জুমবাংলা ডেস্ক : নারায়ণগঞ্জে অবস্থিত বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতাধীন ড্রেজার পরিদপ্তরে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের শাসিয়েছেন পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক এমপি।
বুধবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ড্রেজার পরিদপ্তরের কার্যালয়, ওয়ার্কশপ, স্টোররুম, জাহাজ, ড্রেজার পরিদর্শনকালে প্রতিমন্ত্রীর তোপের মুখে পড়েন দায়িত্বরত প্রকৌশলীরা।
সে সময় ১২৯২ কোটি ২৪ লাখ ৩১ হাজার টাকা ব্যায়ে বাংলাদেশের নদী খননের জন্য ড্রেজার ও যন্ত্রপাতি ক্রয় প্রকল্পটির স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মন্ত্রী।
দায়িত্বরত প্রকৌশলীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধুকে নেদারল্যান্ডস সরকার ’৭৪ সালে যে ড্রেজারগুলো উপহার দিয়েছিল, সেগুলো এখনো চলছে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে যেসসব ড্রেজার নতুন কেনা হয়েছে সেগুলো কিছুদিন পর কেনো বিকল হয়ে যাচ্ছে? নতুন গাড়ি কিংবা রিকন্ডিশন গাড়ি কেনা হলেওতো পাঁচ বছর ওয়ার্কশপে পাঠাতে হয় না। তাহলে আমাদের নতুন কেনা ড্রেজার কেনো ওয়ার্কশপে পাঠাতে হবে? এত লোক বিদেশে ট্রেনিংয়ে যাচ্ছে, অথচ মেকানিক্যাল বিভাগের প্রকৌশলীদের কেনো ট্রেনিংয়ে পাঠানো হচ্ছে না ‘
প্রকল্পটিতে ২১টি ড্রেজার, ১২টি টাগবোট, ২৩টি বিভিন্ন ধরনের এক্সাভেটর (ভেকু), ৩টি ফর্কলিফট, ৫টি বার্জ, ২টি স্পিড বোট কেনার কথা ছিল। অথচ ৯টি ড্রেজার, ৩টি টাগবোট, ৫টি বিভিন্ন ধরনের এক্সাভেটর (ভেকু), ৩টি ফর্কলিফট কিনতেই ৬৫১ কোটি ৫২ লাখ ৩৯ হাজার টাকা ব্যয় করা হয়েছে।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘৯টি ড্রেজার কিনতেই যদি প্রকল্পটির অর্ধেক অর্থ ব্যয় হয়, তাহলে বাকী ১২টি ড্রেজারসহ অন্যান্য সামগ্রী কীভাবে কেনা সম্ভব হবে? এই প্রকল্প নিয়ে প্রধানমন্ত্রী অবশ্যই প্রশ্ন তুলবেন।’
এ ছাড়া পাঁচটি নতুন ড্রেজার বেইজ নির্মাণের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন প্রতিমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘আমাদের নিজেদের এক সুতা জমি বেদখল হলে কিংবা নিজের সম্পদ নষ্ট হলে যেমন কষ্ট লাগে, তেমনি পানি উন্নয়ন বোর্ডের ড্রেজার পরিদপ্তরের সম্পদ বিনষ্ট হতে দেয়া যাবে না। এই সম্পদকেও নিজের সম্পদ বলেই মনে করতে হবে।‘
সে সময় ড্রেজারের ২০৬ জন অস্থায়ী শ্রমিকের চাকরি স্থায়ীকরণের দাবি জানানো হয়। পাউবোর ঊদ্ধর্তন কর্মকর্তাদের প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘যারা দীর্ঘদিন কাজ করে অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে, তাদেরকে নিয়োগের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিতে হবে।’
পরে তিনি ড্রেজার পরিদপ্তরের কার্যালয়, ওয়ার্কশপ, স্টোররুম, জাহাজ, ড্রেজার পরিদর্শন করেন। সে সময় প্রতিমন্ত্রীর তোপের মুখে পড়েন উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী নুরুদ্দিন আহমেদ, নির্বাহী প্রকৌশলী সৈকত বিশ্বাসসহ কয়েকজন কর্মকর্তা।
গণমাধ্যমের প্রশ্নের উত্তরে প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক বলেন, ‘ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে নদীকে গতিশীল করতে আরো যা প্রয়োজন সবই করা হবে। সব যায়গায় দুর্নীতিগ্রস্ত লোক থাকে। তবে আমরা এখানে সতর্ক করেছি, যেন এরকম কিছু শোনা না যায়। সব যায়গায় কম বেশি দুর্নীতি আছে। আমি দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি যেন দুর্নীতি কম হয় এবং সবকিছু একটা হিসাবের মধ্যে থাকে। ’
তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের সব নদীকে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে সচল রাখতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা রয়েছে। ৬৪ জেলায় ৪৪৮টি খাল খনন প্রকল্প চালু রয়েছে। পরবর্তীতে আমরা আরো ৫০০ খাল খনন করব।’
ড্রেজার পরিদপ্তরে প্রকৌশলীদের সঙ্গে সভায় উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. জসিমউদ্দিন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুভাস চন্দ্র সাহা, পানি উন্নয়ন বোর্ডের ডিজি মাহফুজুর রহমান, অতিরিক্ত ডিজি চিফ ইঞ্জিনিয়ার আজিজুল হক, আব্দুল ওহাব, তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম, সেলিম সরকারসহ বিভিন্ন বিভাগে দায়িত্বরত প্রকৌশলীগণ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।