নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর: গাজীপুরের শ্রীপুরে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের দিন ৫ আগস্ট বিজিবির ছোড়া গুলি কোমরে নিয়ে দুঃসহ জীবনযাপন করা শাকিলের চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন বিএনপি নেতা ইজাদুর রহমান মিলন।
শুক্রবার (৩০ আগস্ট) দুপুরে শাকিলের খোঁজখবর নিতে উপজেলার মাওনা ইউনিয়নের বেলতলী গ্রামের বাড়িতে যান তিনি। ইজাদুর রহমান মিলন গাজীপুর সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক সহ-সভাপতি। এ সময় তিনি শাকিলের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলেন এবং ব্যক্তিগত খরচে শাকিলের চিকিৎসার ব্যবস্থা করবেন বলে জানান।
এর আগে ২৫ আগস্ট শাকিলের বিস্তারিত ঘটনা তুলে ধরে দেশের জনপ্রিয় অনলাইন নিউজ জুমবাংলায় ‘গুলিবিদ্ধ শাকিলের টাকার অভাবে চিকিৎসা বন্ধ’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। প্রকাশিত সংবাদটি বিএনপি নেতা ইজাদুর রহমান মিলনের নজরে এলে তিনি নিজ উদ্যোগে শাকিলের খোঁজখবর নেন এবং চিকিৎসার ব্যবস্থা করার কথা বলেন।
এ সময় তিনি শাকিলের বাবা-মায়ের উদ্দেশ্যে বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে যে সকল ছাত্র ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ জীবন দিয়েছেন, যারা আওয়ামী লীগের দুর্বৃত্তের গুলিতে আহত-নিহত হয়েছেন তাদের অবদান ভুলার নয়। আমি ব্যক্তিগতভাবে আপনার ছেলের চিকিৎসার দায়িত্বভার নিতে চাই। আমি ইতোমধ্যে আন্দোলনে আহত আরও কয়েকজনের চিকিৎসা করিয়েছি। আপনাদের সম্মতি থাকলে আগামীকাল সকালে একটি অ্যাম্বুলেন্সযোগে তাকে ঢাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি করাবো এবং চিকিৎসা করাতে। যত টাকার প্রয়োজন হবে তা আমি ব্যক্তিগত তহবিল থেকে বহন করবো।
উল্লেখ্য, গত ৫ আগস্ট সকালে হাসিনা সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে গাজীপুরের শ্রীপুরের মুলাইদ এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ভারতীয় পুলিশ সন্দেহে বিজিবির দুটি বাস আটকে দেন আন্দোলনকারীরা। বিজিবির ওপর হামলার ঘটনা ঘটলে গুলি ছুড়ে বিজিবি। এ সময় বিজিবির ছোড়া গুলি শাকিলের কোমরে লাগে। সেই গুলি শরীর থেকে বের করতে চাইলেও টাকার অভাবে তার চিকিৎসা একসময় বন্ধ হয়ে যায়।
গুলিবিদ্ধ শাকিলের টাকার অভাবে চিকিৎসা বন্ধ, এমন খবর পেয়ে গত ২৫ আগস্ট দুপুরে শাকিলের বাড়িতে যান। এ সময় শাকিল বলেন, অন্তত আমার গায়ের গুলিটা বের করার ব্যবস্থা করে দেন, যাতে সুস্থভাবে কাজ করে খেতে পারি।
পেশায় গাড়ি চালক শাকিল (২৮) শ্রীপুর উপজেলার মাওনা ইউনিয়নের বেলতলী গ্রামের নাসির উদ্দিনের ছেলে। সীমিত আয়ের সংসারে একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিল শাকিল। শয্যাশায়ী হওয়ায় পুরো পরিবার এখন অসহায় হয়ে পড়েছে। তার রাফি নামের ৫ বছরের এক ছেলে রয়েছে।
শাকিল জানান, ৫ আগস্ট সকাল থেকেই ছাত্র-জনতার কাতারে এসে আন্দোলনে অংশ নেন। পেশায় গাড়িচালক হলেও গণতান্ত্রিক আন্দোলনে পিছপা হননি। হাজারো জনতার সঙ্গে সেদিন গাজীপুরের শ্রীপুরের মাওনা চৌরাস্তার পল্লী বিদ্যুৎ মোড়ে আন্দোলনে অংশ নেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে একদল বিজিবি সদস্যদের ভারতীয় পুলিশ সন্দেহে আটকে রাখে আন্দোলনকারীরা। সেখানে চলছিল মিছিল। একসময় সেই মিছিলে চলে মুহুর্মুহু গুলি। হঠাৎ একটি গুলি এসে বিদ্ধ হয় শাকিলের কোমরে। মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। স্থানীয়রা উদ্ধার করে নিয়ে যান ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে চিকিৎসা না মেলায় একদিন পরই যান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে। সেখানেও একই অবস্থা। গুলি বের করতে না পারায় সেখান থেকে বাড়ি ফিরে আসেন। এখন শয্যাশায়ী হয়ে দিন কাটছে তার। অভাব আর অনটনের সংসারে চিকিৎসা নিয়েও আছে দুশ্চিন্তা।
তিনি আরও জানান, পরীক্ষার পর চিকিৎসকরা বলেছেন মেরুদণ্ডের হাড়ের ভেতর গুলি রয়ে গেছে। সরকারি দুই হাসপাতালে ঘুরে চিকিৎসা পাননি, গুলিও বের করে দেননি তারা। গত ১৬ দিনে ধারদেনা করে চিকিৎসা ও দৌড়াদৌড়ি করে ৬০ হাজার টাকা খরচ হয়ে গেছে। এখন ঘরে খাবার নেই, ওষুধ কেনার টাকাও নেই। গুলি যে বের করতে পারবে সেই নিশ্চয়তাও কেউ দিচ্ছে না।
শাকিল বলেন, গুলির যন্ত্রণায় এখন মরে যাওয়ার অবস্থা। অন্তত আমার গায়ের গুলিটা বের করে সুস্থভাবে কাজ করে খাওয়ার সুযোগ করে দিন। আর না হলে পরিবারকে নিয়ে আমার না খেয়ে মরতে হবে।
শাকিলের স্ত্রী রিপা আক্তার জানান, তার বাবা (শাকিলের শ্বশুর) মারা গেছেন। শাকিল তার মায়ের পরিবারের ভরণপোষণও দিত। শাকিলের ওপর নির্ভরশীল দুটি পরিবার এখন পথে বসার উপক্রম হয়েছে। বিনা চিকিৎসায় তার স্বামী এখন শয্যাশায়ী। রাত হলেই গুলির যন্ত্রণায় কান্নাকাটি করেন। স্ত্রী হিসেবে নিজেকে খুব অসহায় লাগছে।
রিপা আক্তার বলেন বলেন, এ পর্যন্ত ৬০-৬৫ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। পুরো টাকাটাই প্রতিবেশী ও আত্মীয়স্বজনদের কাছ থেকে ধার করে নেওয়া। এ টাকা শোধ করবো না নতুন করে টাকা হাওলাদ করবো জানি না।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।