জুমবাংলা ডেস্ক: ভারতে পাচার হওয়া এক কিশোরী তিন মাসের নির্মম নির্যাতন ও বন্দিদশা থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে ফিরে রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় মানবপাচার প্রতিরোধ ও দমন আইনে মামলা করেছে।
মামলার পরিপ্রেক্ষিতে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত ১২ আসামির মধ্যে তিনজনকে সাতক্ষীরার সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ১২ আসামির মধ্যে পাঁচজন বাংলাদেশে অবস্থান করছে বলে জানিয়েছেন তেজগাঁও জোনের ডিসি মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ।
বুধবার (২ জুন) সকালে তেজগাঁওয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরও জানান, ২০২১ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি কুষ্টিয়ায় লালন শাহ’র মাজারে আয়োজিত টিকটিক হ্যাংআউটে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে ভারতে পাচার করে তাকে।
তিনি আরও বলেন, আন্তর্জাতিক মানবপাচারকারীর চক্রের সহায়তায় কৌশলে ভিকটিমকে ভারতে পাচার করে হৃদয় ওরফে টিকটক বাবু। পাচারের পর ভিকটিমকে ব্যাঙ্গালুরুতে পর্যায়ক্রমে কয়েকটি বাসায় তাকে আটকে রাখা হয়। সেখান থেকে তাকে চেন্নাইয়ের একটি হোটেলে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয় মেয়েটি। পরে সেখান থেকে কৌশলে মেয়েটি বাংলাদেশে পালিয়ে এসে হাতিরঝিল থানায় পাচারকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করে।
ভুক্তভোগীসহ বিভিন্ন সদস্যদের নিয়ে ২০২০ সালে নারায়ণগঞ্জে টিকটক হ্যাংআউট, গাজীপুরে পুল পার্টির আয়োজন করে হৃদয় বাবু। ২০২১ সালে ১৯ ফেব্রুয়ারি বাউল লালন শাহের মাজারে টিকটক হ্যাংআউটে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে সুকৌশলে তাকে ভারতে পাচার করে বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়। পাচারকারীদের কাছ থেকে ২টি মোটর সাইকেল, ১টি ডায়েরি, ৪টি মোবাইল ফোন ও ১টি ভারতীয় সিম উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ জানায়, টিকটকের নেতিবাচক কাজের জন্য টিকটককে আইনের আওতায় আনা হবে।
এদিকে গতকাল ভারতে নারীপাচার এবং সম্প্রতি বাংলাদেশি তরুণীকে নির্যাতনের ঘটনায় আন্তর্জাতিক নারীপাচার চক্রের অন্যতম মূল হোতা আশরাফুল মণ্ডল ওরফে বস রাফি ও তার সহযোগী ম্যাডাম সাহিদাসহ চার সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব।
সোমবার (৩১ মে) থেকে মঙ্গলবার (১ জুন) সকাল পর্যন্ত র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা ও র্যাব-৩ এর অভিযানে ঝিনাইদহ সদর, যশোরের অভয়নগর ও বেনাপোল হতে নারী পাচার চক্রের চারজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
রাফি (৩০) ও সাহিদা (৪৬) ছাড়া বাকি দুজন হলেন- ইসমাইল সরদার (৩৮) ও মো. আব্দুর রহমান শেখ ওরফে আরমান শেখ (২৬)। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা পাচার চক্রের সঙ্গে জড়িত বলে স্বীকারোক্তি দিয়েছে বলে জানায় র্যাব।
রাজধানীর কারওয়ানবাজারে র্যাবের মিডিয়া সেন্টারে এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানান র্যাবের গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।
তিনি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, এ চক্রটি বিভিন্ন প্রতারণামূলক ফাঁদে ফেলে এবং প্রলোভন দেখিয়ে নারী ও তরুণীদের পার্শ্ববর্তী দেশে পাচার করত। দেশি-বিদেশিসহ প্রায় ৫০ জন সংঘবদ্ধ চক্রের সঙ্গে তারা জড়িত রয়েছে। এই চক্রের মূলহোতা রাফি এবং গ্রেপ্তারকৃত অন্য সদস্যরা তার ঘনিষ্ঠ সহযোগী। এছাড়া ভারতে গ্রেপ্তারকৃত টিকটক হৃদয় তার অন্যতম সরবরাহকারী বা এজেন্ট। এছাড়া তার আরও এজেন্ট বা সরবরাহকারী রয়েছে।
টিকটক হৃদয় অনলাইনে টিকটক ও বিভিন্ন সোস্যাল মিডিয়া গ্রুপের তরুণীদের টিকটক মডেল বানানো ও অন্যান্য প্রলোভন দেখিয়ে উচ্ছৃঙ্খল জীবনে আকৃষ্ট ও অভ্যস্ত করাত। পরবর্তীতে তাদেরকে পাশ্ববর্তী দেশ বা উন্নত দেশে বিভিন্ন মার্কেট, সুপারশপ, বিউটি পার্লারসহ বিভিন্ন ধরনের ভালো বেতনের চাকরির প্রলোভন দেখিয়ে বস রাফির মাধ্যমে ভারতে পাচার করত। মূলতঃ যৌনবৃত্তিতে নিয়োজিত করার উদ্দেশ্যেই পার্শ্ববর্তী দেশের দক্ষিণ অঞ্চলে পাচার করা হত। পাচারের পর তাদেরকে বিভিন্ন নেশা জাতীয়/মাদকদ্রব্য সেবন করিয়ে জোরপূর্বক অশালীন ভিডিও ধারণ করে ব্ল্যাকমেইল করত যাতে তারা এ ধরনের কাজে বাধ্য হয় জানায় র্যাব।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।