোটেল মালিক তাজা ইলিশ খাওয়ার জন্য ডাকাডাকি করছেন।
চরমোনাই হোটেলের মালিক মো. মুজাহিদ বাংলানিউজকে বলেন, আগে ইলিশ সাধারণত মৌসুমি সব্জির সঙ্গে রান্না করে বিক্রি হত বেশি। কিন্তু এখন ভোজনবিলাসী ক্রেতার সংখ্যা বেড়েছে। টাকার কোনো সমস্যা নেই, তাজা ইলিশের স্বাদ প্রয়োজন। যার কারণে আমরাও ছোট থেকে বড় সাইজের ইলিশ এখন বিক্রির জন্য প্রতিদিন প্রস্তুত রাখি। প্রতিদিন আমার হোটেলে দুপুর বেলায় ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকার ইলিশ বিক্রি করি।
বিসমিল্লাহ হোটেলের মালিক মাখন বেপারী বলেন, তার হোটেলে প্রতিদিন কমপেক্ষ ৩০ হাজার টাকার ভাজা ইলিশ বিক্রি হয়। ছোট সাইজের প্রতিটি ৮০ টাকা। একটু বড় সাইজ ২০০ টাকা। আর একদম বড় আকারেরগুলো কেটে টুকরো বিক্রি করা হয় ১শ’ থেকে ১২০ টাকা পিস। ১২টি খাবার হোটেলের মধ্যে গড়ে প্রত্যেকটিতে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা বিক্রি হয়।
তিনি আরও জানান, ফেরির যাত্রী ছাড়াও কুমিল্লার দাউদকান্দি, মোদফফরগঞ্জ, চাঁদপুরের শাহরাস্তি, দোয়াভাঙ্গা, কচুয়া, কালিয়া পাড়া, হাজীগঞ্জ থেকে অনেক মানুষ ইলিশ খাওয়ার জন্য আসেন।
ট্রাকচালক মোফাজ্জল মিয়া বাংলানিউজকে বলেন, চলার পথে প্রায়ই আমি হরিণাঘাটে চরমোনাই হোটেলে তাজা ইলিশ খাওয়ার জন্য আসি। একদম টাটকা ইলিশ খেয়ে অনেক স্বাদ পাওয়া যায়। কারণ এসব ইলিশে কোনো বরফ দেওয়া হয় না।
হরিণা ফেরিঘাটে তাজা ইলিশ খাওয়া এবং কেনার জন্য দেশের যে কোনো প্রান্ত থেকে এখানে আসতে পারবেন খুবই সহজে। ঢাকার সদরঘাট থেকে লঞ্চে চাঁদপুর ঘাট। সেখান থেকে সিএনজি চালিত অটোরিকশায় হরিণাঘাটে জনপ্রতি ভাড়া ৪০-৫০ টাকা। ট্রেনে চট্টগ্রাম ও লাকসাম থেকে আসা যায়। চট্টগ্রাম থেকে সকাল ৮টায় সাগরিকা এক্সপ্রেস এবং বিকেল ৫টায় মেঘনা এক্সপ্রেস চাঁদপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে। এর মধ্যে সাগরিকা দুপুর দেড়টায় ও মেঘনা এক্সপ্রেস প্রতিদিন ভোর ৫টায় চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে চাঁদপুর ছেড়ে যায়।
শুধুমাত্র ইলিশ খাওয়াই নয়, শহরের প্রধান পর্যটন কেন্দ্র তিন নদীর মোহনা বড় স্টেশন মোলহেডও অল্প সময়ের মধ্যে ঘুরে বেড়ানো যাবে। এছাড়াও কেউ যদি রাতে অবস্থান করতে চান তাহলে এখন বেশ কয়েকটি আবাসিক হোটেলও আছে শহরে। প্রয়োজন না হলে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে কাজ শেষ করে চলে যেতে পারবেন। কারণ চাঁদপুর থেকে বিলাসবহুল লঞ্চে ঢাকায় যেতে সময় লাগে মাত্র ৩ ঘণ্টা। সৌজন্যে: বাংলানিউজ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।