চুয়াডাঙ্গা নার্সিং ইনস্টিটিউটের ৫ চেয়ার মেরামতে ব্যয় ৬২ হাজার

জুমবাংলা ডেস্ক : পাঁচটি চেয়ার মেরামতে খরচ তোলা হয়েছে ৬২ হাজার ২০০ টাকা। কয়েকটি টেবিল, বেঞ্চ ও খাট মেরামতে কাগজে-কলমে খরচ দেখানো হয়েছে ৫৮ হাজার ১১৯ টাকা। অস্বাভাবিক এ ব্যয়ের চিত্রটি চুয়াডাঙ্গা নার্সিং ইনস্টিটিউটের।

অনিয়ম এখানেই সীমাবদ্ধ নয়। ইনস্টিটিউটের সব আর্থিক লেনদেন হওয়ার কথা সরকারি ব্যাংকে খোলা প্রতিষ্ঠানের নামে চলতি হিসাবে। অথচ সব লেনদেন হয় ইনস্ট্রাক্টরের ব্যক্তিগত সঞ্চয়ী ব্যাংক হিসেবে। শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়ের টাকাও লেনদেন হয় ওই ব্যক্তিগত ব্যাংক অ্যাকাউন্টে। এছাড়া ভুয়া ভাউচার আর ভুতুড়ে বিলে টাকা উত্তোলন করেছেন প্রায় প্রতিটি খাত থেকেই।

মঙ্গলবার (২১ জানুয়ারি) দুপুরে চুয়াডাঙ্গা নার্সিং ইনস্টিটিউটে গিয়ে এসব অনিয়ম-দুর্নীতির প্রতিবাদ করেন চুয়াডাঙ্গা জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা।

এসময় সরকারি নিয়ম না মেনে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ আদায়, আর্থিক অনিয়ম, ভুয়া বিল-ভাউচার ও ক্রয়-মেরামত ব্যয় বাবদ ভুতুড়ে বিল উত্তোলনের অনিয়ম খুঁজে বের করেন তারা। পরে সেখানে হাজির হন চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. বিদ্যুত কুমার রায়।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০২৩-২৪ সেশনে ভর্তি হওয়া ৭৫ জন শিক্ষার্থীদের কাছ বিভিন্ন খাত দেখিয়ে সরকার নির্ধারিত ফির চেয়ে জনপ্রতি অতিরিক্ত ২-৪ হাজার টাকা আদায় করে নার্সিং ইনস্টিটিউট কর্তৃপক্ষ। এছাড়া গত দুই বছর ধরে কোনো কমিটির একটি সভার রেজুলেশন হয়নি। ইনস্টিটিউটের ইনস্ট্রাক্টর ইনচার্জ ফরিদা ইয়াছমিনের স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম এবং সরকারি নীতিমালাকে তোয়াক্কা না করার অভিযোগ বেশ পুরোনো।

এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আওলিয়ার রহমানকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ। গত ১৩ জানুয়ারি কমিটি প্রতিবেদন জমা দেয়। প্রতিবেদনে আর্থিক অনিয়মের বিষয়গুলো তুলে ধরা হলেও একপ্রকার দায়সারা ও অস্পষ্টতা প্রকাশ পায়।

এ অবস্থায় সরকারি প্রতিষ্ঠানটির অনিয়ম দুর্নীতি প্রতিরোধে নার্সিং ইনস্টিটিউটে যান জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শিক্ষার্থীরা। এতে নেতৃত্ব দেন সদস্যসচিব সাফফাতুল ইসলাম। অংশ নেন মুখ্য সংগঠক সজিবুল ইসলাম, যুগ্ম সদস্যসচিব রেজাউল বাসার প্লাবন, ফাহিম উদ্দিন মভিনসহ অন্যরা। এসময় আরও অনিয়মের তথ্য খুঁজে পান তারা।

জেলা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সদস্যসচিব সাফফাতুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতিষ্ঠানটির সব আর্থিক লেনদেনই অসঙ্গতি দেখা গেছে। অতিরিক্ত অর্থ আদায়, ব্যাংকিক লেনদেনে অস্বচ্ছতা, ক্রয় ও মেরামতে অস্বাভাবিক ব্যয় থেকে বোঝা যায় এখানে নজিরবিহীন দুর্নীতি চলে। মূলত এখানকার নার্সিং ইনস্ট্রাক্টর নিজ ক্ষমতাবলেই এমন অনিয়মনের স্বর্গরাজ্য গড়ে তুলেছেন। এখানে দেখার কেউ না থাকায় সুযোগ কাজে লাগিয়ে ইচ্ছেমতো অর্থ কেলেঙ্কারির ঘটনা ঘটিয়ে চলেছেন।

তিনি আরও বলেন, কিছু অনিয়ম অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিল। সেই তদন্ত কমিটি যে প্রতিবেদন জমা দিয়েছে তাও স্পষ্ট নয়। নতুন করে বিভাগীয় তদন্ত হলে বেরিয়ে আসবে প্রকৃত দুর্নীতির চিত্র।

তবে এসব অনিয়ম-দুর্নীতির বিষয়ে কোনো সদুত্তর দিতে পারেনি চুয়াডাঙ্গা নার্সিং ইনস্টিটিউটের ইনস্ট্রাক্টর ফরিদা ইয়াছমিন। মেরামত ব্যয় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নতুন চেয়ার কেনার বরাদ্দ না থাকায় মেরামত খরচ দেখিয়ে প্রতিষ্ঠানের জন্য বেশ কয়েকটি নতুন চেয়ার কেনা হয়েছে। একইসঙ্গে আসবাবপত্র কিনে মেরামত হিসেবে খরচ দেখানো হয়েছে। এটি ঢাকা অফিসের সঙ্গে আলোচনা করেই করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থীরা যাতে ভালোভাবে চলতে পারে, সেজন্য সবার মতামতের ভিত্তিতে সভায় রেজুলেশন করে কিছু বাড়তি অর্থ নেওয়া হয়েছে। শুধু আমরাই না, অন্যান্য নার্সিং ইনস্টিটিউট আরও বেশি নেয়। হয়তো এটা নেওয়া ঠিক হয়নি।

এ বিষয়ে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. বিদ্যুত কুমার রায় বলেন, এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে অডিট হতে পারে। আমরাও পরামর্শ দেবো অডিটের মাধ্যমে আর্থিক স্বচ্ছতা যাচাই করা হোক।