কোয়াশিওরকর: পানি জমা থেকে মস্তিষ্ক বিকাশের প্রতিবন্ধকতা

কোয়াশিওরকর

শিশু যখন দীর্ঘসময় প্রোটিন চাহিদা পূরণ করতে পারে না এবং চাহিদা প্রোটিনের বিপরীতে শর্করা জাতীয় খাবারের মাধ্যমে সুষম খাদ্যের ঘাটতি পূরণ করে, তখন শিশুর শরীরে কোয়াশিওরকরের লক্ষণ দেখা দেয়। কোয়াশিওরকরের প্রধান ও প্রাথমিক লক্ষণ হিসাবে শরীরে পানি জমে। সাধারণত পা ও মুখে বেশি পানি জমতে দেখা যায়। আরও ভালোভাবে বললে, শরীরের নরম অংশ যেমন পা, মুখ, হাত ও পেট ফুলে যায়। ফুলে যাওয়া অংশে চাপ দিলে গর্তের মতো দাগ হয়, যাকে ‘পিটিং ইডিমা’ বলে।

কোয়াশিওরকর

হাইপোঅ্যালবুমিনেমিয়ার কারণে রক্তে অ্যালবুমিন নামে প্রোটিন কমে যায় এবং কোয়াশিওরকর ইডিমা শুরু হয়। অ্যালবুমিন রক্তে পানি ধরে রাখে এবং এর অভাব দেখা দিলে রক্তনালী থেকে তরল বের হয়ে ত্বকের নিচে জমা হয়। এছাড়া ত্বক শুষ্ক ও রুক্ষ হয়ে যায়। অনেক সময় ত্বক লালচে হয়ে ফেটে যেতে পারে।  চুল শুষ্ক ও ভঙ্গুর হতে পারে। চুলের রং বদলে যায় অনেকের। শিশু ক্ষুধামন্দায় ভোগে এবং শারীরিক কার্যক্রমে আগ্রহ হারায়।

দীর্ঘদিন শিশুর এই রোগ থাকলে মস্তিষ্কের বিকাশে বিরূপ প্রভাব ফেলতে পারে। ইমিউন সিস্টেমও দুর্বল হয়ে যায়। ফলে শিশুরা সহজেই বিভিন্ন সংক্রমণের শিকার হয়। দীর্ঘস্থায়ী কোয়াশিওরকর শিশুর শারীরিক ও মানসিক বিকাশে স্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে।

সময় মতো এ রোগের চিকিৎসা না করলে তা প্রাণঘাতী হতে পারে। তবে এটি প্রতিরোধযোগ্য রোগ। সঠিক পুষ্টি, স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করলে এ রোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। বাংলাদেশের মতো দেশে দরিদ্র মানুষের জন্য সুষম খাদ্য নিশ্চিত করা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তবে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ এবং কমিউনিটি পর্যায়ে সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান সম্ভব।

কোয়াশিওরকর প্রতিরোধে এবং শিশুর পুষ্টি নিশ্চিত করতে সরকার ও বিভিন্ন এনজিও বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। ১৯৯৫ সালে বাংলাদেশ সমন্বিত পুষ্টি প্রকল্প (BINP) শুরু হয়, যা কমিউনিটি পর্যায়ে পুষ্টি সেবা ও পরামর্শ প্রদান, শিশুর বিকাশ তত্ত্বাবধান এবং অপুষ্টির শিকার শিশু ও মায়েদের বাড়তি খাবার সরবরাহের মাধ্যমে লাখ লাখ পরিবারকে সহায়তা করেছে।

সঠিক পুষ্টি নিশ্চিত করে এবং স্বাস্থ্যসেবার মাধ্যমে শিশুদের এই রোগের ঝুঁকি থেকে বাঁচানো সম্ভব। তারপরেও যদি কোনো শিশুর মধ্যে এ রোগের লক্ষণ দেখা যায়, তাহলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।