আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ফ্রান্সে এক কিশোরী ইসলামকে ‘ঘৃণার ধর্ম’ অভিহিত করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ইনস্টাগ্রাম পোস্ট দেওয়ার পর দেশজুড়ে বিতর্ক তৈরি হয়েছে। মিলা নামে ১৬ বছর বয়েসী কিশোরীটিকে একজন মুসলিম ব্যক্তি ‘নোংরা লেসবিয়ান’ বলে মন্তব্য করার পর সে অনলাইনে ওই পোস্ট দেয়।
এই পোস্টের পর তাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয় এবং এরপর থেকে আর স্কুলে যায়নি। কিন্তু এই ঘটনা নিয়ে বিতর্ক চরম আকার ধারণ করার পর টেলিভিশনে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মিলা তার বক্তব্য প্রত্যাহার করতে অস্বীকৃতি জানায়। যদিও ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে রেখেছে সে। তবে মঙ্গলবার ফ্রান্সের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্তফ ক্যাস্তানার দেশটির ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে বলেন, মিলা ও তার পরিবারকে সুরক্ষা দিচ্ছে পুলিশ।
এদিকে, এই ঘটনায় পুলিশ প্রাথমিকভাবে দু’টি বিষয়ে তদন্ত করেছে: প্রথমটিতে দেখা হয়েছে মিলা বিদ্বেষমূলক বক্তব্য দেয়ার জন্য দায়ী কি-না; অপর তদন্তটির বিষয় হচ্ছে, তাকে অনলাইনে যেসব আক্রমণ করা হয়েছে, সেটি নিয়ে।
টিএমসি চ্যানেলের অনুষ্ঠান কোটিডিয়েন-এ উপস্থিত হয়ে মিলা সেইসব মানুষের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, যারা ‘শান্তিপূর্ণভাবে’ তাদের ধর্ম পালন করে, এবং তার বক্তব্যের ‘অশালীনতার’ জন্য দুঃখপ্রকাশ করে। কিন্তু একইসাথে সে তার বক্তব্যের পক্ষে অবস্থান নেয়। সাক্ষাৎকারে সে বলে, আমি যা বলেছি তা নিয়ে আমার কোনো অনুশোচনা নেই। এটা একেবারেই আমার নিজস্ব চিন্তা। মিলা জানায়, এই বিতর্কের কারণে তার জীবন ‘কার্যত থমকে আছে’।
তাকে ‘এসিডে ঝলসে দেওয়ার, আঘাত করার এবং জনসমক্ষে নগ্ন করার কিংবা জীবন্ত কবর দেবার’ হুমকি দেয়া হয়েছে। এসব হুমকির কারণে তাকে স্কুল ছাড়তে হয়েছে। সোমবার ফ্রান্সের শিক্ষামন্ত্রী জাঁ মিশেল ব্লঙ্কে বলেন, কর্তৃপক্ষ তাকে শান্তিপূর্ণভাবে স্কুল ফিরিয়ে নেওয়া চেষ্টায় আছে, যাতে সে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারে।
মিলা গত ১৮ জানুয়ারি তার ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্টে একটি সরাসরি সম্প্রচার করার পর বিতর্কের শুরু। সেখানে সে তার সেক্সুয়ালিটি নিয়ে কথা বলার পর একজন মুসলিম কমেন্টদাতা মিলাকে ‘ডার্টি লেসবিয়ান’ হিসেবে অভিহিত করেন। জবাবে মিলা একটি পোস্ট দেয়, যেখানে সে ইসলাম সম্পর্কে কড়া বক্তব্য সম্বলিত কথাবার্তা লেখে।
সমালোচকদের চোখে, মিলার বক্তব্য ছিল আক্রমণাত্মক। এরপর কেউ কেউ তাকে হত্যার হুমকি দেয়। অন্যরা মিলার ব্যক্তিগত তথ্য অনলাইনে প্রকাশ করে দেয়। ফ্রেঞ্চ কাউন্সিল অব দ্য মুসলিম ফেইথের প্রধান মোহাম্মদ মুসাবির বক্তব্য, যতো মারাত্মক বক্তব্যই একজন মানুষ দিয়ে থাকুক না কেন, তাতে কোনোভাবেই হত্যার হুমকি দেওয়া জায়েজ হয় না।
মিলার একদল সমর্থকগোষ্ঠিও দাঁড়িয়ে গেছে, যারা একটি হ্যাশট্যাগ চালু করেছে, যা রীতিমত ট্রেন্ডিং হয়েছে ফ্রান্সজুড়ে।
ফরাসী বিচারমন্ত্রী নিকোল বেলুবে বলেন, কিশোরীকে হত্যার হুমকি একেবারেই অগ্রহণযোগ্য। অবশ্য মিজ বেলুবে এও বলেন, কোনো ধর্মের ওপর আঘাত দেওয়ার অর্থ বিবেকের স্বাধীনতার ওপর আঘাত দেওয়ার শামিল।
Mila est notre invitée dans #Quotidien pour sa seule et unique interview. pic.twitter.com/cZ1VqObHrR
— Quotidien (@Qofficiel) February 3, 2020
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।