নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর: গাজীপুরের কালিয়াকৈরে কলেজছাত্র ও ছাত্রলীগ নেতা আল আমিন হোসাইনকে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় ১৭ দিন পার হয়ে গেলেও মামলার কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এতে নিহতের পরিবারের সদস্যরা আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। চিহ্নিত আসামিরা ছাত্রলীগের নেতাকর্মী হওয়ায় তাদের গ্রেপ্তারে কোনো তৎপরতা নেই বলে অভিযোগ পরিবারের।
নিহত আল আমিন (১৯) গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার বরিয়াবহ গ্রামের মো. মোতালেব হোসেনের ছেলে। তিনি চন্দ্রা এলাকার বঙ্গবন্ধু সরকারি কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্র ও শ্রেণী শাখার ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলেন।
গত ৬ জুন আল আমিনকে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের বাবা বাদী হয়ে ৭ জুন পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমন খানকে প্রধান আসামি করে ১৮ জনের নাম উল্লেখ করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। পরে পুলিশ মিলন রহমান (২২) নামের এক আসামিকে গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃত মিলন পৌর ছাত্রলীগের ৬নং ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক।
নিহত কলেজ ছাত্রের বাবা মোতালেব হোসেন বলেন, থানায় পুলিশের কোনো তৎপরতা দেখতে পাচ্ছি না। বারবার তারা বিভিন্ন অজুহাত দিচ্ছে। কার্যত দৃশ্যমান কিছুই করছে না। এখন পর্যন্ত প্রায় ১৫ বার থানায় গেলেও একবারের জন্যও ওসির সাক্ষাৎ পায়নি। ওসির সঙ্গে দেখা করতে চাইলেও দেখা কটতে দেয় না। ছেলে মৃত্যুর ৩ দিন পর ওসি বাসায় এসেছিল এরপর আর তার সঙ্গে কথা হয়নি।
আমি যে মামলা করেছি সেটার তদন্ত ছিল এসআই জামিল সাহেবের কাছে। তাকে অনেকবার ফোন দিয়েছি কিন্তু ধরেনি। পরে একদিন ফোন দিয়ে বললেন তার পোস্টিং কালীগঞ্জে হয়েছে। মামলার যত আলামত প্রমাণ সবকিছু ওই এসআইয়ের কাছেই ছিল। এখন নতুন একজন এসআই এসেছে। খায়রুল নামে একজন তদন্ত করছে। ১৮ জন আসামীর মধ্যে এখন পর্যন্ত মাত্র একজনকে ধরতে পেরেছে। ১৮ জনের মধ্যে ১৪ জন আসামি থাকে উপজেলার গোয়ালবাথান এলাকায়। যদিও পুলিশ তাদের খুঁজে পায় না। তারা কি এতই শক্তিশালী যে ধরাছোঁয়ার বাইরে।
তিনি আরও বলেন, আমার আর হারানোর কিছু নেই। আমি আসামিদের ফাঁসি চাই। কোনো কিছুর বিনিময়ে আমার সাথে আপোষ করার কোনো সুযোগ নেই। মন্ত্রী মহোদয় আশ্বাস দিয়েছেন এই হত্যাকাণ্ডের বিচার হবে। আমার যে ক্ষতি হয়েছে তা আর পূরণ করা সম্ভব না। তবে আর কারো মায়ের বুক খালি না হয় এ জন্যই বিচার চাইছি। আমার সব সম্পত্তি বিক্রি করে হলেও আমি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আসামিদের ফাঁসির জন্য অপেক্ষা করব।
এ সময় তিনি ঘর থেকে একটি অভিযোগপত্র এনে দেখিয়ে বলেন, দুইদিন আগেই জানতে পেরেছি এই অভিযোগের বিষয়ে। হত্যার হুমকি দিচ্ছে বলে গত ২০ মে আমার ছেলে থানায় নিজেই অভিযোগ করেছিল কিন্তু পুলিশ গুরুত্ব দেয়নি। ফলে আমার ছেলেকে আমি হারিয়ে ফেলেছি। ওই সময়ে গুরুত্ব দিলে আমার ছেলেকে হারাতাম না।
তবে বাবা কথা বলতে পারলেও ছেলে মৃত্যুর পর থেকেই মা আছিয়া বেগম স্তব্ধ হয়ে গেছে। একমাত্র সন্তানকে হারিয়ে অনেকটা বাকরুদ্ধ হয়ে বসে থাকেন ঘরের বারান্দাতে। ছোট দুই বোন ফাতেমা ও আমেনা এখনো মাকে জড়িয়ে ধরে বলে হাসপাতাল থেকে ভাই কবে আসবে।
মা আছিয়া বেগম বলেন, আমার জীবন থেকে ঈদ চলে গেছে। ঈদের দিন কিভাবে কেটেছে নিজেও জানি না। আমি শুধু আমার সন্তান হত্যার বিচার চাই। এখানে সাক্ষীর কিছু নেই, সব আসামিকে দেখাই যাচ্ছে কারা কারা এ হত্যার সাথে জড়িত। এদেরকে ধরে আনলেই কাদের হুকুমে হত্যা করেছে সেটিও বেরিয়ে আসবে।
এ মামলায় কালিয়াকৈর পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি ইমন খানকে প্রধান আসামি করা হয়। এছাড়াও মামলার অন্য আসামিরা হলেন- মো. সাকিব, মো. হাসান, রউফ আহমেদ তারেক, সুজন সিকদার, মো. রিপন, জাহিদ হাসান খান, মো. আকাশ, মো. কাউছার, মো. মিনহাজ, মিলন রহমান, প্রেম কুমার, মো. সাকিব হোসেন, মো. হৃদয়, কামরুল ইসলাম, মো. বাদশা মিয়া, মো. শিপন হোসেন ও মো. সিফাতসহ অজ্ঞাতদের আসামি করা হয়। আসামিরা সকলেই পৌর ও বঙ্গবন্ধু কলেজ শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মী।
কালিয়াকৈর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এ এফ এম নাসিম বলেন, আমরা আসামিদের গ্রেপ্তার করতে চেষ্টার কোনো ত্রুটি করছি না। তারা আত্মগোপনে রয়েছে। আমার দরজা সবার জন্য খোলা, যেকেউ যেকোনো সময় আমার কাছে আসতে পারবে।
উল্লেখ্য, কালিয়াকৈর উপজেলার চন্দ্রা এলাকার বঙ্গবন্ধু সরকারি কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থীরা কলেজ ক্যাম্পাসে র্যাগ ডে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। অনুষ্ঠানে দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী এবং ডিগ্রির শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তুচ্ছ বিষয় নিয়ে কথা-কাটাকাটি হয়। এ নিয়ে দুই পক্ষের মধ্যে পাল্টাপাল্টি ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনার জের ধরে গত ৬ জুন দুপুরে প্রকাশ্যে আল আমিন হোসাইনকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।