জুমবাংলা ডেস্ক : একের পর এক মার্কেট বন্ধ করেও জনস্রোত ঠেকাতে পারছেন না নারায়ণগঞ্জের জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তারা। নতুন করে করোনায় আক্রান্তের তালিকায় আছেন ১০ গার্মেন্ট শ্রমিকও।
সামাজিক দূরত্বের বালাই তো দূরের কথা, ‘রেড জোন’ ঘোষণা করা নারায়ণগঞ্জ শহরে লকডাউনের মধ্যেও যানজটে বসে থাকতে হচ্ছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা।
শুধু নগরীর প্রধান প্রধান সড়কের অবস্থাই যে এমন তা নয়, শীতলক্ষ্যা নদীর খেয়া পারাপারের ঘাটগুলোতে বিকালের পর ঘরমুখো মানুষের ভিড় দেখে বোঝার উপায় নেই এই জেলা করোনার এপি সেন্টার।
জেলায় প্রায় সাড়ে ৫ শতাধিক গার্মেন্ট, শিল্প কারখানা চলছে পুরোদমে, মার্কেট বিপণি বিতানও লোকে লোকারণ্য। ফলে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর তরফ থেকে লকডাউন বাস্তবায়ণ করা রীতিমতো অসম্ভব ব্যাপার।
জীবানুনাশক টানেল স্থাপন করেই যেন দায়িত্ব শেষ নারায়ণগঞ্জের মার্কেট মালিক আর ব্যবসায়ীদের। আর যতো ‘মরার উপর খাড়া ঘা’ হয়েছে হতদরিদ্র ফুটপাতের হকারদের।
শুধু হকার উচ্ছেদই নয়, দরিদ্র হকারদের মালামাল পর্যন্ত ক্রোক করছে পুলিশ। এদিকে নারায়ণগঞ্জে ১০জন গার্মেন্ট শ্রমিকদের করেনায় আক্রান্তের খবর নিশ্চিত করেছেন নারায়ণগঞ্জ জেলা সিভিল সার্জন ডা.ইমতিয়াজ আহমেদ।
তবে আক্রান্ত শ্রমিকদের কর্মস্থান শাটডাউন করা হবে না বলে জানিয়েছেন তিনি। এদিকে সচেতন নাগরিকরা বলছেন, এখন বাংলাদেশে করোনার পিক টাইম চলছে। এভাবে চলতে থাকলে নারায়ণগঞ্জে ‘ডিজাস্টার’ কেউ ঠেকাতে পারবেনা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, করেনার এপি সেন্টার বা হটস্পট, কোন বিশেষনই যেন মিল খাচ্ছে না শিল্প ও বন্দরনগরী নারায়ণগঞ্জের বর্তমান চিত্র। লকডাউনের মধ্যেই চলছে ৫ শতাধিক শিল্প কারখানা, চলছে মার্কেট বিপণি বিতান আর রাস্তায় চলছে শত শত যানবাহন।
সকাল থেকে বিকাল অবধি নগরীর প্রধান প্রধান সড়কের তীব্র যানজট দেখে বোঝার উপায় নেই এই জেলায় প্রতিদিন করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে।
যানজট এতোটাই বাড়ছে যেন ট্রাফিক ব্যবস্থাও ভেঙ্গে পরেছে করোনার রেডজোন নারায়ণগঞ্জে। বিভিন্ন মার্কেটের সামনে গিয়ে দেখা গেছে, আগতদের মধ্যে নারীদের সংখ্যাই বেশি।
শহরের বন্দর, নবীগঞ্জ, বরফকল ও ৫নং ঘাটসহ কয়েকটি খেয়াঘাটে গিয়ে দেখা গেছে অবিশ্বস্য দৃশ্য। শহর থেকে বন্দরমুখী মানুষের ভিড়ে তীল ধারণেরও যেন স্থান নেই ঘাট এলাকায়।
এদিকে গার্মেন্টসহ শিল্প প্রতিষ্ঠান খুলে দেয়ার পর যে আশঙ্কা তৈরি হয়েছিল সেই আশঙ্কা ধীরে ধীরে বাস্তবে রুপ নিচ্ছে। বিভিন্ন গার্মেন্ট ও শিল্প প্রতিষ্ঠানে কর্মরত মোট ১০ জন শ্রমিক করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইমতিয়াজ।
রোববার সন্ধ্যায় তিনি জানিয়েছেন, আক্রান্ত শ্রমিকরা জেলার ফতুল্লার বিসিকসহ বিভিন্নস্থানে শিল্প কারখানায় কর্মরত আছেন। তিনি জানান, আক্রান্ত হবে আবার সুস্থ হবে। আক্রান্তদের নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। সতর্ক থেকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো চলবে।
আক্রান্ত ব্যক্তিদের কারণে কোনো গার্মেন্টস বা শিল্প প্রতিষ্ঠান শাটডাউন করা হবেনা। তবে আক্রান্ত শ্রমিকদের যথাযথ নিয়মে আইসোলেশনের ব্যবস্থা করতে হবে। তারা সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসা সেবা নিবেন।
অপরদিকে নারায়ণগঞ্জ কোভিড-১৯ হাসপাতাল( খানপুর ৩০০শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল) এর তত্ত্বাবধায়ক ডা. গৌতম রায় জানিয়েছেন, গত এক সপ্তাহে প্রায় শতাধিক শ্রমিক বিভিন্ন উপসর্গ নিয়ে এখানে চিকিৎসা নিয়েছেন।
এদের মধ্যে অনেক শ্রমিক তাদের নমুনা পরীক্ষার জন্য দিয়েছেন। নমুনা দিতে আসাদের শুধু মোবাইল নাম্বারই লিপিবদ্ধ করা হয়। কিন্তু চিকিৎসা নিতে আসা শ্রমিকদের সংখ্যা বাড়ার কারণে আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম কে শ্রমিক বা কে কোন পেশার সেটা আমরা জেনে রাখার চেষ্টা করছি।
এদিকে নারায়ণগঞ্জে গত ২৪ ঘণ্টায় ২২ জন করোনা ভাইরাসে (কোভিড-১৯) আক্রান্ত রোগী শনাক্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন জেলা করোনা সমন্বয় কমিটির ফোকাল পার্সন ডা.জাহিদুল ইসলাম।
এ সময়ের মধ্যে জেলায় ২ জনের নতুন মৃত্যুর সংবাদ নিশ্চিত হওয়া গেছে। গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ৪১৯ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে, যেখানে ২২ জনের করোনা পজেটিভ শনাক্ত করা হয়েছে।
এ পর্যন্ত জেলায় মোট ৬ হাজার ৪৮৩ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে যার মধ্যে এক হাজার ৬৩১ জনের রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।