আসামি না হয়েও একটি খুনের মামলায় জেল খাটছেন চাঁদপুরের কচুয়ার যুবক আবু ইউসুফ লিমন। ২০২০ সালে ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন নিয়ে ঢাকায় এসেছিলেন কচুয়া উপজেলার আবু ইউসুফ ওরফে লিমন (২১)।
মিরপুরের সিটি ক্লাব মাঠে প্রশিক্ষণ নিতেন তিনি। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বরে নিখোঁজ হন তিনি। খোঁজ না পেয়ে গত ২০২১ সালের ১৪ জানুয়ারি কচুয়া থানায় ডায়েরি করেন তার বাবা। কিছুদিন পর জানতে পারেন একটি হত্যা মামলায় তার ছেলে লিমন কাশিমপুর কারাগারে জেল খাটছেন।
লিমনের বাবা নুরুজ্জামান জানান, গত বছর রবিউল ইসলাম আপন নামের এক ব্যক্তি আমার নাম্বারে ফোন দিয়ে বলেন- আপনার ছেলে বিকেএসপিতে আছে। আপনারা চিন্তা করবেন না, আপনার ছেলে ডিসেম্বরের মধ্যে বাড়িতে চলে আসবে।
কিছুদিন পর ছেলে কারাগারে থাকার খবর পেয়ে তার সঙ্গে কাশিমপুর কারাগারে দেখা করি। তার কাছ থেকে জানতে পারি- আমার ছেলেকে হত্যার হুমকি ও টাকার লোভ দেখিয়ে কোর্টে পাঠায় রবিউল ইসলাম ওরফে আপন।
আদালতে আমার ছেলে নিজেকে রবিউল হিসেবে পরিচয় দেয়। এরপর আদালত তাকে কারাগারে পাঠান। ছেলের মুক্তি চেয়ে ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে আবেদন করি। আদালত আবেদনটি আমলে নিয়ে গত ২ মার্চ ডিবি পুলিশকে তদন্ত করার দায়িত্ব দেন।
বিষয়টি তদন্ত করে ডিবি পুলিশ গত ২ মে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করে। ওই প্রতিবেদনে ঘটনার সত্যতা মিলেছে। তদন্তে বেরিয়ে আসে বদলি সাজা খাটার চাঞ্চল্যকর এ তথ্য।
ইমরান খান হত্যা মামলার ৬ নম্বর আসামি শেখ হৃদয় ওরফে রবিউল ইসলামের স্থলে লিমনকে তার পরিচয় দিয়ে আদালতে আত্মসমর্পণ করায়।
এ অবস্থায় রবিউলের আইনজীবীকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতের অনুমতি চেয়ে আবেদন করেছে পুলিশ। এ আবেদনের ওপর আগামী ২ জুন ঢাকার ১ নম্বর অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে আদেশের জন্য দিন ধার্য রয়েছে।
মামলা সূত্রে জানা যায়, আসামি রবিউল ইসলাম গোপালগঞ্জ জেলার কোটালিপাড়া উপজেলার আসুতিয়া গ্রামের মতিউর রহমান মোল্লার ছেলে। নারীদের টোপ হিসেবে ব্যবহার করে বিত্তশালীদের ফাঁদে ফেলে অর্থ হাতিয়ে নিত রবিউল ও তার সহযোগীরা।
তাদের কবলে পড়েন সিআইডি পুলিশের এসআই মো. মামুন ইমরান খান। এরপর তাকে ধরে নিয়ে হত্যার পর পেট্রল ঢেলে লাশ পুড়িয়ে গাজীপুর বনে ফেলে দেয় হত্যাকারীরা।
এ ঘটনায় নিহত এসআইয়ের ভাই বাদী হয়ে ঢাকার বনানী থানায় ২০১৮ সালের ১০ জুলাই মামলা করেন। এই মামলায় ২০১৯ সালের ৩১ মার্চ অভিযোগপত্র দাখিল করে পুলিশ। এরপর ঢাকার ১ নম্বর অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা জজ আদালতে বিচার শুরু হয় মামলার। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজনের সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে।
একই মামলার ৬ নম্বর আসামি হলেন রবিউল ইসলাম ওরফে আপন, সোহাগ, হৃদয়। তিনি পলাতক রয়েছেন। কিন্তু তার পরিবর্তে চাঁদপুরের কচুয়ার এক দরিদ্র পরিবারের সন্তান লিমন গত ২০ অক্টোবর ঢাকার আদালতে আত্মসমর্পণ করেন। রবিউলের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা ছাড়াও রাজধানীর বিভিন্ন থানায় তিনটি মামলা রয়েছে। সেসব মামলাও বর্তমানে বিচারাধীন।
লিমনের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শামীম সরদার জানান, লিমনের বাড়ি চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার আইনপুর গ্রামে। তার বাবার নাম মো. নুরুজ্জামান। এক ভাই এক বোনের মধ্যে সে বড়। পিতা নুরুজ্জামান কচুয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী। ছোটবেলা থেকেই তার ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন ছিল।
সেই সূত্র ধরেই ইউসুফ রাজধানীর মিরপুর-২ নম্বর সেকশনে এক মেসে ভাড়া থাকতেন। ছোটখাটো কাজ করে যা আয় করতেন তা দিয়ে সিটি ক্লাবে কোচ সবুজের অধীনে ক্রিকেট খেলা শিখতেন। সেখান থেকে আসামি রবিউলের সঙ্গে পরিচয় ঘটে লিমনের। লিমন আসামি রবিউল ইসলামের জায়গায় আত্মসমর্পণ করেছে। তাকে তারা রবিউলের জায়গায় না গেলে নিহত পুলিশ কর্মকর্তার মতো হত্যা করে পেট্রল ঢেলে আগুন লাগিয়ে দেবে- এমন ভয়ভীতি দেখিয়ে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য করায় বলে জানান আইনজীবী।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।