নভোচারীরা থাকা অবস্থায় যদি স্যুট ছিঁড়ে যায়, ভেঙে পড়ে ‘লাইফ সাপোর্ট’ ব্যবস্থা, বেরিয়ে যায় বাতাস, তাহলে কী হবে? কিংবা মঙ্গলের সবটা জুড়ে থাকা ধুলা ও ক্ষতিকর কণা যদি ঢুকে পড়ে এই সুযোগে? শুধু স্যুট নয়, নষ্ট হতে পারে অস্থায়ী আবাস হিসেবে গড়ে তোলা ঘরগুলোও। পানি স্বল্পতার ফলে এগুলো যে চাইলেই ধুয়ে ঠিকঠাক করে নেওয়া যাবে, তাও নয়।
ইলন মাস্ক অবশ্য বলছেন, মঙ্গলে যেহেতু বরফ পাওয়া গেছে, যথেষ্ট শক্তি থাকলে এর মাধ্যমে পানি তৈরি করা সম্ভব। সে জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে সৌরশক্তি কিংবা জিওথার্মাল (ভূত্বাপীয়) শক্তি। তবে সে জন্য যথেষ্ট সময় লাগবে। হয়তো হবে কোনোদিন, তবে তার আগে প্রথম নভোচারী ও বসবাসকারীদের তো বেঁচে থাকতে হবে!
মাটিতেও ফাঁদ পেতে আছে মৃত্যু। মঙ্গলের ধূলোবালুতে রয়েছে অনেক বেশি ঘনত্বের পারক্লোরেট। এই লবণ আপনার থাইরয়েড গ্ল্যান্ডের বাজে ধরনের ক্ষতি করতে পারে। হাত দিয়ে ধরতে এমনিতে সমস্যা নেই। তবে খাবার বা পানিতে গেলেই সমস্যা। আর এই মাটি ব্যবহার করে উদ্ভিদ ফলানোর কথাও ভাবা যাবে না।
আজ পর্যন্ত মঙ্গলে কোনো প্রাণ পাওয়া যায়নি। বিজ্ঞানীরা মোটামুটি নিশ্চিত, মঙ্গলে কোনো অণুজীব বা প্রাণ নেই। তবু কোথাও বসতি স্থাপন করলে সবটা ভালোভাবে দেখতে হবে পরীক্ষা করে। কারণ, মোটামুটি নিশ্চিত হলেও শতভাগ নিশ্চিত হওয়ার উপায় আসলে নেই।
বদ্ধ জায়গায় বিভিন্ন ধরনের মানুষের দীর্ঘসময় একসঙ্গে থাকার বিষয়টি একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এ ধরনের অভিযানে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মুভি-সিরিজ বা গল্পের মতো রোমাঞ্চকর ঘটনা ঘটে না। ফলে একসঙ্গে থাকতে গিয়ে অনেক সময় সহকর্মীরা একে অপরকে অপছন্দ করতে শুরু করেন। নিজ গ্রহ থেকে বহু দূরে, বন্ধু-বান্ধব ছাড়া ত্যক্ত-বিরক্ত—শুধু কাজ আর কাজ। মানুষের জন্য কঠিন বটে!
এরকম ঘটনার আদর্শ উদাহরণ বায়োস্ফিয়ার টু প্রজেক্ট। ১৯৯৪ সালে এই প্রকল্পে দীর্ঘদিন সাতজন মানুষকে একসঙ্গে বদ্ধ জায়গায় রাখা হয়েছিল। নানা ধরনের গবেষণা নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও একসময় তাঁরা দুই দলে ভাগ হয়ে গিয়ে একরকম যুদ্ধ শুরু করে দিয়েছিলেন। ফলে এ প্রকল্প নির্ধারিত সময়ের আগে শেষ করে দিতে হয়েছিল।
তবে এরকম মানুষও আছেন, যাঁরা এরকম বদ্ধ পরিবেশে টিকে যেতে পারেন। মার্স-৫০০ নামের এক প্রকল্প পরিচালিত হয় ২০০৭-২০১১ সালের মধ্যে। ছয় সদস্যের একটি দল রাশিয়ার মস্কোর এক বদ্ধ গবেষণাগারে সিমুলেটেডভাবে তৈরি মঙ্গলের পরিবেশে প্রায় ৫২০ দিন সময় কাটান। কোনোরকম ঝামেলা ছাড়াই শেষ হয় এ প্রকল্প। এই মানুষগুলোকে খুঁজে বের করতে হয়েছে, বাছাই করেছেন মনস্তত্ত্ববিদরা। তবে তাঁরা প্রতিবার এ কাজ নিখুঁতভাবে করবেন, সেরকম আশা করা বাতুলতা। ঝুঁকি তাই থেকেই যায়।
এত সমস্যা, বিপদের ঝুঁকির পরেও মানুষ কখনো পিছিয়ে যায়নি। বারবার জয় হয়েছে কৌতূহলের। মঙ্গল অভিযানের জন্যও এ কথাই সত্যি এখন পর্যন্ত। মানুষ শিখছে, জানছে, সতর্ক হচ্ছে, পরিকল্পনা করছে। তবু ঝুঁকি থাকবেই। সেই ঝুঁকি নিয়েই এগিয়ে যাবেন দুঃসাহসী নভোচারীরা। এভাবেই এগোয় সভ্যতা।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।