লাইফস্টাইল ডেস্ক: বাংলাদেশে এখন কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন সফলভাবে রোল করা হচ্ছে। শুরুর দিককার সংশয়গুলো কাটিয়ে মানুষ এখন আগ্রহ নিয়ে রেজিস্ট্রেশন করছে, টিকা নিচ্ছে। এমনি পরিস্থিতিতে অনেকেরই প্রশ্ন, তারা টিকা নিতে পারবেন কি না, কারণ অনেকেই ভুগছেন অনেক রকম রোগে। আমরা যারা লিভার বিশেষজ্ঞ, আমাদের হরহামেশাই রোগীদের কাছ থেকে এমন সব প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। সে কারণেই এই লেখাটির অবতারণা, যাতে আমাদের লিভারের রোগীরা কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন নেয়ার আগে কোনো রকম সংশয়ে না ভোগেন।
অতি সম্প্রতি এশিয়ান প্যাসিফিক অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য স্টাডি অব দ্য লিভারের কোভিড টাস্কফোর্সের উদ্যোগে একটি বৈজ্ঞানিক নিবন্ধ হেপাটোলজি ইন্টারন্যাশনাল নামে একটি স্বনামধন্য বৈজ্ঞানিক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। আর এ মাসেই আমেরিকান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য স্টাডি অব লিভার ডিজিজেজ প্রকাশ করেছে লিভার রোগীদের জন্য কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন-সংক্রান্ত তাদের কনসেনসাস স্টেটমেন্ট। ইউরোপিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য স্টাডি অব দ্য লিভারও প্রকাশ করেছে তাদের কোভিড-১৯-সংক্রান্ত পজিশন পেপার।
বিএসএমএমইউ হেপাটোলজি অ্যালামনাই অ্যাসোসিয়েশন ও ফোরাম ফর দ্য স্টাডি অব দ্য লিভার বাংলাদেশের পক্ষ থেকে দেশের লিভার রোগীদের ভ্যাকসিন নেয়ার সুবিধার্থে এই পরামর্শমূলক প্রবন্ধটি লেখার সময় আমরা এই প্রতিটি প্রকাশনা গভীরভাবে পর্যালোচনা করেছি।
বাংলাদেশে এখন কোভিড-১৯-এর যে ভ্যাকসিনটি ব্যবহার করা হচ্ছে, তার নাম কোভিশিল্ড। এটি একটি এডিনোভাইরাস ভেক্টর ভ্যাকসিন, অর্থাৎ এতে আছে শিম্পাঞ্জির একধরনের এডিনোভাইরাস, যা না শিম্পাঞ্জি না মানুষের শরীরে কোনো ইনফেকশন করতে পারে। কাজেই এটি মানুষের জন্য শতভাগ নিরাপদ। কোভিশিল্ড খুব কার্যকরভাবে এমনকি লিভার সিরোসিসে আক্রান্ত রোগীর দেহেও ‘সার্স-কোভ-২’-এর বিরুদ্ধে প্রতিরোধক এন্টিবডি তৈনি করে। মনে রাখতে হবে, কোভিশিল্ডের আসল সার্স-কোভ-২ ভাইরাসটির নামগন্ধও নেই। কাজেই কোভিশিল্ড নিয়ে কারো সার্স-কোভ-২’তে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও নেই।
আমরা জানি যে সার্স-কোভ-২ ভাইরাসটির মিউটেশন হচ্ছে। মিউটেশন আসলে যেকোনো ভাইরাসেরই ধর্ম আর সার্স-কোভ-২-ও এর কোনো ব্যতিক্রম নয়। তবে মাথায় রাখতে হবে, ভবিষ্যতে ভাইরাসটির মিউটেশন হবে এই আশঙ্কায় এখন কোভিশিল্ড না নেয়ার কোনো যুক্তি থাকতে পারে না।
প্রথম ডোজটি নেয়ার চার থেকে বারো সপ্তাহের মধ্যে কোভিশিল্ডের দ্বিতীয় ডোজটি নিতে হয়। একেক দেশ একেকভাবে কোভিশিল্ডের দ্বিতীয় ডোজের সময় নির্ধারণ করেছে। বাংলাদেশের জন্য এখন তা আট সপ্তাহ। যারা একবার কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হয়েছেন, তারাও কোভিড-১৯ নেগেটিভ হওয়ার এক মাস পরই কোভিশিল্ড নিতে পারবেন।
কোভিশিল্ড নেয়ার পর ইনজেকশন নেয়ার জায়গাটিতে ব্যথা হতে পারে, তবে এই ব্যথা ১ শতাংশের চেয়ে কম মানুষের ক্ষেত্রে তীব্র হয়ে থাকে। ভ্যাকসিন নেয়ার পর হালকা জ্বর, গায়ে ব্যথা কিংবা মাথাব্যথা হতে পারে। সাধারণত অল্প বয়সীদের ক্ষেত্রে এসব সমস্যা বয়স্কদের চেয়ে বেশি দেখা যায়। কোভিশিল্ড নেয়ার পর কাশি বা স্বাসকষ্ট হয় না বললেই চলে।
কোন লিভার রোগীদের কোভিড-১৯ ভ্যাকসিন নেয়া জরুরি