জুমবাংলা ডেস্ক : প্রায় দুই বছর আগে নির্মাণ কাজ শেষ হলেও দুই পারের সংযোগ (অ্যাপ্রোচ) সড়ক না হওয়ায় কাজে আসছে না সাড়ে ৩৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতু। ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতার কারণে সেতুটি ব্যবহারও করতে পারছেন না দুই পাশের অন্তত ৩০টি গ্রামের মানুষ। মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বৈকুণ্ঠপুর এলাকায় কালীগঙ্গা নদীতে দেখা মিলবে এ সেতুর।
মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলার বৈকণ্ঠপুর এলাকায় কালীগঙ্গা নদীর ওপর এ সেতু নির্মাণ করা হয়। কিন্তু জমি অধিগ্রহণ জটিলতায় সেতুর সংযোগ সড়ক নির্মাণে দেখা দিয়েছে অনিশ্চয়তা। তবে ঝুঁকি নিয়েই নদীর খেয়া পাড় হয়ে চলাচল করছে দুই পারের মানুষ। সেতুটি চালু হলে জেলা সদরের সঙ্গে ঘিওর উপজেলা সদরসহ আশপাশের এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থাও সহজসহ আমূল পরিবর্তন হবে কৃষিপ্রধান এই অঞ্চলের।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, সেতুটির দুই পারে সংযোগ সড়ক না হওয়ায় পূর্বপাড়ের লোকজন ঘিওর উপজেলা সদর ও আশপাশের এলাকা এবং পশ্চিমপাড়ের লোকজন জেলা সদরসহ আশপাশের এলাকায় চরম ভোগান্তি নিয়ে যাতায়াত করছেন। ঝুঁকি নিয়ে মোটরসাইকেল, রিকশা-ভ্যান, ছোট ছোট যানবাহন খেয়া পারাপার হচ্ছে। কোটি কোটি টাকা ব্যয় নির্মিত সেতু থাকার পরও উভয় পাড়ের লোকজন গরমের মধ্যে দীর্ঘপথ পায়ে হেঁটে অর্থ ব্যয় করে খেয়াঘাটে গিয়ে নৌকায় নদী পারাপার হচ্ছেন।
জানা গেছে, সেতুটি ব্যবহার করতে না পারায় দুইপাশের প্রায় ৫০ হাজার মানষজনকে চরম ভোগান্তি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে। এতে সেতুর পূর্বপাশের পূর্ব উথলী, বৈকণ্ঠপুর, নকিববাড়ি, সরবঘাট, চর মাইজখাড়া, দোলাপাড়া, চর বিলনালাই এবং সেতুর পশ্চিমপাশের বালিয়াবাধা, আরিয়াদহ, বৈলতলা, মির্জাপুর, বেড়াডাঙ্গা, শিমুলিয়া, আটঘড়িয়া, কেরাননগর, নাটুয়াবাড়ি, আশাপুরসহ অন্তত ৩০ গ্রামের মানুষ উপজেলা এবং জেলা সদরে যাতায়াতে চরম ভোগান্তিতে রয়েছেন।
ঘিওর উপজেলা প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ও স্থানীয়দের সূত্রে জানা গেছে, দীর্ঘদিন ধরে উপজেলার বৈকষ্ঠপুর এলাকায় কালীগঙ্গা নদীর ওপর একটি সেতুর নির্মাণের দাবি জানিয়ে আসছিল সিংজুরী ইউনিয়নের বাসিন্দারা। এলাকাবাসীর দাবির প্রেক্ষিতে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) অবশেষে সেখানে সেতু নির্মাণে উদ্যোগ নেয়। সেতুটি নির্মাণের জন্য ২০১৮ সালে দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে ৩৬৫ মিটার দৈর্ঘ্যের এই সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়। দরপত্র অনুযায়ী যৌথভাবে সেতুটি নির্মাণের কাজ পায় অরিয়েন্ট ট্রেডিং অ্যান্ড বিল্ডার্স এবং মেসার্স কহিনুর এন্টারপ্রাইজ নামের দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। সেতু নির্মাণ কাজে ২৯ কোটি টাকা এবং দুই পাশের সংযোগ (অ্যাপ্রোচ) সড়ক বাবদ ৫ কোটি ৬০ লাখ ৩৫ হাজার টাকাসহ ৩৪ কোটি ৬০ লাখ ৩৫ হাজার টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়।
তবে ২০২২ সালের জুন মাসে দুই প্রান্তের সংযোগ সড়কসহ সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। ওই সময়ে সেতু নির্মাণ কাজ শেষ হলেও প্রায় দুই বছরেও হয়নি দুই পাশের ৬৩০ মিটার সংযোগ সড়ক। সংযোগ সড়কের জন্য দুই পারে ৪.৯৬ একর ভূমি অধিগ্রহণও করা হয়েছে। তবে সেতুটির উভয় পারের সংযোগ সড়ক নির্মাণের জন্য সেতু নির্মাণ প্রকল্পের সময় চলতি বছরের ডিসেম্বের পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়েছে।
বৈকণ্ঠপুর এলাকার বাসিন্দা মোহাম্মদ আরজু মিয়া বলেন, জন্মের পর থেকে দেখে আসছি দুইপারে নদী পারাপার হতে সমস্যা। এখান থেকে জেলা সদরের যাইতে সময় লাগে ২০ মিনিট সেখানে এখন সময় লাগে এক থেকে দেড় ঘণ্টা। অনেক সময় দেখা যায়, একজন মুমূর্ষু রোগীকে নিয়ে জেলা সদর হাসপাতালে যেতে অনেক অসুবিধা হয়। এখানে একটা ব্রিজ হইছে, কিন্তু ব্রিজের ওপর দিয়ে চলাচল করার কোনো সুযোগ নাই। দুই বছরেও ব্রিজটির দুপাশের সংযোগ রাস্তা হয়নি।
একই গ্রামের বাসিন্দা মো. সুমন মিয়া বলেন, ব্রিজ হলেও রাস্তা নেই, দুইপারের রাস্তাটা হলে ব্রিজ দিয়ে চলাচল করতে পারতাম। ব্রিজ থাকতেও গরমের মধ্যে খেয়াঘাটের নৌকায় নদী পারাপার হতে হয়।
জমির মালিক নকুমুদ্দিন বলেন, আমাগো খেতের টাকা দিতে হইব, টাকা না দিলে জমিতে মাটি ফালাইতে দিমু না। গরিব মানুষ, এইটুকু জমি চাষ কইরা খাই, তার মধ্যে মাটি ফালাইয়া রাস্তা করলে আমরা কি খাইয়া বাচুম। টাকা পাইলে তাও অন্যে কিছু কইরা সংসার চালাইতে পারুম।
বালিয়াবাধা গ্রামের জমির মালিক সিদ্দিক বলেন, ভূট্টা, বোরো ধান, সরিষাসহ বছরে তিন বার এই জমিতে ফসল আবাদ করে শস্য পাই। একবার মাপ হইছে, কোন দিক দিয়ে রাস্তাটা হইব কিন্তু কার কতটুক জমি রাস্তায় যাইব তার কোনো মাপ হয় নাই। সরকার চাইলে জমি দিতে হবে কিন্তু আমাগো ক্ষতিপূরণ তো দিব। টাকা না পাইলে আমরা রাস্তা করতে দিমু না। টাকা ছাড়াই ভেকু আইনা তারা রাস্তাঘাট কইরা নিবে, কয় পরে টাকা দিমু, পরে তো আমরা আর টাকা পামু না।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক মো. মাসুদ খান বলেন, ভূমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন না হওয়ার কারণে ব্রিজের দুইপাশে সংযোগ সড়ক নির্মাণ করা যাচ্ছে না। তবে দ্রুত জমি অধিগ্রহণ কাজ শেষ হলেই সংযোগ সড়কের কাজ শুরু করা যাবে।
এ বিষয়ে ঘিওর উপজেলা প্রকৌশলী মোহাম্মদ আশরাফুল ইসলাম ভুঁইয়া বলেন, বৈকণ্ঠপুর এলাকায় দুই বছর আগে সেতু নির্মাণকাজ শেষ হলেও ভূমি অধিগ্রহণ জটিলতায় আমরা এখনও সংযোগ সড়ক নির্মাণ করতে পারিনি। তবে জেলা প্রশাসক মহোদয়ের কার্যালয়ে অধিগ্রহণের বিষয়টি চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে এবং দুই পাশের সংযোগ সড়কের জন্য সীমানা নির্ধারণ করে গেছেন। আশা করছি আমরা দ্রুত কাজটা শেষ করতে পারব।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।