শীতকালে খাবার খেয়ে ওঠার পর অনেকেরই তীব্র শীত লাগে। গরমকালে আবার তাঁদের এমনটা হয় না। এটা কি স্বাভাবিক শরীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়া? নাকি ডাক্তারের কাছে যাওয়ার প্রয়োজন শিগগিরই? আমরা যে খাবার মুখে চিবিয়ে খাই, তা থেকে আমাদের দেহ সরাসরি পুষ্টি গ্রহণ করতে পারে না। পাকস্থলীতে খাবার পৌঁছানোর পর শুরু হয় বিপুল কর্মযজ্ঞ। পাকস্থলী অ্যাসিডিক তরল নিঃসরণ করে, পাকস্থলীর দেহ দুমড়ে মুচড়ে খাবারকে একদম পেস্টে পরিণত করতে থাকে।
এরপর খাবার থেকে পুষ্টি আলাদা করে পাঠানো হয় দেহের বিভিন্ন অঙ্গে। পাকস্থলীর এ বিপুল কর্মযজ্ঞের জন্য প্রয়োজন অতিরিক্ত শক্তি। মস্তিষ্ক তখন স্বাভাবিকভাবেই শরীরের বিভিন্ন স্থানে শক্তির প্রবাহ কমিয়ে দিয়ে পাকস্থলীতে পাঠিয়ে দেয়। শক্তি স্থানান্তরের কাজটি হয় মূলত রক্ত প্রবাহের মাধ্যমে। ত্বকের রক্তের প্রবাহ কমে গেলে সেখানকার কোষের তাপ উৎপাদনের হার কমে আসে। তখন শীত লাগে।
শীতকালে খাবার খাওয়ার পর তাৎক্ষণিকভাবে একটু বেশি ঠান্ডা লাগার এটি সবচেয়ে সাধারণ কারণ। তবে এটাই একমাত্র কারণ নয়। কী ধরনের খাবার খাচ্ছি, কতক্ষণ পরপর খাচ্ছি—এসব বিষয়ের ঠান্ডার তীব্রতা নির্ভর করে। এ ছাড়া বিভিন্ন রোগের লক্ষণ হিসেবেও খাওয়ার পর ঠান্ডা লাগতে পারে।
ঝাল জাতীয় খাবার খেলে সাধারণত তাৎক্ষণিকভাবে শরীরে, বিশেষ করে মুখে, গরম অনুভূত হয়। তবে ঝাল খাবারের কারণে দেহের তাপমাত্রা কমেও যেতে পারে। এটা হয় সাধারণত ঝাল খাবার খাওয়ার পর, গরমে ঘেমে ওঠার পর ঘাম শুকিয়ে গেলে। সে ক্ষেত্রে শীত শীত অনুভূতি হতে পারে। ঘামের কাজই হলো বাষ্পীভবনের মাধ্যমে ত্বকে তাপমাত্রা কমিয়ে ফেলা। বুঝতেই পারছেন, এটা শুধু শীতকালের বিষয় নয়। সারা বছর যেকোনো সময়েই ঝাল খাবার খেলে এমনটা ঘটতে পারে।
খাওয়ার পর শীত লাগার আরেকটা কারণ হলো ঠান্ডা খাবার খাওয়া। গরমের দিনে তীব্র তাপের হাত থেকে বাঁচতে ঠান্ডা পানীয়ের গ্লাসে চুমুক দিই আমরা। আইসক্রিম খেলে অনেক তৃপ্তি পাওয়া যায়। শুধুই স্বাদের কারণে এমনটা হয় না। বরং ঠান্ডা খাবার খাওয়ার পর দেহের তাপমাত্রা কিছুটা কমে যেতে পারে। গবেষণায় দেখা যায়, ঠান্ডা পানীয় পান করার কারণে গড়ে ৫ মিনিটে শরীরের তাপমাত্রা ০.২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো কমে যায়। সামান্য এই পরিবর্তন পরিসংখ্যানগতভাবে বা গবেষণার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হলেও বাস্তবে খুব একটা বোঝা যায় না।
বছরের যেকোনো সময়েই খাওয়ার পর নিয়মিত শীত অনুভূত হলে সেটা দুশ্চিন্তার বিষয়। যেমন এর মানে হতে পারে হাইপোথাইরয়েডিজমের কারণে দেহে পর্যাপ্ত থাইরয়েড হরমোন তৈরি হচ্ছে না। ফলে, খাদ্য ধীর গতিতে হজম হচ্ছে। এ কারণে দেহ পর্যাপ্ত তাপ উৎপাদন করতে পারছে না। খাওয়ার পর স্বাভাবিকভাবেই খানিকটা শীত শীত লাগে, সে কথা আগেই বলেছি। কেন, ব্যাখ্যা করেছি তাও। এর সঙ্গে হাইপোথাইরয়েডিজম মিলে দেহে শীতের অনুভূতি বাড়তে পারে। এ জন্য দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।
এ ছাড়া রক্তস্বল্পতা ও ডায়াবেটিসের মতো রোগের কারণেও খাবার খাওয়ার পর শীত লাগতে পারে। যদিও অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের কারণে মানুষ কেবল খাওয়ার পরে নয়, সবসময়ই শীত অনুভব করতে পারেন।
মোট কথা, শীতকালে খাবার খাওয়ার পর এক-আধটু শীত লাগা স্বাভাবিক। তবে এর পেছনে একাধিক বিষয় থাকতে পারে। বিশেষ করে শীতকাল ছাড়াও বছরের অন্যসময় বা নিয়মিতভাবে খাবারের পর শীত অনুভূত হলে সেটা বিপদের কারণ হতে পারে। এসব ক্ষেত্রে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।