নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর: গাজীপুর জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্রে জয়দেবপুর বাজারে আধুনিক কিচেন মার্কেট তৈরি হয়েছে। একযুগ আগে আড়াই শতাধিক ব্যবসায়ী প্রায় ১১ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে এখন চরম হতাশ।
গাজীপুর সিটি করপোরেশনের অর্থায়নে নির্মিত কাঁচাবাজারটি চালু না হওয়ায় সড়ক ও ফুটপাত দখল করে বেচাকেনা করছেন দোকানিরা। এরফলে জয়দেবপুর বাজারে সৃষ্টি হয়েছে যানজটে দুর্ভোগ।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ব্যবসায়ীদের সুবিধার্থে ২০০৯ সালে জয়দেবপুর বাজারে কিচেন মার্কেট নির্মাণের উদ্যোগ নেয় তৎকালীন গাজীপুর পৌরসভা। ওই বছরের ১৫ ডিসেম্বর তৎকালীন গাজীপুর পৌরসভার মেয়র বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক মার্কেটটির ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। ২০১২ সালের এপ্রিল মাসে মার্কেটের নির্মাণকাজ শেষ করে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
১৮ হাজার ৬০০ বর্গফুট জায়গার ওপর নির্মিত এই মার্কেটের নিচতলায় রয়েছে মাছ, তরকারি ও অন্যান্য দোকান। দোতলায় রয়েছে রকমারি দোকানের ব্যবস্থা।
আ ক ম মোজাম্মেল হক এমপি হওয়ার পর পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্ব নেন আব্দুল করিম। ২০১৩ সালের ১৬ জানুয়ারি গাজীপুর পৌরসভা সিটি করপোরেশনের অর্ন্তভূক্ত হয়। ২০১৪ সালের ৭ সেপ্টেম্বর গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র অধ্যাপক এম এ মান্নান কিচেন মার্কেটের উদ্বোধন করেন। তবে উদ্বোধন হলেও বিভিন্ন কারণে আর কিচেন মার্কেটে উঠতে পারেননি ব্যবসায়ীরা। এরপর মেয়র জাহাঙ্গীর আলম মেয়র নির্বাচিত হলে চলে আরেক দফা সংস্কার কাজ। তবে মেয়র পদ থেকে জাহাঙ্গীর আলম বহিস্কার হলে কিচেন মার্কেটে উঠতে পারেনি ব্যবসায়ীরা। এরপর ভারপ্রাপ্ত মেয়র ও কাউন্সিল জাবেদ আলী কিচেন মার্কেটে দোকান বরাদ্দের কথা বলে ব্যবসায়ীদের থেকে অতিরিক্ত টাকা নেন। তবে টাকা দিয়েও তারা বুঝে পায়নি দোকান।
দোকানদারদের সঙ্গে কথা বলে ও তাদের চুক্তিপত্র যাচাই করে দেখা যায়, কিচেন মার্কেটের নিচতলায় কাঁচাবাজার ও মাছ বাজার এবং দ্বিতীয় তলায় শপিং দোকান বরাদ্দ দেওয়া হয়। কাঁচাবাজারের জন্য দোকান প্রতি নেওয়া হয় ১ লাখ ২০ হাজার। সেখানে ৭১ জন ব্যবসায়ী থেকে নেওয়া হয় ৮৫ লাখ ২০ হাজার। মাছ ব্যবসায়ীদের দোকান প্রতি নেওয়া হয় ৬১ হাজার টাকা। সেখানে ৮৮ জন মাছ ব্যবসায়ী থেকে নেওয়া হয় ৫৩ লাখ ৬৮ হাজার টাকা। দ্বিতীয় তলার মোট দোকান ৯৬টি। এসব দোকানে সর্বনিন্ম ৮ লাখ, সর্বোচ্চ ১৩ লাখ টাকা বিনিয়োগ হয়। গড়ে ১০ লাখ টাকা হিসাবে টাকার পরিমাণ ৯ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
জয়দেবপুর মৎস্য সমিতির সভাপতি নিখিল চন্দ্র বলেন, ৬ মাসের জন্য বাইরে ব্যবসা করতে বলে ১২ বছরেরও আর মার্কেটে উঠতে পারিনি৷ এই চিপার মধ্যে অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে জোড়াতালি দিয়ে ব্যবসা করছি। ৮৮ জন মাছ ব্যবসায়ী টাকা দিয়েছে, তারা দোকান না পেয়ে এখানে কষ্ট করে ব্যবসা করে আসছে। আমরা চাই দ্রুত আমাদের জায়গা বুঝিয়ে দেওয়া হোক।
জয়দেবপুর কাঁচাবাজার সমিতির ব্যবসায়ী কমিটি সভাপতি মো. বাচ্চু মিয়া বলেন, এই বাজারে ৪২ বছর ধরে কাচা মালের ব্যবসা করে আসছি। কিচেন মার্কেটে দোকান পাওয়ার জন্য ১ লাখ ২০ হাজার টাকা জমা দিয়েও রাস্তায় বেচা-বিক্রি করছি। আমার মতো আরও শতশত লোক টাকা দিয়েছে। প্রথম ১০ ফুট দৈর্ঘ্য ও ১০ ফুট প্রস্থ মাপের দোকান বরাদ্দ দেওয়ার কথা ছিল। দোকানদার বেশি হওয়ায় মেয়র মান্নান আলোচনা সাপেক্ষে আট ফুট করেছিলেন । কিন্তু পরবর্তী সময় সেই দোকান সাড়ে ছয় ফুট করা হয়েছে। কিন্তু এখনো কেউ দোকান বুঝে পায়নি।
ব্যবসায়ী মো. মনির হোসেন বলেন, দোকান বরাদ্দের সময় ব্যবসা করার জন্য ৮ লাখ টাকা ব্যয় করে দোকান বরাদ্দ নিয়েছিলাম। দীর্ঘদিন হয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত তাদের দোকান বুঁঝিয়ে দেয়নি সিটি করপোরেশন। দ্রুত নতুন কিচেন মার্কেটে ব্যবসায়ীদের নিয়ে যাওয়ার জন্য সিটি করপোরেশন কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানানো হয়েছে। বাজার কমিটি ও ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, সিটি কর্পোরেশন বরাবর কয়েকবার লিখিত অভিযোগ দেওয়া হয়েছে কিন্তু কোন কাজ হয়নি।
ব্যবসায়ী অন্তু চৌধুরী বলেন, দ্বিতীয় তলার দোকানের জন্য ৮ লাখ টাকা দিয়েছি কিন্তু দোকান এখনো বুঝে পাইনি৷ বারবার সিটি কর্পোরেশন মেয়র পরিবর্তন হয়, সবাই আশ্বাস দেয় তবে দোকান পাইনা। এতো বড় কিচেন মার্কেট পড়ে রয়েছে অথচ আমরা বাইরে ব্যবসা করছি।
সাবেক গাজীপুর পৌরসভার মেয়র আব্দুল করিম বলেন, ব্যবসায়ী যারা টাকা দিয়েছেন, তাদের লিস্ট, কাগজপত্র সব ঠিক করেছিলাম কিন্তু সিটি কর্পোরেশন হওয়ায় আমি আর সময় পাইনি। আমি সব কমিটির কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে যারা পুরাতন এবং পাওয়ার যোগ্য তাদের দিয়ে এসেছিলাম। বাজারের এসব ব্যবসায়ীরা দরিদ্র। তাদের কেন ঘুরাচ্ছে বছরের পর বছর, আমি বুঝলাম না। আমি সবকিছু ঠিক করে রেখেছিলাম তারা শুধু উদ্বোধন করবে কিন্তু সেটা করেনি। আমার যদি কোন কাজ অসম্পূর্ণ থাকে তাহলে ডেকে পাঠাক।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এ এস এম সফিউল আজম বলেন, ব্যবসায়ীরা তাদের অভিযোগ নিয়ে আমার সঙ্গে আলোচনা করেননি এবং সেখানে তাদের কি কি সমস্যা তাদের বিষয়গুলো খোলাসা করেননি। আমি যতোটুকু জানি ৯৭ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে। ৩ শতাংশ কাজ এখনো বাকি রয়েছে। সামনে আমাদের মিটিংয়ে এ বিষয়টি তুলে ধরা হবে৷ তারা কিভাবে বারবার বরাদ্দ নিয়েছে, সেটিও তুলে ধরা হবে৷
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।