জুমবাংলা ডেস্ক: ঝড়-বৃষ্টিতে বাড়ি ভেঙে নিচে পড়ে থাকা পাখির ছানাদের সন্তানের স্নেহে বড় করেন বরগুনার তালতলীর ওয়ার্কশপ মিস্ত্রি মোস্তফা। চারটি বক ও একটি ছোট পানকৌড়ি কুড়িয়ে পেয়ে লালন-পালন করেন তিনি। বাংলানিউজের প্রতিবেদক জাহিদুল ইসলাম মেহেদী-র প্রতিবেদনে উঠে এসেছে বিস্তারিত।
তার ওয়ার্কশপেই বেড়ে উঠছে পাখিগুলো। ওদের ছেড়ে দিলে আবারও তা ফিরে আসে মোস্তাফার কাছে। গণমাধ্যমের কাছে এভাবেই কথাগুলো বলছিলেন বরগুনার তালতলী উপজেলার ওয়ার্কশপ মিস্ত্রি মোস্তফা।
এখন তিনি দুটি বক ও একটি পানকৌড়িকে লালন পালন করছে নিজের ওয়ার্কশপে। সবুজের মাঝে নয়, রডের সংযোগে তৈরি আগুনের ফুলকির মধ্যেও নিরাপদে ঘুরেফিরে পরম যত্নে বেড়ে উঠছে পাখিগুলো।
সমুদ্র উপকূলের এলাকা হওয়ায় এখানে রয়েছে অসংখ্য নদী-নালা ও খাল-বিল। সুন্দরবনের পর দ্বিতীয় বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বন জঙ্গল রয়েছে বরগুনার তালতলী উপজেলায়। জঙ্গলের গাছগুলোতে থাকা হাজারো পাখির বাসা। হঠাৎ হঠাৎ ঝড়ে মাঝেমধ্যেই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেই ঝড়ে অনেক সময় পাখির বাসা থেকে ছানা নিচে পড়ে যায়।
তখন সেই ছানাগুলো হয় পশুদের খাবার। ৪/৫ মাস আগে কোন এক ঝড় বন্যার পর, সকালে মাছ ধারার জন্য খালে যাচ্ছিলেন ওয়ার্কশপ মিস্ত্রি মোস্তফা। বিশাল বিশাল কয়েকটি গাছের নিচে ভেঙে যাওয়ায় বাসাসহ কয়েকটি পাখির ছানা পড়ে আছে। গাছ বিশাল হওয়ায় গাছে উঠতে না পেরে। ছানাগুলোকে তার দোকানে এনে সন্তানের মতো লালন-পালন করেন পরম যত্ন।
ওয়ার্কশপের নিয়মিত কাজ চলছে। পাশেই দুটি বক পানকৌড়ি ঘোরাফেরা করছে। মোস্তফা তার কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। পাশাপাশি পাখিগুলোকে খাবার দিতেও ভুলছেন না তিনি। মোস্তফার এ পাখিপ্রেম দেখে মুগ্ধ।
স্থানীয়রা বলেন, কোনো কাজে এলে মাঝেমধ্যেই চোখে পড়ে মোস্তফার পাখি প্রেম। আগে অন্য জায়গা থেকে ওয়ার্কশপের কাজ করলেও এখন মোস্তফার দোকানে কাজ করেন স্থানীয়রা। এতে করে পাখিদের ও খাবার হয়।
পাখিপ্রেমী মোস্তফা জানান, ওয়ার্কশপ ব্যবসার সঙ্গে সঙ্গে মাঝেমধ্যেই তালতলীর নদী ও সমুদ্র উপকূলের জঙ্গলের মধ্যে ছোট খালগুলোতে মাছ ধরি আমি। জঙ্গলের গাছগুলোতে থাকা পাখির বাসাগুলো মাঝেমধ্যেই ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এমন অনেক পাখির বাচ্চা গাছ থেকে পড়ে যায়। আমি বাচ্চাগুলোকে কুড়িয়ে আনি। পাখিদের খাবার জোগাতে ওয়ার্কশপের কাজের ফাঁকে খালে মাছ ধরি। অতীতে বড় করা পাখিগুলো বনে অবমুক্ত করলেও বর্তমানে আমার ঘরে রেড়ে উঠছে একটি পানকৌড়ি ও দুটি বকের বাচ্চা।
মোস্তফা আরও জানান, পাখিগুলো সব সময় মুক্ত অবস্থায় থাকে। তার ঘর ও আশপাশের এলাকায় ঘুরেফিরেই কাটে দিন। তবে এলাকার কেউ যাতে পাখিদের ক্ষতি না করতে পারে, এজন্য তাদের গায়ে লাল রং লাগিয়ে দিয়েছেন। যাতে পাখি দেখেই সবাই বুঝতে পারে এগুলো মোস্তফার ঘরে বেড়ে ওঠা পাখি। ফিরে আসা বক এখন আমার দোকানের পাহারাদার। দোকানে আমি না থাকলেও পাহারাদার হিসেবে ওরা কাজ করে। কেউ কিছু নিতে পারে না ওদের চোখ ফাঁকি দিয়ে।
তালতলী উপজেলার অনেকেই মোস্তফার এ পাখিপ্রেম দেখে মুগ্ধ। সালাম দফাদার নামের একজন প্রতিবেশি জানান, তালতলী বাজারে কোনো কাজে এলে মাঝেমধ্যেই চোখে পড়ে মোস্তফার পাখি প্রেম। দেখা যায় মোস্তফা বক বা পানকৌড়ির বাচ্চাদের খাওয়াচ্ছেন। বাচ্চাগুলো যদি মোস্তফার চোখে না পরতো তাহলে হয়তো জঙ্গলেই মারা পরতো।
পরিবেশকর্মী নজরুল ইসলাম খান লিটু বলেন, বন আর বনের প্রাণীগুলো পরিবেশের একটি অংশ। আমরা যেভাবে পরিবেশ ধ্বংসের উৎসবে মেতে থাকি সেখানে এমন পাখিপ্রেম সত্যি প্রশংসার দাবিদার। পরিবেশের সব উৎসগুলোকে আমাদের সবার বাঁচিয়ে রাখা উচিত। কারণ পরিবেশ বাঁচলেই বাঁচবো আমরা।
বরগুনার পরিবেশ আন্দোলনের আমতলী ও তালতলী সমন্বয় আরিফ রহমান জানান, বন আর বনের প্রাণীগুলো পরিবেশের একটি অংশ। আমরা যেভাবে পরিবেশ ধ্বংসের উৎসবে মেতে থাকি সেখানে এমন পাখি প্রেম সত্যি প্রশংসার দাবিদার। পরিবেশের সব উৎসগুলোকে আমাদের সবার বাচিয়ে রাখা উচিদ। কারণ পরিবেশ বাচলেই বাচবো আমরা।
তালতলী বন বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা মনিরুজ্জামান বলেন, পাখিগুলো অবমুক্ত করা হলেও আবারও ফিরে আসছে মোস্তাফার কাছে। এ পাখিগুলো যাতে আর ফিরে না আসে। সেজন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ও পাখি বিশেজ্ঞদের সঙ্গে পরামর্শ নিয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।