নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর: কৃষি উৎপাদন টিকিয়ে রাখতে দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহৃত হয়ে আসছে রাসায়নিক বালাইনাশক। তবে এসব বিষাক্ত রাসায়নিক শুধু পোকামাকড় ধ্বংসই করছে না, বরং মানবদেহ, পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য তৈরি করছে ভয়াবহ ঝুঁকি। ফলন রক্ষার নামে ধ্বংস হচ্ছে উপকারী পোকামাকড়, মাছ ও পাখি। অনেক বিল, হাওর হয়ে পড়ছে মাছশূন্য। অনেক প্রজাতির পাখি হারিয়ে যাচ্ছে পরিবেশ থেকে।
এই পরিস্থিতি মোকাবেলায় গাজীপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বালাইনাশকের ক্ষতিকর প্রভাব কমাতে নানা কার্যক্রম হাতে নিয়েছে।
প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, কৃষকদের উৎসাহিত করা হচ্ছে রাসায়নিকের পরিবর্তে জৈব বালাইনাশক ব্যবহারে। এজন্য বাজারে সহজলভ্য করা হচ্ছে জৈব বালাইনাশক, দোকানে তৈরি করা হচ্ছে আলাদা জৈব বালাইনাশক কর্ণার। পাশাপাশি সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা (IPM) পদ্ধতি অনুসরণে কৃষকদের দেওয়া হচ্ছে প্রশিক্ষণ।
সঠিক সময়ে, সঠিক মাত্রায়, সঠিক নিয়মে বালাইনাশক প্রয়োগের ব্যাপারেও নিয়মিত সচেতনতা বৃদ্ধি কার্যক্রম পরিচালনা করছে কৃষি অধিদপ্তর।
এবার শুরু হয়েছে নতুন কার্যক্রম বালাইনাশকের খালি পাত্র সংগ্রহ। পরীক্ষামূলকভাবে কাপাসিয়া ও শ্রীপুর উপজেলায় ‘পেস্টিসাইড রিস্ক রিডাকশন’ প্রকল্পের আওতায় চালু হয়েছে এই উদ্যোগ। কৃষকদের ব্যবহৃত প্লাস্টিক বোতল ও মোড়ক কেজি প্রতি ৩০ টাকা দরে সংগ্রহ করা হচ্ছে। এজন্য বিভিন্ন বাজারে কালেকশন পয়েন্ট ও সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে।
প্রকল্পের সফল বাস্তবায়নে উপজেলা কৃষি অফিস নিয়মিত উঠান বৈঠক, মতবিনিময় সভা ও সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করছে।
শ্রীপুর উপজেলা রাজাবাড়ীই ইউনিয়নের ডোয়াইবাড়ি গ্রামের কৃষক সোহেল রানা বলেন, “আগে বুঝতাম না, বেশি ওষুধ দিলে ফসল ভালো হবে। এখন শিখেছি, উল্টো ক্ষতি হয়। খালি বোতলগুলো বাজারে দিয়ে কিছু টাকা পাই, আর পরিবেশও ভালো থাকে।”
কাপাসিয়ার উপজেলার তরগাঁও ইউনিয়নের দেওনা গ্রামের কৃষক আলী হোসেন বলেন, “খালি বোতল আগে খেতে বা জমির পাশে ফেলে রাখতাম। এখন বুঝি এটা বিষ ছড়ায়। বাজারে জমা দিয়ে লাভ তো হচ্ছেই, সাথে জমি আর পানিও পরিষ্কার থাকছে।”
গাজীপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, গত এক বছরে প্রায় ৫ টন খালি পাত্র সংগ্রহ করা সম্ভব হয়েছে, যা পরিবেশসম্মত উপায়ে ধ্বংস করা হবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, কৃষক ও ভোক্তা উভয়ের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানো গেলে পরিবেশ ও মানবস্বাস্থ্য রক্ষায় এ ধরনের উদ্যোগ আরও কার্যকর ভূমিকা রাখবে।
কাপাসিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ আওলিয়া খাতুন বলেন, “কৃষকদের আমরা এখন প্রশিক্ষণের পাশাপাশি প্রণোদনা দিচ্ছি। বোতল ফেরত দিলে যে অর্থ পাচ্ছেন, সেটি তাদের উৎসাহিত করছে। এভাবে ধীরে ধীরে তারা রাসায়নিকের ব্যবহারও কমাচ্ছেন।”
শ্রীপুর উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ সুমাইয়া সুলতানা বলেন, “রাসায়নিকের ক্ষতি সরাসরি ফসলের গুণমানের ওপর পড়ে। আমরা চাই, কৃষক যেন নিজের পরিবারের জন্য যে ফসল উৎপাদন করেন, তা নিরাপদ হয়। এজন্য খালি পাত্র সংগ্রহ কার্যক্রম বড় ভূমিকা রাখছে।”
গাজীপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক কৃষিবিদ মো. রফিকুল ইসলাম খান বলেন, “বালাইনাশক ব্যবহারের কারণে ক্যান্সার, প্রজনন সমস্যা, স্নায়ুতন্ত্রের ক্ষতি এবং নানা দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি বাড়ে। পাশাপাশি পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে উপকারী পোকামাকড় ও অন্যান্য প্রাণী ধ্বংস হচ্ছে। খালি পাত্র যত্রতত্র ফেলে রাখাও পরিবেশ দূষণের অন্যতম কারণ। তাই খালি পাত্র সংগ্রহ কার্যক্রমসহ বিকল্প পদক্ষেপ বালাইনাশকের ঝুঁকি অনেকাংশে কমাতে সক্ষম হবে।”
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।