নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর: গাজীপুরের মহাসড়কগুলোতে যৌথ বাহিনীর কঠোর তদারকির ফলে যানবাহনের দীর্ঘদিনের জটলা, পথচারীদের যাতায়াতের সমস্যা এবং অবৈধ দখলের কারণে সৃষ্ট যানজট অনেকটাই কমেছে।
বুধবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সড়কে চলাচলরত চালক ও যাত্রীরা মহাসড়কে স্বস্তি অনুভব করছেন। দীর্ঘদিন ধরে অবৈধভাবে সড়কের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা যানবাহন এবং ফুটপাত দখল করে রাখা ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলো সরিয়ে নেয়ায় যান চলাচল সহজ ও নির্বিঘ্ন হয়েছে।
ঢাকা-টাঙ্গাইল, ঢাকা-ময়মনসিংহ এবং গাজীপুর-সিলেট মহাসড়ক তিনটি দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাস্তাগুলোর মধ্যে অন্যতম। প্রতিদিন এই মহাসড়কগুলো দিয়ে হাজার হাজার দূরপাল্লার বাস, পণ্যবাহী ট্রাক, এবং আন্তঃজেলা পরিবহন যাতায়াত করে। গাজীপুর শিল্পাঞ্চল হওয়ায় দেশের অর্থনীতির জন্য এই সড়কগুলোর গুরুত্ব অপরিসীম। এছাড়া, এখানকার কারখানা এলাকাগুলোতে প্রতিদিন অসংখ্য শ্রমিক কর্মস্থলে যাতায়াত করেন। তাদের যাতায়াতের জন্য মহাসড়কের ওপর নির্ভর করতে হয়। কিন্তু অবৈধ অটোরিকশা এবং ফুটপাত দখলের কারণে মহাসড়কের দু’পাশে ব্যাপক জটলা তৈরি হয়, যা পথচারীদের চলাচলকেও ব্যাহত করে।
একাধিক সময় মহাসড়কের যেখানে সেখানে ছোট গাড়ি থামিয়ে যাত্রী ওঠানো এবং নামানো, ট্রাফিক আইন না মেনে উল্টোপথে গাড়ি চালানো, ফুটপাতের দোকানগুলোর পণ্যের অবৈধ দখল এসব কারণে গাজীপুরের মহাসড়কগুলোতে প্রতিদিনই তীব্র যানজটের সৃষ্টি হতো। এছাড়া স্থানীয় বাজারগুলোর পাশে থাকা আঞ্চলিক সড়কের সঙ্গে মহাসড়কের সংযোগস্থলে ছিল আরো বেশি জটলা। বিশেষ করে কর্মঘণ্টার সময়, যখন শত শত মানুষ কর্মস্থলে যাওয়ার জন্য মহাসড়কে নেমে পড়তেন, তখন দুর্ভোগের মাত্রা ছিল সীমাহীন।
বুধবার সকাল থেকে যৌথ বাহিনীর অভিযান শুরু হওয়ার পর থেকে মহাসড়কের চিত্র পুরোপুরি পাল্টে যায়। পুলিশ, সেনাবাহিনী এবং অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মহাসড়কের প্রতিটি মোড়ে মোড়ে সক্রিয়ভাবে দায়িত্ব পালন করতে থাকে। তারা মহাসড়কে যেখানে সেখানে গাড়ি থামানো, ফুটপাত দখল করা, সার্ভিস লেন দখল করে রাখা ছোট গাড়িগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেন। এছাড়া, হেলমেটবিহীন মোটরসাইকেল চালকদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নেয়া হয়।
কামাল হোসেন নামে একজন যাত্রী বলেন, ঢাকা থেকে জয়দেবপুর আসতে যে পথে আগে দুই থেকে তিন ঘণ্টা সময় লাগত, আজ মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যেই পৌঁছে গেছি। যৌথ বাহিনীর তৎপরতার কারণে সড়কে কোনো যানজটের সৃষ্টি হয়নি। গত কয়েকদিন ধরে গার্মেন্টস শ্রমিকদের অবরোধ এবং অবৈধ গাড়ির কারণে সড়কে যে দুর্ভোগ পোহাতে হয়েছিল, আজ তা এক নিমেষে মিটে গেছে।
গাজীপুরের গার্মেন্টস শ্রমিক রুকসানা বেগম বলেন, প্রতিদিন কারখানায় যাওয়ার পথে মহাসড়কের পাশে যাতায়াত করতে গিয়ে নানা সমস্যার সম্মুখীন হতে হতো। ফুটপাত দখল করে রাখা দোকানপাটের কারণে হাঁটার জায়গা থাকত না, আর রাস্তায় ছোট গাড়িগুলোর যত্রতত্র পার্কিংয়ের কারণে রাস্তায় হাঁটা খুবই কষ্টকর ছিল। আজকে যৌথ বাহিনীর উপস্থিতিতে এই সমস্যা অনেকটাই কমে গেছে। যদি এমনটা প্রতিদিন বজায় থাকে, তাহলে আমরা কর্মস্থলে সহজেই পৌঁছাতে পারব।
দূরপাল্লার যাত্রীবাহী পরিবহনের চালক ইমান আলী বলেন, ছোট গাড়ির বেপরোয়া চলাচল এবং তাদের অসাবধানতা মহাসড়কে প্রায়ই দুর্ঘটনার কারণ হয়ে দাঁড়াত। এসব গাড়ির চালকরা বেশিভাগই অপ্রাপ্তবয়স্ক এবং ফিটনেসবিহীন গাড়ি নিয়ে সড়কে ওঠে, যার ফলে যানজটের সৃষ্টি হয়। এসব গাড়িগুলো প্রায়ই সড়কে নষ্ট হয়ে পড়ে থাকে, যা যানজটের বড় কারণ। আজ যৌথ বাহিনীর উপস্থিতিতে এসব অনিয়মের কোনো প্রভাব দেখা যায়নি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।