জুমবাংলা ডেস্ক: সরস্বতী পূজা উপলক্ষে সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উপজেলায় আড়াইশত বছরের ঐতিহ্যবাহী দইমেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তবে মেলায় নেই আগের সেই জৌলুশ। ক্রেতা কমে যাওয়ার সঙ্গে কমেছে দোকান ও বিক্রেতা।
মেলাটি মূলত শ্রী পঞ্চমী মেলা হলেও এলাকাবাসীর মুখে মুখে দইমেলা নামে পরিচিত। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সরস্বতী পূজা উপলক্ষে দিনব্যাপী দইয়ের মেলাটি আড়াইশত বছরের পুরনো।
বৃহস্পতিবার (২৬ জানুয়ারি) সকাল থেকে তাড়াশ বাজার ও সিরাজগঞ্জ শহরের মুজিব সড়কে দইমেলা বসেছে।
স্থানীয়রা জানান, মেলা উপলক্ষে বুধবার (২৫ জানুয়ারি) বিকেল থেকে সিরাজগঞ্জ ও বগুড়ার নামিদামি ঘোষরা দই নিয়ে এসেছে। দিনব্যাপী মেলায় দই ছাড়াও খাবার ঝুরি মুড়ি, মুড়কি, চিড়া, মোয়া, বাতাসা, কদমা, খেঁজুরের গুড়ের দোকান বসেছে।
চলনবিল অধ্যুষিত সিরাজগঞ্জের তাড়াশের তৎকালীন জমিদার পরম বৈঞ্চব বনোয়ারী লাল রায় বাহাদুর প্রথম দইমেলার প্রচলন করেন। এলাকায় জনশ্রুতি আছে, জমিদার রায় বাহাদুর নিজেও দই ও মিষ্টান্ন পছন্দ করতেন। জমিদার বাড়িতে আসা অতিথিদের আপ্যায়নে এ অঞ্চলে ঘোষদের তৈরি দই পরিবেশন করা হতো। জমিদার বাড়ির সামনে রশিক রায় মন্দিরের মাঠে সরস্বতী পূজা উপলক্ষে দিনব্যাপী দইমেলার প্রচলন শুরু হয়। সেই ধারাবাহিকতায় প্রতি বছর মাঘ মাসে সরস্বতী পূজার দিন শ্রী পঞ্চমী তিথিতে তাড়াশ বাজারের পাশাপাশি সিরাজগঞ্জ শহরে দইমেলা বসে।
মেলায় দই নিয়ে আসা জেলার এনায়েতপুরের রনি মিষ্টান্ন ভান্ডারের রঞ্জিত ঘোষ বলেন, ‘১৫ মণ দই নিয়ে এসেছি। দইয়ের চাহিদা থাকায় দুপুরের মধ্যে শেষ হয়ে যাবে। তবে দুধের দাম, জ্বালানি খরচ, শ্রমিক খরচ, দই পাত্রের দাম বাড়ার কারণে দইয়ের দামও বেড়েছে।
রায়গঞ্জের চান্দাইকোনা থেকে আসা দই বিক্রেতা দিলীপ জানান, বাপ-দাদার আমল থেকে তিনি দই নিয়ে মেলায় আসেন। প্রতি বছর ১০ থেকে ১২ মণ দই বিক্রি করেন তিনি।
সন্তান নিয়ে মেলায় দই কিনতে এসেছেন পঞ্চশোর্ধ্ব লাল কুমার। তিনি বলেন, ‘আমার জন্মের পর থেকে দইমেলা দেখে এসেছি।’ দই কিনতে আসা অমিত্র সাহা বলেন, ‘প্রতি বছর সকালে এই মেলা থেকে দই কিনি। সরস্বতী পূজা উপলক্ষে বাড়িতে অনেক অতিথি এসেছে। তাদের আপ্যায়নের জন্য দই কিনছি।’
আরেক ক্রেতা বলেন, ‘মেলা উপলক্ষে বোন, বোনের স্বামীসহ অনেক আত্মীয়-স্বজন এসেছে। এখানকার দই সুস্বাদু। প্রতি বছর ১০ থেকে ১২ কেজি দই কিনে থাকি। তবে এবার দাম বেশি। তারপরও ৫ কেজি দই কিনেছি।’
তাড়াশ উপজেলা সনাতন সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সনাতন কুমার দাস বলেন, ‘ঐতিহ্য মেনে এখনো তাড়াশে দই মেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তবে আগের মতো সেই জৌলুশ নেই। অল্প কিছু দোকান বসেছে। তবে মেলা সুষ্ঠু পরিবেশে সম্পন্ন করতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।’
সিরাজগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সন্তোষ কুমার কানু বলেন, সিরাজগঞ্জ ও তাড়াশ উপজেলার এই মেলা প্রায় আড়াইশত বছরের পুরনো। আগে মেলায় ভিড় এত বেশি থাকতো, ঢোকা যেত না। কিন্তু এবার তাড়াশ ও শহরে মাত্র ১৫-১৮টি দোকান বসেছে। মানুষের মধ্যেও সেই আগ্রহ নেই। এখন আর মেলা উপলক্ষে নেই সাজ সাজ ভাব। আগের মতো আর আসে না মেয়ে-জামাতা বা আত্মীয়-স্বজনরা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।