জুমবাংলা ডেস্ক : কুড়িগ্রামের ভূরুঙ্গামারীতে সন্তানের ভরণপোষণ না দিতে পেয়ে ১৪ মাসের কোলের শিশুকে পানিতে ফেলে দিলেন এক মা। পানিতে ভাসতে থাকা শিশুটিকে উদ্ধার করেছে এলাকাবাসী। শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে উপজেলার বলদিয়া ইউনিয়নের কাশিমবাজার এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
শিশুটি এখন রফিকুল ইসলাম ও এলিনা বেগম দম্পতির কাছে রয়েছে। এলিনা বেগম তার বুকের দুধ শিশুটিকে পান করিয়েছেন। ফলে শিশু জাহিদ এখন সুস্থ আছে।
এদিকে শিশু জাহিদের মা জমিলা বেগম দাবি করেছেন, লাঞ্ছনা-গঞ্জনা আর অভাবের তাড়না সইতে না পেরে রাগে-দুঃখে-অভিমানে কোলের ছেলেকে পানিতে ফেলে দিয়েছেন।
জমিলা বেগম জানান, দুমাস বয়সী শিশু জাহিদসহ এক বছর আগে রংপুর থেকে তার স্বামী হাফিজুর তাকে তাড়িয়ে দেয়। নিরুপায় হয়ে বলদিয়া ইউনিয়নের পূর্ব কেদার গ্রামে দরিদ্র বাবা জয়নাল মিয়ার বাড়িতে এসে আশ্রয় নেন। দিনমজুর বাবার সংসারে অভাব অনটন থাকায় শিশু জাহিদের ভরণপোষণ নিয়ে পারিবারিক দ্বন্দ্বের সৃষ্টি হয়। এজন্য তাকে শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন সইতে হতো। এ কারণে জাহিদকে পানিতে ফেলে মেরে ফেলার চিন্তা তার মাথায় আসে।
জমিলার বাবা জয়নাল মিয়া বলেন, প্রায় ৩ বছর আগে রংপুরে মর্ডান মোড় এলাকার ভরতো কবিরাজের ছেলে হাফিজুরের সঙ্গে জমিলার বিয়ে হয়। এরপর দুই মাস বয়সী শিশু জাহিদসহ জমিলাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দেয় তার স্বামী। এ অবস্থায় জমিলা সন্তানসহ তার কাছে চলে আসেন। এর আগে একইভাবে ৩ সন্তান নিয়ে বড় মেয়ে জরিনা তার বাড়িতে এসে আশ্রয় নিয়ে আছে। সব মিলিয়ে ৯ সদস্যের সংসার দিনমজুরি করে চালাতে হিমশিম খাচ্ছিলেন।
জমিলার মা জাবেদা বেগম জানান, জমিলার ছেলেকে নিয়ে বাড়িতে ঝগড়া লেগেই থাকতো। ওই ছেলের খরচ দিতে চাইতো না তার বাবা।
জমিলার নানি বৃদ্ধা সুফিয়া বেওয়া জানান, তিনি ভিক্ষা করে যে চাল পেতেন-তাই মাঝে মাঝে জাহিদের খরচ চালানোর জন্য দিতেন।
এলাকাবাসী জানান, শুক্রবার সকালে সবার আড়ালে দুই কেজি চাল বিক্রি করে জাহিদের জন্য খাবার-তেল-সাবান কিনে আনলে তার বাবা রাগারাগি করে এবং বাড়ি থেকে চলে যেতে বলেন। এরপর বাড়ি থেকে এক কিলোমিটার কাশিম বাজার সংলগ্ন রাস্তার ব্রিজ থেকে জাহিদকে পানিতে ফেলে দেয়ার ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শী দুলাল হোসেন বলেন, বাড়ি থেকে কাশিম বাজার যাওয়ার পথে দেখেন একজন মহিলা ব্রিজের ওপর থেকে ২০ ফুট নিচের পানিতে কিছু ফেলে দিয়ে দ্রুত চলে যান। এ অবস্থায় কাছে গিয়ে দেখেন একটি শিশু পানিতে ভাসছে। এ সময় চিৎকার শুরু করলে লোকজন এসে ফেলে দেয়ার ২০ মিনিট পর শিশুটিকে উদ্ধার করেন।
বলদিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোখলেছুর রহমান জানান, শিশুটি বর্তমানে রফিকুল ইসলাম ও এলিনা বেগম দম্পতির কাছে আছে। শিশু জাহিদকে তার মায়ের কাছে ফিরিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে শুক্রবার বিকেল মোবাইলে ভূরুঙ্গামারী ইউএনও দীপক কুমার দেব শর্মা জানান, তিনি ঘটনাটি শোনার সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে বলেছেন। এছাড়াও বিষয়টি খতিয়ে দেখে পরিবারটিকে সব ধরনের সহায়তা দেয়া হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।