জুমবাংলা ডেস্ক: করোনাভাইরাস মহামারি ছড়িয়ে পড়ার এবং সংক্রমণ বাড়তে থাকার পর দেখা যাচ্ছে বাংলাদেশে কোভিড-১৯ এর চিকিৎসায় দরকারি সামগ্রী যেমন অক্সি-মিটার, পোর্টেবল অক্সিজেন ক্যান, পোর্টেবল ভেন্টিলেটর, ফেস-শিল্ড এমনকী অক্সিজেন সিলিন্ডারের বিক্রিও ব্যাপকভাবে বেড়ে গেছে।
দেখা যাচ্ছে কোভিড-১৯ না হলেও অনেকে অক্সিজেন ভর্তি সিলিন্ডার কিনে বাড়িতে রেখে দিচ্ছেন।
বিবিসি বাংলা বৃহস্পতিবার বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান অক্সিজেন প্রস্তুতকারী আন্তর্জাতিক কোম্পানি লিন্ডে-র বিক্রয় কেন্দ্রে খবর নিয়ে জেনেছে যে, অক্সিজেনের চাহিদা এতটাই বেড়েছে যে সরবরাহ কুলিয়ে উঠতে পারছেন না তারা।
কিন্তু বিশেষজ্ঞরা বলছেন নিজেই বাজার থেকে অক্সিজেন সিলিন্ডার কিনে এনে কোন স্বাস্থ্য কর্মীর তত্ত্বাবধান ছাড়া সেই অক্সিজেন ব্যবহারের নানা ঝুঁকির দিক রয়েছে, যেগুলো মানুষের জানা প্রয়োজন।
লন্ডনে করোনাভাইরাসে রোগীদের চিকিৎসা করছেন ডাক্তার আবদুল্লাহ জাকারিয়া।
বিবিসি বাংলাকে ডাক্তার জাকারিয়া বলছেন বাসায় বসে অক্সিজেন চিকিৎসা নেবার ক্ষেত্রে দুটি বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ:
১. ডাক্তার রোগীকে দেখার পর নির্ধারণ করেছেন যে, ঠিক কতটুকু পরিমাণ অক্সিজেন তার চিকিৎসার জন্য প্রয়োজন, এবং
২. অক্সিজেন বাড়িতে রাখার জন্য রোগী সঠিক এবং পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছেন।
ডা. জাকারিয়া বলছেন কেউ যদি নিজে বাজার থেকে অক্সিজেন কিনে ব্যবহার করতে শুরু করেন তাহলে সেক্ষেত্রে বিপত্তি ঘটতে পারে যদি জানা না থাকে ঠিক কতটুকু অক্সিজেন আপনি নেবেন। কারণ বেশি অক্সিজেন নিলে তা শরীরে অক্সিজেনের বিষক্রিয়া ঘটাতে পারে।
দ্বিতীয়ত অক্সিজেন সিলিন্ডার যদি এমন জায়গায় রাখা হয়, যেখানে আগুনের স্ফুলিঙ্গ এসে পড়তে পারে, সেটা গুরুতর অগ্নিকাণ্ড ঘটাতে পারে। কারণ সিলিন্ডারের বিশুদ্ধ অক্সিজেন অত্যন্ত দাহ্য একটা পদার্থ। কাজেই সিলিন্ডার খুবই নিরাপদে মজুত রাখার ব্যবস্থা করতে হবে।
“আমরা জানি অক্সিজেন নিজে নিজে জ্বলে না, কিন্তু জ্বলতে সাহায্য করে। অক্সিজেন না থাকলে আগুন নিভে যায়। কিন্তু ধরুন কাছে আগুনের স্ফুলিঙ্গ আছে, কেউ ধুমপান করছেন বা গ্যাসের চুলো ব্যবহার করছেন বা দাহ্য কোন কিছু কোন কারণে আশেপাশে রয়েছে, তাহলে সেটা বিপদ ডেকে আনতে পারে।”
অক্সিজেন সিলিন্ডারের মুখ যদি শক্ত করে বন্ধ থাকে, তাহলে কাগজে কলমে বিপদের ঝুঁকি থাকে না, তিনি বলছেন, “কিন্তু অনেক সময় হয় কি, দেখা যায় কোন না কোন ভাবে সেখান থেকে লিক হচ্ছে, কোন কারণে হয়ত পাইপটা খোলা আছে বা ব্যবহার করে আপনি রেখে দিয়েছেন- বন্ধ করতে ভুলে গেছেন। অক্সিজেনের কোন গন্ধ নাই, রং নাই, যদি লিকও করে, বোঝার কোন উপায় নাই।”
তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেন সে কারণে অক্সিজেন সিলিন্ডার থেকে বড়ধরনের অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি থাকে।
মানুষের শরীরের জন্য ক্ষতি
ডা. জাকারিয়া বলছেন কোন স্বাস্থ্য কর্মী বা চিকিৎসকের তত্ত্বাবধান ছাড়া অক্সিজেন নেবার ব্যাপারে দুটো ক্ষতির কথা মাথায় রাখা দরকার।
বাতাসে যে প্রায় ২১শতাংশ অক্সিজেন থাকে তা আমাদের শরীরের জন্য দরকার।
“প্রথমত এই প্রয়োজনীয় অক্সিজেন আমরা নি:শ্বাসের সঙ্গে নিচ্ছি। তার অতিরিক্ত অক্সিজেন যদি আমরা দিই যেটার প্রয়োজন নাই, তাহলে সেক্ষেত্রে অক্সিজেনের যে বিষক্রিয়া হতে পারে, তাতে সিজার বা খিঁচুনি হতে পারে, চোখে জ্বালা হতে পারে, ভিস্যুয়াল ফিল্ড লস হতে পারে অর্থাৎ চোখে না দেখতে পারেন, কাশি হতে পারে, ব্যথা হতে পারে, এমনকী শ্বাসপ্রশ্বাসের ক্ষতি হতে পারে, পেশী জার্কি হতে পারে (পেশীর স্পন্দন অস্বাভাবিক হতে পারে) এরকম অনেক উপসর্গ দেখা দিতে পারে।”
ছবির কপিরাইটGETTY IMAGES
Image caption
রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা মাপার জন্য পালস অক্সিমিটার ভাল যন্ত্র
ডাক্তার জাকারিয়া বলছেন এসব উপসর্গ দেখা দিতে পারে যদি প্রয়োজনের অতিরিক্ত অক্সিজেন মানুষের শরীরে ঢোকে- অর্থাৎ আপনার অক্সিজেনের প্রয়োজন নেই অথচ আপনি অক্সিজেন ব্যবহার করছেন ।
এছাড়াও যাদের ইতোমধ্যেই শ্বাসতন্ত্রের অন্য কোন রোগ রয়েছে যেমন সিওপিডি (ফুসফুসের রোগ যেখানে শ্বাস নিতে অসুবিধা হয়) বা ব্রঙ্কাইটিস তাদের শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা এমনিতেই কম থাকে।
ডা. জাকারিয়া বলছেন এসব রোগী যদি বাইরে থেকে বাড়তি অক্সিজেন নেন, তাহলে তাদের ফুসফুসের অক্সিজেন ধারণক্ষমতা অনেকসময় ব্যাহত হতে পারে। “বাইরে থেকে অতিরিক্ত অক্সিজেন নেবার সীমিত ক্ষমতার কারণে তাদের ফুসফুসের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যেতে পারে।”
তিনি বলছেন এসব রোগীদের অবশ্যই অক্সিজেন ব্যবহারের আগে ডাক্তারের পরামর্শ নেয়া উচিত। কারণ যথাযথ চিকিৎসা পরামর্শ ছাড়া এসব রোগী বাড়তি অক্সিজেন নিলে তাদের শ্বাসপ্রশ্বাস বন্ধ হয়ে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।
“অক্সিজেনের ফ্লো-রেট অর্থাৎ কী পরিমাণ অক্সিজেন প্রবাহ রোগীকে দেয়া হবে- দুই লিটার প্রতি মিনিটে, না কি পাঁচ বা দশ লিটার মিনিট প্রতি এই জ্ঞানটা তো সাধারণ মানুষের ভেতরে নাই। তাই যাদের ইতোমধ্যেই ফুসফুসের রোগ রয়েছে তাদের ক্ষেত্রে এটা চরম ঝুঁকির হতে পারে।”
ডাক্তার জাকারিয়া বলছেন কেউ যদি করোনা মহামারির সময় অক্সিজেন সিলিন্ডার ব্যবহার না করে বিকল্প কোন ব্যবস্থার কথা চিন্তা করতে চান তাহলে পালস অক্সিমিটারের ব্যবহার কাজে লাগতে পারে।
ছোট্ট এই যন্ত্রটি আঙুলে লাগিয়ে রাখলে সেটি আপনার অক্সিজেনের মাত্রা বলে দেবে। “শরীরের ভেতর, রক্তের ভেতর কতটুকু অক্সিজেন রয়েছে সেটা পালস অক্সিমিটারের মাধ্যমে জানা যাবে। যেমন থার্মোমিটার দিয়ে জ্বর মাপে তেমনই এই যন্ত্র দিয়ে রক্তে অক্সিজেনের মাত্রা নিরূপণ করা সম্ভব।”
তিনি বলছেন একজন সুস্থ মানুষের ক্ষেত্রে রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ ৯৪ থেকে ৯৮ শতাংশের মধ্যে থাকে তাহলে ধরে নেয়া যায় তার রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ স্বাভাবিক রয়েছে।
করোনাভাইরাস রোগীরা বাসায় থেকে চিকিৎসা নিয়ে ভাল হয়ে যেতে পারে । যেভাবে জ্বর মাপা হয় সেভাবে যদি তাদের অক্সিজেনের মাত্রার দিকে নজর রাখা যায়, তাহলে সেটা রোগীর জন্য কাজে লাগতে পারে।
করোনাভাইরাস শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা কমিয়ে দিতে পারে।
অক্সিজেন মাপার ব্যবস্থা থাকলে, যদি অক্সিজেন খুব কমে গেছে দেখা যায়, তখন ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী কোন মাত্রায় তাকে অক্সিজেন দেয়া উচিত, পরামর্শ নিয়ে সেটা দেয়াই সবথেকে নিরাপদ। সূত্র: বিবিসি বাংলা
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।