জুমবাংলা ডেস্ক : প্রথম স্বামী জাকিরের অত্যাচারে সংসার ছেড়ে শাহ আলম নামে এক ব্যক্তিকে বিয়ে করেন ফতিমা বেগম নামে বরগুনার এক নারী। তাদের নয় বছরের সংসারে রয়েছে দুটি সন্তানও। অথচ স্ত্রীকে অপহরণের মামলায় স্বামী শাহ আলমকে ২০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন বিচারিক (নিম্ন) আদালত।
স্বামীকে কারামুক্ত করতে দুই শিশু সন্তানকে নিয়ে আদালতের বারান্দায় ঘুরছেন ফাতিমা। হাইকোর্টে করেছেন জামিন আবেদন। হাইকোর্টের বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহীম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের দ্বৈত বেঞ্চে এর শুনানি হতে পারে বলে জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রথম স্বামীর নির্যাতন সইতে না পেরে ২০১২ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি তার পূর্বের স্বামী জাকির হোসেনকে তালাক দিয়ে তার ঘর ছাড়েন বরগুনার ফাতিমা। তালাক দিয়ে বিয়ে করেন শাহ আলমকে। বিয়ের নয় বছর ধরে সুখে শান্তিতেই ছিলেন তারা। এই দম্পতির ৭ ও ৫ বছর বয়সী দুটি সন্তান রয়েছে।
কিন্তু ২০১২ সালর ৫ মে স্ত্রীকে অপহরণের অভিযোগে ফাতিমার সাবেক স্বামী মামলা করেন শাহ আলমের বিরুদ্ধে। সেই মামলার বিচার চলছে নয় বছর ধরে। এরই মধ্যে একাধিকবার ফাতিমা আদালতে বলেছেন, দ্বিতীয় স্বামী শাহ আলম তাকে অপহরণ করেননি। কিন্তু তার কথায় কর্ণপাত করেনি কেউ। দীর্ঘ শুনানি শেষে অপহরণের দায়ে শাহ আলমকে ২০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেন আদালত। এ ঘটনায় তাকে সহযোগিতার দায়ে আরও সাতজনকে ১৪ বছর করে কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে।
ফাতিমা জবানবন্দিতে উল্লেখ করেন, ‘আমাকে শাহ আলম অপহরণ করেনি। তাকে আমি স্বেচ্ছায় বিয়ে করেছি। ২০০৭ সালে জাকিরের সঙ্গে বিয়ে হয়। তার অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে শাহ আলমকে বিয়ে করি। দ্বিতীয় বিয়ের ৪-৫ মাস আগে জাকিরকে তালাক দেই। সে এখন আর আমার স্বামী নয়।’
‘যাকে অপহরণ নিয়ে এত কাহিনী, তিনি জবানবন্দি দেয়ার পরও কেন এমন রায়?’ এ প্রশ্নের উত্তরে আসামির আইনজীবীর অভিযোগ, ‘এ মামলায় বিচারিক মনোভাব দেখাননি বিচারক।’
আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট শিশির মনির বলেন, ‘অপহরণ মামলার মূল বিষয়বস্তু হলো ২২ ধারার জবানবন্দি। ২২ ধারার জবানবন্দিতে ভিকটিম কী বললেন, এটাই মূল আলোচ্য বিষয়। ভিকটিমের বয়স ২৭ বছর, অর্থাৎ তিনি প্রাপ্তবয়স্ক। তিনি আদালতে বলেছেন, আমি অপহৃত হইনি। আমি স্বেচ্ছায় বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হয়েছি।
‘তাহলে সেখানে আর কিছু থাকার কথা না। এ মামলায় অনিবার্যভাবে খালাস দেয়া ছাড়া আর কোনো অপশনই থাকার কথা না’ বলেন এ আইনজীবী।
মামলার নথি সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালর ৫ মে ‘অপহরণের’ ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের ৭/৩০ ধারায় শাহ আলমসহ আট জনের বিরুদ্ধে বরগুনা উপজেলার পাথরঘাটা থানায় মামলা করেন মো. জাকির হোসেন। অভিযোগ করেন, তার স্ত্রী মোছা. ফাতিমা বেগমকে অভিযুক্তরা অপহরণ করেছেন।
এ ঘটনায় মোছা. ফাতিমা বেগম বরগুনার পাথরঘাটা সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ২২ ধারার জবানবন্দি দেন। ওই বছরের ৩০ আগস্ট মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পাথরঘাটা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুস সাত্তার শাহ আলমসহ আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
এর পর ২০১৪ সালের ২৯ এপ্রিল নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল, বরগুনা এর বিচারক মো. হাফিজুর রহমান সকলের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন।
এরপর রাষ্ট্রপক্ষ আটজন সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ করে এবং আসামি পক্ষ দুজন সাক্ষীর জবানবন্দি গ্রহণ করে। এর মধ্যে ভিকটিম ফাতিমা বেগম এক নং সাফাই সাক্ষী হিসেবে আদালতে জবানবন্দি পেশ করেন। মামলায় সাক্ষী ও যুক্তিতর্ক শেষে ২০২০ সালের ১৪ ডিসেম্বর বিচারক মো. হাফিজুর রহমান শাহ আলমকে ২০ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানা করেন। অনাদায়ে আরও এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেন আদালত।
এছাড়া বাকি সাতজন আসামি প্রত্যেককে ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ২০ হাজার টাকা জরিমানা করেন। অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও তিনমাসের বিনাশ্রম কারাদণ্ড দেয়া হয়।
এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে শাহ আলমের স্ত্রীর পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির আপিল দায়ের করেন। তাকে সহযোগিতা করেন আইনজীবী মো. আরিফুর রহমান।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।