জুমবাংলা ডেস্ক : পটুয়াখালী সদর উপজেলার ইটবাড়িয়া ইউনিয়নের বাসিন্দা ফুলবরু বিবি। ১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকহানাদার বাহিনীর হাতে নি’র্যাতিত হন তিনি। সম্ভ্রমহানি হয় তার। স্বামী-সন্তান-সংসার কিছুই নেই তার। মাথা গোঁজার ঠাইটুকুও ছিলো না এতোদিন।
স্বাধীনতার এতো পার হয়ে গেলেও কেউ খোঁজ নেয়নি এই বীরঙ্গনার। অবশেষে তার খোঁজ নিয়েছেন বর্তমানে পটুয়াখালী সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হিসেবে কর্মরত মো. মোস্তাফিজুর রহমান।
ফুলবরু বিবির জন্য কিছু করতে এই পুলিশ কর্মকর্তা নিজেই ছুটে গেছেন উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে। কিছু বরাদ্দ পাইয়ে দিয়েছেন ফুলবরুকে। তার সঙ্গে নিজের বেতনের টাকা যোগ করে তৈরী করে দিয়েছেন একখানা ঘর। অবশেষে মাথা গোঁজার ঠাঁই পেয়েছেন এই বীরাঙ্গনা।
জানা গেছে, ফুলবরু বিবি জমিজমা সংক্রান্ত অভিযোগ দিতে সরাসরি সদর থানার ওসি মোস্তাফিজুর রহমানের কাছে আসেন। এ সময় ফুলবরু বিবির সঙ্গে অভিযোগ নিয়ে কথাবার্তা হয় ওসি মোস্তাফিজুর রহমানের। একপর্যায় তিনি জানতে পারেন অভিযোগকারী একজন ৭১-এর বীরাঙ্গনা।
ওসি মোস্তাফিজুর রহমান জমিজমা সংক্রান্ত অভিযোগটি নিষ্পত্তির জন্য সরজমিনে ইটবাড়িয়া ফুলবরু বিবির বাড়িতে যান। সেখানে গিয়ে ফুলবরু বিবির ঘরটি জরাজীর্ণ দেখে তিনি আপ্লুত হয়ে পড়েন। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মনে মনেই বলতে থাকেন, যাদের ত্যাগের বিনিময় দেশ স্বাধীন হয়েছে এবং স্বাধীনতার বদৌলতে আমরা ওসি পদে চাকুরি করতে পারছি …।
ওসি তাৎক্ষণিকভাবে ফুলবরু বিবিকে স্যালুট দেন। তাকে একটি ঘর বানিয়ে দেয়ারও আশ্বাস দেন। এ প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেন ওসি মোস্তাফিজুর রহমান নিজেই। কালক্ষেপণ না করে ছুটে যান সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার লতিফা জান্নাতির কাছে। তাকে মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে ফুলবরু বিবির ত্যাগের কথা বলেন।
ফুলবরু বিবির কথা শুনে সদর ইউএনও লতিফা জান্নাতিও আবেগ-আপ্লুত হয়ে দুই বান্ডিল টিন ও নগদ ৮ হাজার টাকা বরাদ্ধ দেন। এ বরাদ্দের সঙ্গে ওসি তার নিজের বেতনের অর্ধেক টাকা যোগ করে ফুলবরুর জন্য ঘর বানিয়ে দেন। গত শনিবার সকালে এলাকার লোকজনের উপস্থিতিতে ফুলবরু বিবিকে ঘরের চাবি হস্তান্তর করেন ওসি মো. মোস্তাফিজুর রহমান।
ওসি মোস্তাফিজুর রহমান জানান, মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো থেকেই বীরঙ্গনা নারীর প্রতি আমার এই সম্মান। একজন ত্যাগী নারী- যিনি দেশের স্বাধীনতার জন্য তার সর্বোচ্চ ত্যাগ করেছেন। তার জীবনে কোন সুখ-শান্তি, স্বামী-সন্তান নেই। কষ্টে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, সদর ইউএনও’র সহযোগিতায় আমার সাধ্যের মধ্যে বীরঙ্গনাকে ছোট একটি ঘর বানিয়ে দিতে পেরে তৃপ্তি অনুভব করছি।
ফুলবরু তার অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে বলেন, যুদ্ধের সময় রাজাকারদের কারণে পাকিস্তানিদের হাতে নি’র্যাতিত হয়েছি। খুব কষ্টে আছি। ওসি স্যার আমাকে ঘর বানিয়ে দিয়েছে, আমার কষ্ট ও দুঃখ নেই- এ কথা বলেই কেঁদে ফেলেন এই বীরঙ্গনা।
জানা গেছে, বীরঙ্গনা ফুলবরু এখনও মুক্তিযোদ্ধা হিসাবে স্বীকৃতি পাননি। পাননি রাষ্ট্রীয় কোন সুযোগ-সুবিধা। নিঃসন্তান বীরঙ্গনা স্বামীর ভিটা আঁকড়ে কোন রকম বেঁচে আছেন। পটুয়াখালী শহর থেকে পশ্চিমে ৪ কিলোমিটার দূরে ইটবাড়িয়া ইউনিয়ন।
১৯৭১ সালের ২রা মে দুপুর ১২টার সময় ৩০-৩৫ জন পাকহানাদার বাহিনী গানবোটে কচা নদী দিয়ে পায়রা নদী অভিমুখে যাচ্ছিলো। এলাকার রাজাকারদের ইশারায় হানাদারদের গানবোট নদী সংলগ্ন ইটবাড়িয়া বোর্ড স্কুলের পাড়ে ভেড়ে। হানাদার বাহিনী রাজাকারদের সহযোগিতায় প্রথমে কাজী বাড়ি ও মোল্লা বাড়িতে হামলা করে বৃষ্টির মতো গুলি করে বাড়িঘর ধ্বংস করে। এ সময় পালাতে গেলে পাক-হানাদারদের কাছে ধরাপড়েন ফুলবরুসহ কয়েকজন। পরে রাজাকারদের সহায়তায় তাদেরকে ১০দিন সার্কিট হাউজের একটি কক্ষে আটকে রেখে দিনে-রাতে নিপীড়ন, নি’র্যাতন চালায় পাকহানাদার বাহিনী।
নি’র্যাতনের একপর্যায় অজ্ঞান হয়ে পড়লে তাদেরকে কচাবুনিয়া নদীর তীরে ফেলে রেখে যায় রাজাকাররা। পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে তাদেরকে ডাক্তার দেখায়। ফুরবরুর সংসার হলেও তিনি মা হতে পারেন নি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।