আবু কালাম: আকারে ছোট হলেই তাকে ছোটগল্প বলা যায় না। ছোটগল্পের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো এতে বিন্দুতে সিন্ধুর বিশালতা থাকতে হবে, অর্থাৎ অল্প কথায় অধিক ভাব ব্যক্ত করতে হবে। ছোটগল্পে উপন্যাসের বিস্তার থাকে না, থাকে ভাবের ব্যাপকতা। উপন্যাস পড়ে পাঠক পরিতৃপ্তি লাভ করে, কিন্তু ছোটগল্প থেকে পায় কোনো ভাবের ইঙ্গিতমাত্র। ক্ষুদ্র কলেবরে নিগূঢ় সত্যের ব্যঞ্জনায়ই এর সার্থকতা। যেটা মোঃ সাইফুর রহমান তাঁর প্রথম গল্পের বই গুনিনে করতে পেরেছেন।
মোট ২৩টি গল্পে সজ্জিত প্রথম সংকলনটিতে রয়েছে রহস্য, থ্রিলার, রোমান্স, ট্র্যাজিক ও মনস্তাত্তিক ধাঁচের গল্প যেগুলির পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে জীবনঘনিষ্ঠতার ছোঁয়া।
বইটির প্রথম গল্পের নাম প্রিয়জন। গল্পের নায়ক আহসান সাহেব। স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে বসবাস। এক দুর্ঘটনায় এলোমেলো হয়ে যায় তার জীবন। মনে হবে- চোখ বন্ধ করে বলা যাবে গল্পের শেষ পরিণতি কী। কিন্ত, অনুমান হোঁচট খায় কয়েক ধাপে।
গুনিন সংকলনের নাম হলেও এ নিয়ে রয়েছে একটি গল্পও। বিশেষ ক্ষমতাসম্পন্ন লোককে গুনিন বলা হয়। এই গল্পে গুনিন হচ্ছেন শরাফত আলী। এই গুনিনকে কেন্দ্র করে ১৯৩১ সালের দিকের বাঙালির যাপিত জীবন যেন অসাধারণভাবে শিল্পীর তুলিতে ফুঁটে উঠেছে।
প্রিয়জন, খুঁজি তোমায়, অপেক্ষা, মায়া গল্পগুলো যতবার পড়ি ততবার আবেগ-আপ্লুত হই। গল্পের চরিত্রগুলো আবেগ, অনুভূতি ও হৃদয় ছুঁয়ে যায়। খোকা গল্পে হাস্যরসের মাধ্যমে শহুরে মধ্যবিত্তের বাস্তবচিত্র এঁকেছেন।
বইটির উল্লেখযোগ্য আরো কিছু গল্প- ধোঁকা, খোকা, বাবা, নাফিজার খোঁজে, নীলার নীলপদ্ম, সারপ্রাইজ ও হƒদিতা। ঝরঝরে লেখা। অসাধারণ উপমার প্রয়োগ। সত্যি, গল্পগুলো পড়ে লেখকের লেখার মায়ায় পড়ে যাবে যে কেউ। প্রত্যেকটি গল্পের টানটান উত্তেজনা চুম্বকের মতো গল্পের গভীরে টেনে নিয়ে যায়। কী অনন্য শব্দ চয়ন প্রায় প্রতিটি গল্প বুননের দিক দিয়ে প্রবল শক্তিশালী।
লেখক অসাধারণ দক্ষতায় মানবমন আর সমাজের ব্যাধিগুলোকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়েছেন। বিভিন্ন গল্পে উঠে এসেছে বর্তমান সময়ের পারিবারিক অবক্ষয়ের চিত্রও।
এই বইয়ে লেখকের যেসব অনন্য বৈশিষ্ট্য চোখে পড়েছে তা হলো-এখানে গতানুগতিক অন্য গল্পের মতো মানবীয় প্রেমটা প্রকট হয়ে উঠেনি। কল্পনাশক্তির অসাধারণ প্রয়োগ ঘটিয়েছেন। লেখক পাঠককে গল্পের একটি প্লট হতে অন্য প্লটে নিয়েছেন আলতো করে; যেন পাঠকের ঘোর কেটে না যায়।
প্রায় প্রত্যেকটি গল্পে পাঠকদের রহস্যের মধ্যে রেখেছেন লেখক। গল্পের শেষ লাইনটি না পড়া পর্যন্ত মূল ঘটনায় পৌঁছতে পারছেন না পাঠক। অর্থাৎ গল্পগুলো যেভাবে টানটান উত্তেজনা নিয়ে পাঠককে শেষের দিকে নিয়ে যায়, গল্পের শেষেও উত্তেজনার রেশটা রয়ে যায়। এই মুন্সিয়ানা খুব কম লেখকের মধ্যেই দেখা যায়।
সবশেষে বলা যায়, অভিষেক বইটি দিয়েই লেখক বাংলা সাহিত্যে তাঁর শক্তিশালী আগমনী বার্তা দিয়েছেন। গুনিন বইটি লেখকের দীর্ঘ সাহিত্য ইনিংসে মাইলফলক হয়ে থাকবে।
বইয়ের নাম: গুনিন
লেখক: মোঃ সাইফুর রহমান
প্রকাশক: আফসার ব্রাদার্স
প্রচ্ছদ: রহমান আজাদ
বইটি পাওয়া যাবে: অমর একুশে গ্রন্থমেলার
আফসার ব্রাদার্স এর স্টলে
স্টল নং: ২৮৯-২৯২
এছাড়াও পাওয়া যাবে চট্টগ্রামের বাতিঘরে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।