নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর: গাজীপুরের ৫টি আসনে ১৬টি দলের মোট ৩৮ জন প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তবে ভোটের মাঠে আওয়ামী লীগ (নৌকা) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী (ট্রাক ও ঈগল) ছাড়া অন্য কোনো দলের প্রার্থীদের প্রচারণা দেখা যাচ্ছে না৷ ভোটারদের কাছেও যাচ্ছেন না তেমন, নেই লিফলেট বা পোস্টার।
গাজীপুরের বিভিন্ন আসনে ঘুরে দেখা যায়, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দলীয় প্রার্থীদের ফেস্টুন ও পোস্টার লাগানো হয়েছে। পাশাপাশি সমান তালে পোস্টার রয়েছে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের। এছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে ও বিভিন্ন মোড়ে তাদের ক্যাম্প করে ভোট চাচ্ছেন কর্মীরা। দিনভর চলছে মাইকিং ও পথসভা। কেউ কেউ বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় লিফলেট বিতরণ করে ভোট চাচ্ছেন৷ তবে নৌকা, স্বতন্ত্র প্রার্থীর ট্রাক ও ঈগল প্রতীক ছাড়া অন্য কোনো প্রতীকের প্রচারণা চোখে পড়েনি৷ বিচ্ছিন্ন কয়েকটি জায়গায় লাঙ্গল প্রতীকের পোস্টার দেখা গেছে।
গাজীপুর-২ আসনে ৯ জন প্রার্থী লড়াই করবেন, গাজীপুর-১, ৩ ও ৪ আসনে ৭ জন এবং গাজীপুর-৫ থেকে লড়বেন ৮ জন প্রার্থী। সে সকল দল প্রতীক নিয়ে লড়ছেন তারমধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ (নৌকা), স্বতন্ত্র (ট্রাক ও ঈগল), জাতীয় পার্টি (লাঙ্গল), তৃণমূল বিএনপি (সোনালী আঁশ), ইসলামী ঐকজোট (মিনার), বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (নোঙ্গর), বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন (ফুলের মালা) বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি (একতারা), ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (আম), ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশ (চেয়ার), বাংলাদেশ কংগ্রেস (ডাব) কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ (গামছা), জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল—জাসদ (মশাল), বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফ’র (টেলিভিশন) ও গণফোরাম (উদীয়মান সূর্য)।
কয়েকটি আসনের ভোটারদের সঙ্গে কথা হলে তারা জানান, নির্বাচনে কতগুলো দল অংশ নিয়েছে আমরা জানিনা, তাদের আমরা ঠিকভাবে চিনিও না। পোস্টার ও মাইকিং দেখে মনে হচ্ছে শুধুমাত্র নৌকা আর ট্রাক ও ঈগলের নির্বাচন৷ তাছাড়া রাস্তায় পোস্টার থাকলেও খুব কম সংখ্যক প্রার্থী ভোটের জন্য আসছেন। তারা সবাই পোস্টার- মাইকিং আর পথসভায় ভোট চাচ্ছেন। আগে যেমন নির্বাচনে বাড়ি বাড়ি এসে বিভিন্নভাবে ভোটারদের কাছে ভোট চাইতেন এবার তেমন দেখা যাচ্ছে না।
গাজীপুরের ৫টি আসনে নির্বাচনে মূলত প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে আওয়ামী লীগ ও স্বতন্ত্র প্রার্থীদের মধ্যে। এছাড়া ভোটের মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার মতো প্রার্থী নেই।
গাজীপুর-১ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আ ক ম মোজাম্মেল হকের সঙ্গে ভোটের মাঠে সমান তালে লড়ছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী ট্রাক প্রতীকের উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রাসেল।
গাজীপুর-২ আসনে অবশ্য আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাহিদ আহসান রাসেলের বিপক্ষে ভোটের মাঠে নিজ দলের দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী। ট্রাক প্রতীকে মহানগর সাবেক আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি কাজী আলিম উদ্দিন ও ঈগল প্রতীকে মহানগর যুবলীগের যুগ্ম আহবায়ক সাইফুল ইসলাম।
গাজীপুর-৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী রুমানা আলী টুসির সঙ্গে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে ট্রাক প্রতীক নিয়ে লড়াই জমিয়েছেন বর্তমান সংসদ সদস্য ইকবাল হোসেন সবুজ।
গাজীপুর-৪ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তাজউদ্দিন কন্যা সিমিন হোসেন রিমির সঙ্গে লড়ছেন ভোটের মাঠে ঈগল প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী কেন্দ্রীয় কৃষক লীগের উপদেষ্টা আলম আহমেদ৷
গাজীপুর-৫ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বর্তমান সংসদ সদস্য মেহের আফরোজ চুমকির আসনে শক্ত প্রতিপক্ষ ট্রাক প্রতীক নিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য ও সাবেক জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মো. আখতারুজ্জামান।
টঙ্গী এরশাদ নগর এলাকার ভোটার বিপ্লব হোসেন বলেন, নির্বাচন দেখে মনে হচ্ছে ট্রাক আর নৌকার নির্বাচন। অবশ্য এদেরকেই মানুষ চিনে, এদের মধ্যেই একজন জিতবে৷ এছাড়া অন্য কোনো প্রার্থীর প্রচারণাও দেখছি না।
গাজীপুর-২ আসনের ভোটার বিলাশপুর এলাকার বাসিন্দা রাবেয়া খাতুন বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো ভোটার ভোট চাইতে আসেননি। আমরা অনেক প্রার্থীকে ঠিকভাবে চিনি না। ভোট না চাইলে কাকে ভোট দিবো।
কালিয়াকৈরে আসনের ভোটার আবুল কাশেম বলেন, এবারের নির্বাচন শুধু ফেসবুকে হচ্ছে মনে হচ্ছে। প্রার্থীরা পথসভা করছে এগুলো কর্মীরা ফেসবুকে দিয়ে খালাস। বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে ভোট চাচ্ছে না। এতে প্রবীণ ও মহিলা ভোটারদের মধ্যে নির্বাচনের প্রভাব পড়ছে না।
গাজীপুর-৩ আসনের ভোটার সাঈদ হোসেন বলেন, ভোটে আগের মতো আমেজ নাই। ভোটারদের কাছে প্রার্থীরা আসছে না৷ আসলেও ট্রাক আর নৌকার প্রার্থী৷ অন্য কোনো প্রার্থীর চেহারা ঠিকভাবে দেখিনি। পোস্টারও নেই।
গাজীপুর-১ আসনের ভোটার আলম আহমেদ বলেন, এলাকায় শুধু ট্রাক আর নৌকার পোস্টার। আর কয়জন প্রার্থী আছে আমরা জানি না। কেউ ভোট চাইতে আসেনি৷ ভোট না চাইলে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে কাকে ভোট দিবো।
গাজীপুর-৫ আসনে বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির (বিএসপি) প্রার্থী তৃতীয় লিঙ্গের (হিজরা) উর্মি বলেন, কিছু পোস্টার ছাপানো হয়েছে। আমার মার্কা একতারা, সবার কাছে গিয়ে ভোট চাচ্ছি, সবাই মুখে মুখে ভোট দিবেন বলছে। কিন্তু তাদের মনে কি আছে তাতো জানি না।
গাজীপুর-২ আসনের ঈগল প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি অনেক আগে থেকেই পোস্টার ব্যানার লাগিয়েছি কিন্তু দেখেন নৌকার ফেস্টুন পোস্টার আছে, ট্রাক প্রতীকের ফেস্টুন আছে কিন্তু আমার ফেস্টুন শুধু ছিড়ে ফেলা হচ্ছে না, পুড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে। তবুও প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছি।
গাজীপুর-১ আসনের বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশনের প্রার্থী মো. সফিকুল ইসলাম বলেন, আমরা এখন লিফলেট বিতরণ করছি এবং মাইকিং করছি। কয়েকদিনের মধ্যে পোস্টারও দিবো৷ মানুষের মধ্যে ভালো সারা পাচ্ছি।
গাজীপুর-২ আসনের ইসলামিক ফ্রন্ট বাংলাদেশের প্রার্থী মো. আমির হোসাইন বলেন, পোস্টার ছাপিয়ে অলরেডি প্রচার প্রচারণা শুরু করেছি৷ জনগণ যেনো তাদের ভোট দিতে পারে এজন্য তাদের দোরগোড়ায় পৌছানোর চেষ্টা করছি৷
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।