নিজস্ব প্রতিবেদক: রওশন এরশাদকে ‘চেয়ারম্যান’ ঘোষণা করায় জাতীয় পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ এমপি এবং ফখরুল ইমাম এমপিকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর বনানী কার্যালয়ে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদেরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও দলীয় সংসদ সদস্যদের যৌথ সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আজ আনুষ্ঠানিকভাবে এ সিদ্ধান্ত জানানো হবে বলে দলের একাধিক প্রেসিডিয়াম সদস্য জুমবাংলাকে জানান।
সভায় ৩৪ জন প্রেসিডিয়াম সদস্য ও ১০ জন এমপি উপস্থিত ছিলেন। আবার অনেকেই ফোনে জি এম কাদেরের সঙ্গে থাকার একাত্মতা পোষণ করেন। বৈঠকে রওশন এরশাদকে চেয়ারম্যান করার বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করা হয়।
যৌথ সভায় উপস্থিত ছিলেন- কাজী ফিরোজ রশীদ এমপি, জিয়াউদ্দিন আহমেদ বাবলু, সৈয়দ আবু হোসেন বাবলা এমপি, হাফিজ উদ্দিন আহমেদ, গোলাম কিবরিয়া টিপু এমপি, আলহাজ সাহিদুর রহমান, অ্যাডভোকেট শেখ মুহাম্মদ সিরাজুল ইসলাম, অ্যাডভোকেট সালমা ইসলাম এমপি, সৈয়দ মোহাম্মদ আবদুল মান্নান, মাসুদ পারভেজ (সোহেল রানা), হাবিবুর রহমান, সুনীল শুভ রায়, মাহমুদুল ইসলাম চৌধুরী, হাজী সাইফুদ্দিন আহমেদ মিলন, পীরজাদা শফিউল্লাহ আল মনির, লে. জে. (অব.) মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, অ্যাডভোকেট রেজাউল ইসলাম ভূঁইয়া, ফখরুজ্জামান জাহাঙ্গীর, সৈয়দ দিদার বখ্ত, কাজী মামুনুর রশীদ, জাফর ইকবাল সিদ্দিকী, নাজমা আখতার এমপি, আবদুস সাত্তার মিয়া, আলমগীর সিকদার লোটন, এমরান হোসেন মিয়া, মেজর (অব.) রানা মোহাম্মদ সোহেল রানা এমপি, আহসান আদেলুর রহমান এমপি এবং নুরুল ইসলাম তালুকদার।
সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ জীবিত থাকাকালেই বলে গেছেন, তার মৃত্যুর পর দলের হাল ধরবেন তার ছোট ভাই জি এম কাদের। তবে আনিসুল ইসলাম মাহমুদ, রুহুল আমিন হাওলাদার, ফখরুল ইমাম ও মুজিবুল হক চুন্নুসহ দলের একটি অংশ জি এম কাদেরের নেতৃত্ব মানতে নারাজ। এ জন্য তারা এরশাদপত্নী বেগম রওশন এরশাদকে সামনে নিয়ে এসেছেন। গঠনতান্ত্রিকভাবে রওশন এরশাদই জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান বলে দাবি করছেন তারা।
জানা যায়, দলের প্রেসিডিয়ামের বড় অংশ, এমপিসহ সাংগঠনিক নেতারা জি এম কাদেরের নেতৃত্বে আস্থাশীল। জাতীয় পার্টির ‘দুর্গ’ বলে খ্যাত রংপুরসহ সারা দেশেই নেতা-কর্মীরা জি এম কাদেরের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন। গতকাল রংপুরসহ কয়েকটি জেলায় বেগম রওশন এরশাদের কুশপুত্তলিকা দাহ হয়েছে। বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীরা রওশন এরশাদ ও আনিসুল ইসলাম মাহমুদকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছেন।
রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টির সভাপতি ও রংপুর সিটি মেয়র মোস্তাফিজার রহমান মোস্তফা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ভুঁইফোড় নেতারা রওশন এরশাদকে নেতৃত্বে নিয়ে আসতে চান। তাকে মানার প্রশ্নই ওঠে না। এরশাদের নির্দেশনা অনুযায়ী জি এম কাদেরই জাপা চেয়ারম্যান। তার নেতৃত্বেই আমরা আস্থা রাখি। জি এম কাদেরের নেতৃত্বে আমরা রংপুর উপ নির্বাচনেও বিজয়ী হব ইনশা আল্লাহ।
প্রেসিডিয়াম বৈঠকের মাঝখানে বেরিয়ে কাজী ফিরোজ রশীদ উপস্থিত গণমাধ্যম কর্মীদের বলেন, প্রেসিডিয়ামের বৈঠকে বৃহস্পতিবার পার্টির একজন প্রেসিডিয়াম সদস্য দলের সিনিয়র কো-চেয়ারম্যানকে চেয়ারম্যান ঘোষণা করে গঠনতন্ত্র বিরোধী কাজ করেছেন। যারা এর সঙ্গে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য পার্টির প্রেসিডিয়ামের সভায় আলোচনা হয়েছে।
তিনি বলেন, পার্টির একটি কুচক্রী মহল দলের বিরুদ্ধে চক্রান্ত চালাচ্ছে। তাদের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে সারা দেশের নেতা-কর্মীরা অসন্তোষ প্রকাশ করছে। জাতীয় পার্টি চলে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী। এর বাইরে কিছু করা সম্ভব নয়। গত ১৭ আগস্ট অনুষ্ঠিত প্রেসিডিয়ামের সভায় ২৬ জনই বলেছেন, পার্টির চেয়ারম্যানই সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা হবেন। জি এম কাদেরকে সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা করার জন্য পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাসহ ১৫ জন এমপির সম্মতিপত্রসহ স্পিকারের কাছে পাঠানো হয়েছে। এ সময় পাশে বসা পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য জিয়াউদ্দিন বাবলুও জি এম কাদের পার্টির চেয়ারম্যানের পক্ষে নানা যুক্তি তুলে ধরেন। মোস্তফা আল মাহমুদসহ কেন্দ্রীয় নেতারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
গতকাল জাপার বনানী কার্যালয়ে দিনভর বৈঠক করেন জিএ ম কাদের। হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া রংপুর-৩ আসনে প্রার্থী বাছাইয়ে পার্লামেন্টারি বোর্ড মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নেয়। তিনজন সাক্ষাৎকার দিলেও আসেননি এরশাদপুত্র রাহগীর আল মাহি সাদ।
সূত্র জানায়, এরশাদপুত্র রাহগীর আল মাহি সাদ নয়, রংপুর-৩ আসনে দলের মনোনয়ন পেতে যাচ্ছেন রংপুর মহানগর জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক এসএম ইয়াসির। দলীয় মনোনয়ন ফরম কিনলেও সাদ কেন সাক্ষাৎকার দিতে আসেননি- তা জানা যায়নি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।