আন্তর্জাতিক ডেস্ক : গতকাল রাত পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের মধ্যে সনাক্ত হয়েছেন ১০ লাখ ৭৪ হাজার ৭২৮ জন। মৃত্যু হয়েছে অন্তত ৫৮ হাজার ১১০ জনের। সুস্থ হয়েছেন ২ লাখ ২৭ হাজার ৬৬৮ জন। এদিন স্পেনে আরো ৯৩২ জন আদম সন্তানের প্রাণহানির পর দেশটিতে মৃতের সংখ্যা ১০ হাজার ৯৩৫ এবং শনাক্ত আরো ৫ হাজার ৬৪৫ জন বেড়ে ১ লাখ ১৭ হাজার ৭১০ জনে দাঁড়িয়েছে। তবে গতকাল রাত ১১টার দিকে এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নতুন ৫৯ হাজার ১৮৮ জনের করোনা শনাক্ত হলেও ইউরোপের মৃত্যুপুরীখ্যাত স্পেন, ইতালিতে শনাক্তের হার কমে এসেছে। তবে বাড়ছে যুক্তরাজ্য, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, হল্যান্ড, ডেনমার্ক, সুইডেনের মতো দেশগুলোতে। গতকাল বেশি সংখ্যক মৃত্যু ঘটনা ঘটেছে- যুক্তরাজ্যে ৬৮৪ (মোট ৩,৬০৫), ইতালিতে ৭৬৬ (১৪,৬৮১), মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ৭১৬ (৬,৭৮৬), হল্যান্ডে ১৪৮ (১,৪৮৭), ইরানে ১৩৪ (৩,২৯৪), বেলজিয়ামে ১৩২ (১,১৪৩), জার্মানিতে ১২৩ (১,২৩০), তুরস্কে ৬৯ (৪২৫), সুইডেনে ৫০ (৩৫৮), পর্তুগাল ৩৭ (২৪৬), সুইজারল্যান্ডে ৫৫ (৫৯১), করে এবং ফিলিপাইনে ২৯ জন।
এদিকে এই মহামারী মোকাবিলায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, বরিস জনসনের মতো বিশ্ব নেতারা তাদের ধীর এবং অকার্যকর প্রতিক্রিয়ার জন্য সমালোচনার মুখোমুখি হয়েছেন। কিন্তু তাইওয়ান, সিঙ্গাপুর, এবং দক্ষিণ কোরিয়ার মতো দেশগুলোতে সংক্রমণের হার নিয়ন্ত্রণে সফল হয়েছে। কীভাবে তারা এই সাফল্য পেয়েছে?
তাইওয়ান: করোনার উৎপত্তিস্থল চীনের খুব কাছাকাছি হলেও তাইওয়ানে গতকাল পর্যন্ত মাত্র ৩৪৮ জন আক্রান্ত হয়েছেন। আর মারা গেছেন মাত্র ৫ জন। শুধু তাই নয়, সেখানে জীবনযাত্রা একেবারেই স্বাভাবিক। শুধু গণপরিবহনে চলাচলের সময় লোকজনকে মাস্ক পরতে হচ্ছে। হংকংয়ের মতো তাইওয়ানও ২০০৩ সালে সার্স ভাইরাসের সঙ্গে লড়াইয়ের শিক্ষা কাজে লাগিয়েছে করোনার প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে। প্রমাণ করেছে চাইলেই এমন মহামারী ঠেকিয়ে দেওয়া যায়।
চীনের খুব কাছে থাকায় ২ কোটি ৩০ লাখ জনসংখ্যার দেশ তাইওয়ানকে ‘দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ’ অঞ্চল হিসেবে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছিল। এখানকার সাড়ে ৮ লাখ মানুষ চীনের মূল ভ‚খন্ডে কাজ করেন। কিন্তু নানা উদ্যোগ ভাইরাস মোকাবিলায় তাদের সাফল্য এনে দেয়। প্রাথমিক স্তরের ভ্রমণের বিধিনিষেধ, আগ্রাসী পরীক্ষা, করোনাভাইরাস রোগীর সংস্পর্শে আসা ব্যক্তিদের শনাক্ত করা এবং কঠোর কোয়ারেন্টাইন বা পৃথকীকরণ বিধিমালা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সর্বজনীন স্বাস্থ্যসেবা, জনস্বাস্থ্যের প্রতিক্রিয়ার জন্য পরিষ্কার ব্যবস্থাপনার কাঠামো এবং জনগণকে সম্পৃক্ত করতে সক্রিয় যোগাযোগও সাহায্য করতে পারে। স্বাস্থ্য খাতের বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, তাইওয়ান মহামারী মোকাবিলায় পশ্চিমাসহ সব আক্রান্ত দেশের জন্য আরও ভালো মডেল হতে পারে।
দক্ষিণ কোরিয়া : সারা বিশ্বের মতো দক্ষিণ কোরিয়ায়ও ভয়ঙ্করভাবে ছড়িয়ে পড়ে করোনাভাইরাস। দেশটিতে গতকাল পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ১০ হাজার ৬২ জন। আর মারা গেছেন ১৭৪ জন। গত মাসে হঠাৎ করেই ব্যাপকহারে করোনার সংক্রমণ শুরু হয় দেশটিতে। দিনে ছয়-সাতশ মানুষও আক্রান্ত হয়েছে সেখানে। কিন্তু কয়েকদিনের ব্যবধানেই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছে তারা। শহর বা দেশ অবরুদ্ধ করে নয়, এর বদলে কোরীয় কর্তৃপক্ষ ভাইরাস আক্রান্ত বা সন্দেহজনক ব্যক্তিদের বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টাইনে থাকার নিয়ম করেছে। এ ছাড়া জনগণকে যথাসম্ভব ভিড় এড়িয়ে চলা, অনুষ্ঠান পরিহার, মাস্ক পরিধান এবং পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখতে পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। বিমান যোগাযোগ বন্ধ না করে সিউল যাত্রীদের জন্য বিমানবন্দরে বিশেষ ব্যবস্থা চালু করেছে। সেখানে যাত্রীদের শারীরিক তাপমাত্রা পরীক্ষা, খুঁটিনাটি ভ্রমণ তথ্য, স্বাস্থ্য সম্পর্কিত বিস্তারিত প্রশ্নের উত্তর দিতে হচ্ছে।
গত জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত অন্তত আড়াই লাখ মানুষের শারীরিক পরীক্ষা করেছেন দক্ষিণ কোরিয়ার স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা। দেশটিতে প্রতিদিন অন্তত ১৫ হাজার মানুষের করোনা টেস্ট করা হচ্ছে। সন্দেহভাজন করোনা রোগীদের মেডিকেল টেস্ট সম্পূর্ণ ফ্রি করে দিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়া। চিকিৎসকরা রেফার্ড করলে সন্দেহভাজন রোগীরা বিনামূল্যেই টেস্ট করাতে পারছেন। দেশটির শতাধিক হাসপাতাল-ক্লিনিকের পাশাপাশি করোনাভাইরাস টেস্টে প্রায় অর্ধশত ভ্রাম্যমাণ ল্যাবরেটরিও কাজ করছে। নাগরিকদের সংগৃহীত তথ্য ব্যবহার করে সহজেই ভাইরাস সংক্রমণের উৎস নির্ধারণ, আক্রান্ত বা সন্দেহভাজনদের চিকিৎসা ও কোয়ারেন্টাইনে রাখার ব্যবস্থা করছে দক্ষিণ কোরিয়া কর্তৃপক্ষ। এসব তথ্য ব্যবহার করেই করোনা সংক্রমণের হার আশ্চর্যজনকভাবে কমিয়ে এনেছে দক্ষিণ কোরিয়া। সেখানে মৃত্যুহারও অন্যান্য দেশের চেয়ে অনেক কম, মাত্র ০.৮ শতাংশ।
সুইডেন : পুরো ইউরোপ জুড়ে, অনেক দেশেই লকডাউন চলছে। তবে সুইডেনে নয়, যা উচ্চ ঝুঁকির প্রাদুর্ভাবের মধ্যেও মোটামুটি স্বাভাবিক আছে। দেশটিতে গতকাল পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৬ হাজার ১২২ জন। আর মারা গেছেন ৩৫১ জন। স্টকহোম থেকে নাথালি রথসচাইল্ড জানিয়েছেন, সরকার দেশের জনগণের উপরে আস্থা রেখেছে। তারা কোন আদেশ ছাড়াই দায়িত্বশীলতার সাথে কাজ করবে। এখানে একটি প্রত্যাশা রয়েছে যে, নাগরিকরা নিয়ম মেনে চলবে, তারা ব্যক্তিগত দায়বদ্ধতা নেবে এবং ভিড় এড়িয়ে চলবে, বাড়ি থেকে কাজ করবে, গণপরিবহণে একটি দূরত্ব বজায় রাখবে।
রাশিয়া : আক্রান্তের হার আর মৃত্যুহার দেখলেই বোঝা যাবে অন্যরকমভাবে করোনা নিয়ন্ত্রণে সফল হয়েছে রাশিয়া। প্রশ্ন হচ্ছে রাশিয়ায় করোনাভাইরাসে আক্রান্ত কম কেন? সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী দেশটিতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা ৪ হাজার ১৪৯ জন। মারা গেছেন ৩৪ জন। রাশিয়া ৩০ জানুয়ারির মধ্যে সীমান্ত বন্ধ করে দেয়। আর এর সঙ্গে সঙ্গেই অনেকগুলো এলাকা কোয়ারেন্টাইন করে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে- পরীক্ষা, পরীক্ষা এবং পরীক্ষাই করোনাভাইরাস প্রতিরোধের বড় উপায়। আর রাশিয়া এই পরীক্ষার ব্যবস্থা করেছে জানুয়ারির শেষ দিক থেকেই। রাশিয়ায় এখন ১ লাখ ৫৬ হাজার কিট আছে করোনাভাইরাস পরীক্ষার জন্য। তবে রাশিয়া যে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলছে, তা নিয়ে অবশ্য নানা সমালোচনাও আছে। সূত্র : ফরেন পলিসি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।