মহিউদ্দিন, ঢাকা কলেজ প্রতিনিধি: পুকুরের উপর দিয়ে এক ঝাঁক কাক গিয়ে কৃষ্ণচূড়া ডালে, আরেক ঝাঁক পাতাঝরা কড়ুই গাছে বসে আছে, আবার আরেক ঝাঁক মাঠে সভা করছে। এমনটা যেন নিত্য নিয়মিত ঘটনা ঢাকা কলেজ ক্যাম্পাসে। সব মিলিয়ে যেন কাকের এক অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে ক্যাম্পাসটি। পাখিটির কা-কা ডাকে সবসময় মুখরিত থাকে পুরো ঢাকা কলেজ ক্যাম্পাস।
ছোটবেলার সেই কাক আর কবিময় ঢাকা শহরে কবির সংখ্যা দিনদিন বৃদ্ধি পেলেও কাকের সংখ্যা অনেকটা কমে গেছে। রাজধানী ঢাকার পাখি বলতেই সবার আগে চোখের সামনে ভেসে ওঠবে কাকের চেহারা। কিন্তু এ শহরের মানুষ বলছে, ‘শহরে কমে এসেছে এই পাখির সংখ্যা।’
কাকের এ সংখ্যা কমার পিছনে শহুরে জীবনযাত্রা বদলানোকেই দায়ী করছেন পরিবেশকর্মীরা। তারা বলছেন, কাক মূলত বাসা বাধে বাড়ি লাগোয়া গাছে। খাবার বলতে মানুষের উচ্ছিষ্ট এবং ছোটখাটো প্রাণী। শহরাঞ্চলে গাছ অনেকটাই কমে গেছে। খোলা ডাস্টবিন বন্ধ হওয়ায় পথেঘাটে উচ্ছিষ্টও সেভাবে মেলে না। তার ফলেই সবচেয়ে পরিচিত এই পাখিটির সংখ্যা কমছে।
কাকের ভয়ে গ্রামে সাবান আগলে রাখা হতো৷ শুধু কী সাবান, শুটকি, আঁচার, নিত্যদিনকার সংসারের জিনিস পাখিটির নজর থেকে আড়ালে রাখার সে কী প্রাণান্ত চেষ্টা ছিল মানুষের। এখন ঢাকা শহরের মতো গ্রামেও তেমন করে এই পাখির মিছিল চোখে পড়ে না৷ তবে ঢাকা কলেজ ক্যাম্পাসে এলে ভিন্ন দৃশ্য দেখা যায়। পুরো ক্যাম্পাস যেন কাকের রাজত্ব।
কাক নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে দক্ষিণ ছাত্রাবাসের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র রাকিবুল জুমবাংলাকে বলেন, ‘ছোটবেলার একটা স্মৃতি ভীষণ নাড়া দেয় এখনো। বিদেশ ফেরত আত্মীয়ের দেওয়া দামি সাবান পুকুরের পাড়ে রেখে বন্ধুদের সাথে পুকুরে ঝাপ। এরপর গায়ে মাখার জন্য সাবান নিতে গেলে দেখা যায় সাবান উধাও। গাছে চলছে কাকের মধ্যে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই। বুঝতে আর বাকি নেই, ইহা কাকের কাজ। সেদিন মায়ের হাতে বকাঝকার ভয়ে রাতে বাড়িতে ফিরেছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘গতকালও ছাত্রবাস থেকে আমার সাবানটা কাকে নিয়ে গেলে ছোটবেলার স্মৃতি মনে পড়ে যায়।’
আরেক আবাসিক শিক্ষার্থী আল-আমিন বলেন, ‘ আমাদের ক্যাম্পাস এখন কাকের অভয়ারণ্য। ক্যাম্পাসের গাছের নিচ দিয়ে আসা-যাওয়া ও দাঁড়ানো নিয়ে আতংকে থাকা লাগে সবসময়। কখন যে মাথায়…। সারাদিন কা-কা শব্দে ক্যাম্পাস মাতিয়ে রাখে পাখিটি। যার কারণে অন্য পাখির আওয়াজ শোনা যায় না তেমন।’
কাক বাংলাদেশে সবচেয়ে পরিচিত একটি পাখি। অন্যসব পাখির মতো সুন্দর না হলেও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় সবচেয়ে বেশি ভূমিকা রাখে এই পাখিটি। কাক পরিবেশের অবাঞ্ছিত অনেক জিনিসই খাদ্য হিসেবে গ্রহণ করে। যেগুলো পরিবেশে উচ্ছিষ্ট হিসেবে মানুষ ফেলে দেয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।