দীঘি কেন জমাতে পারছেন না
বিনোদন ডেস্ক : প্রার্থনা ফারদিন দীঘি। ঢাকাই চলচ্চিত্রে শিশুশিল্পী হিসেবে বেশ জনপ্রিয়তা কুড়িয়েছিলেন এবং একাধিকবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারও অর্জন করেছিলেন। কিন্তু পরবর্তীতে নায়িকা হিসেবে বড় পর্দায় তাঁর অভিষেক ঘটলেও এখন পর্যন্ত তিনি দর্শকমনে নায়িকার স্থান গড়ে নিতে পারেননি।
২০০৬ সালে শিশুশিল্পী হয়ে চলচ্চিত্রে আসা দীঘি ২০২১ সালে নায়িকা হয়ে বড় পর্দায় অভিষেক ঘটান প্রখ্যাত চলচ্চিত্র নির্মাতা দেলোয়ার জাহান ঝন্টু নির্মিত ‘তুমি আছ তুমি নেই’ ছবিটির মাধ্যমে। প্রথম ছবিতেই নায়িকা হিসেবে সাড়া জাগাতে ব্যর্থ হন দীঘি। এরপর একই বছর তাঁর অভিনীত ‘টুঙ্গীপাড়ার মিয়াভাই’, ২০২২ সালে ওয়েব ফিল্ম ‘শেষ চিঠি’ মুক্তি পায়। কিন্তু চলচ্চিত্রপাড়ার মানুষ এবং দর্শকের মনে একটি ছবি দিয়েও নায়িকা হিসেবে নিজস্ব অবস্থান তৈরিতে সফল হতে পারেননি দীঘি। কিন্তু কেন? এই প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন কয়েকজন সিনিয়র ও এই সময়ের চলচ্চিত্র নির্মাতা। প্রথমেই প্রখ্যাত চলচ্চিত্র
পরিচালক ছটকু আহমেদ বলেন, ‘একজন চিত্রনির্মাতা হিসেবে আমি মনে করি তাঁর ফেস কাটিং নায়িকাসুলভ নয়, তিনি শিশুশিল্পী হয়ে চলচ্চিত্রে এসেছিলেন এবং জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন। তাঁর মধ্যে এখনো শিশুসুলভ ভাব রয়ে গেছে। তাই দর্শকের চোখে তিনি নায়িকা হিসেবে অ্যাডজাস্ট হতে পারছেন না। তাছাড়া নায়িকা হিসেবে তিনি নিজেকে জমাতে না পারার আরও কারণ রয়েছে। যেমন- ভালো চরিত্র পাচ্ছেন না, টিকটক করে বদনাম হয়েছে তাঁর, টিকটকের কারণে দর্শকের মনে তাঁর সম্পর্কে একটি নেতিবাচক ধারণা তৈরি হয়েছে, অনেক সিনিয়র নির্মাতার সঙ্গে তাঁর দুর্ব্যবহার- এমন অনেক কারণেই তিনি নায়িকা হিসেবে নিজেকে জমাতে ব্যর্থ হয়েছেন। আমি বলব শুধু রূপ-লাবণ্য দিয়ে সফল হওয়া যায় না। গুণটা আসল। তাঁকে নায়িকা হিসেবে শক্ত ভিতের ওপর দাঁড়াতে হলে চলচ্চিত্র ও চরিত্রের প্রতি মনোযোগী হতে হবে এবং এসবের সঙ্গে মিশে যেতে হবে।’
আরেক প্রখ্যাত সিনিয়র চলচ্চিত্রকার মালেক আফসারি বলেন, ‘আমার আক্ষেপ সব নায়িকা কিন্তু অন্য নায়িকার বুদ্ধিতে চলেন না বা কিছু শেখেন না। তাঁরা চলেন তাঁদের মা, বাবা, বা অন্য কোনো কাছের মানুষের কথায়। দীঘিও মনে হয় অন্য কারও বুদ্ধিতে চলতে গিয়ে নায়িকা হয়ে ওঠতে পারছেন না। তাঁর সঙ্গে তাঁর এক মামা থাকেন। আমার ধারণা এই মামাই দীঘির নায়িকা হয়ে ওঠার পথে বড় বাধা। ওই লোক তাঁর কেমন মামা তা আমি জানি না। কারণ লোকটার সঙ্গে দীঘি যেভাবে টিকটক করেন তাতে সাধারণ মানুষ ও মিডিয়ার কাছে দীঘিকে নিয়ে একটি বিরূপ ধারণা তৈরি হয়েছে। একটি ঘটনার কথা বলি, প্রযোজক সেলিম খান আমাকে বলেছিলেন দীঘি ও শান্তু খানকে নিয়ে একটি ছবি নির্মাণ করতে। তাই ছবিটির ব্যাপারে আলাপ করতে আমি দীঘি ও শান্তুর সঙ্গে বৈঠকে বসি। বিরক্তিকর ব্যাপার হলো আমরা আলাপ করার সময় দীঘির সেই মামা বারবার এসে আলোচনায় হস্তক্ষেপ করছিলেন। শেষ পর্যন্ত আমি বিরক্ত হয়ে বৈঠক ছেড়ে আসতে বাধ্য হই। এ কারণে ছবিটি নির্মাণ করা আমার পক্ষে আর সম্ভব হয়নি। আরেকটি বিষয় হলো দীঘি নায়িকা হয়ে আসতে না আসতেই নিজেকে বড় মাপের কিছু একটা ভাবতে শুরু করেছিলেন।
তাঁর প্রথম ছবি ছিল সিনিয়র নির্মাতা দেলোয়ার জাহান ঝন্টুর ‘তুমি আছ তুমি নেই’। ছবিটি রিলিজের আগে দীঘি হঠাৎ করে মিডিয়ার কাছে মন্তব্য করে বসেন ছবিটি নাকি ভালো হয়নি। তাঁর এমন নেতিবাচক মন্তব্যের কারণে ছবিটি ব্যবসায়িকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। একটি ছবির একজন শিল্পী যদি নিজের ছবিটি নিয়ে এমন নেতিবাচক মন্তব্য করেন তাহলে তা পুরো প্রজেক্টের জন্য ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এর ফলে কোনো নির্মাতা তাঁকে নিয়ে কাজ করতে আগ্রহী হবেন না এটিই স্বাভাবিক। দীঘির নায়িকা হিসেবে সফল না হওয়ার আরেকটি কারণ হলো টিকটক করা তাঁর নেশা হয়ে গেছে। এতে তিনি ও তাঁর সেই মামা দর্শকের নজরে এসেছেন এবং তাঁর ওপর বাজে প্রভাব পড়েছে। এ ছাড়াও দীঘি বারবার নিজেকে নানা বিতর্কে জড়িয়ে নিজের ক্ষতি নিজেই করছেন।
সর্বশেষ দুবাইয়ে স্বর্ণের দোকান উদ্বোধন করতে গিয়ে নতুন বিতর্কের জন্ম দেন তিনি। আমি বলব তাঁর বাবা, মা এই চলচ্চিত্রের মানুষ, শিশুশিল্পী হিসেবে তিনি জনপ্রিয়ও ছিলেন। তাই চলচ্চিত্রকাররা তাঁকে ঘরের মেয়ে হিসেবে নিয়ে কাজ করতে চাইবেন এটিই স্বাভাবিক। কিন্তু তিনি নিজের নির্বুদ্ধিতার কারণে নিজেই নিজেকে মাইনাস করে ফেলেছেন।’ জনপ্রিয় চলচ্চিত্র নির্মাতা এস এ হক অলিক বলেন, ‘আসলে একজন নায়ক-নায়িকা হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে তাঁকে যথাযথভাবে স্ক্রিনে উপস্থাপন করতে হবে। এ বিষয়টি হয়তো দীঘির ক্ষেত্রে এখনো হয়নি। তাছাড়া সিনিয়র নির্মাতাদের সম্মান করতে হবে। যেটি দীঘি তাঁর প্রথম ছবি ‘তুমি আছ তুমি নেই’তে না করে এর নির্মাতা দেলোয়ার জাহান ঝন্টুর বিরাগভাজন হয়েছেন।
আরেকটি কথা হলো নায়িকা হয়ে ওঠার আগেই টিকটক করে সস্তা হয়ে যাওয়ায় দর্শক তাঁকে আর গ্রহণ করতে পারছে না। তাঁকে নায়িকা হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে একজন প্রপার গার্ডিয়ানের দরকার আছে, কারণ শিশুশিল্পী হিসেবে এই মেয়েটি যখন যোগ্যতার স্বাক্ষর রেখেছে তখন তার মধ্যে নিশ্চয়ই অভিনয়ের দক্ষতা ও যোগ্যতা আছে। এখন দরকার তার সচেতনতা এবং প্ল্যানিং। একই সঙ্গে ভালো মাপের নির্মাতাদের উচিত তাকে সুযোগ দিয়ে তার কাছ থেকে কাজ আদায় করে নেওয়া।’
আরেক জনপ্রিয় চলচ্চিত্র নির্মাতা সৈকত নাসির বলেন, ‘আমি মনে করি দীঘি দক্ষ নির্মাতার হাতে পড়েননি বলে এখনো প্রকৃত নায়িকা হয়ে ওঠতে পারেননি। তাঁর মধ্যে কোয়ালিটি আছে। কিন্তু তা বের করে আনার দায়িত্ব একজন নির্মাতার। এক্ষেত্রে নির্মাতারা যদি দীঘিকে সুযোগ দেন এবং অভিনয়ের প্রতি দীঘি সচেতন হন তাহলে বলব দীঘি হয়তো এক দিন জনপ্রিয় নায়িকা হয়ে ওঠতে পারেন।’
কাজী হায়াত পরিচালিত কাবুলিওয়ালা চলচ্চিত্রের মাধ্যমে শিশুশিল্পী হিসেবে চলচ্চিত্রে প্রবেশ করেন দীঘি। চলচ্চিত্রে অভিনয়ের আগে গ্রামীণফোনের বিজ্ঞাপনে অভিনয় করে সবার নজরে আসেন দীঘি। প্রথম চলচ্চিত্রে অভিনয় করেই ২০০৬ সালে শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার অর্জন করেন। তারপর আরও দুটি চলচ্চিত্রে অভিনয়ের কারণে শ্রেষ্ঠ শিশুশিল্পী হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জয় করেন তিনি। ব্যক্তিগত জীবনে দীঘি চলচ্চিত্র পরিবারের সন্তান। তাঁর বাবা সুব্রত চক্রবর্তী চলচ্চিত্র অভিনেতা এবং মা দোয়েল চলচ্চিত্র নায়িকা। ২০১১ সালে দীঘির মা দোয়েল মারা যান। দীঘি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে মিডিয়া স্টাডিজ ও জার্নালিজম বিভাগে পড়াশোনা করছেন। দীঘি ২০০৬ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত শিশুশিল্পী চরিত্রে মোট ১৮টি ছবিতে অভিনয় করেছেন এবং ২০২১ সালে নায়িকা চরিত্রে বড় পর্দায় তাঁর যাত্রা শুরু।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।