জুমবাংলা ডেস্ক: করোনার পর রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর কারণে আন্তর্জাতিক বাজারে সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্য বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশসহ প্রায় সব দেশেই। একই সঙ্গে বাংলাদেশে ডলারের বিপরীতে টাকার মানও কমেছে। এতে আমদানি পণ্যের খরচ বেড়েছে। এসব মিলে পণ্যের দামে পাগলা হাওয়া বইছে। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে ভারত, নেপাল, মালদ্বীপ ও ভুটানের চেয়ে বাংলাদেশে পণ্যের দাম বেশি হারে বেড়েছে। এমনকি এশিয়ান ক্লিয়ারিং ইউনিয়নের (আকু) সদস্য মিয়ানমারের চেয়েও বেশি বেড়েছে এ দেশে। তবে শ্রীলংকা ও পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশে পণ্যের দাম বৃদ্ধির হার কম। সম্প্রতি বিশ্বব্যাংকের প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
চলতি বছরের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত এই তিন মাসের আন্তর্জাতিক ও এশিয়ার দেশগুলোর বাজারদর বিশ্লেষণ করে বিশ্বব্যাংক আলোচ্য প্রতিবেদনটি তৈরি করেছে। এতে বলা হয়, ওই সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে। একই সঙ্গে জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধিতে সব ধরনের পরিবহণ খরচ বেড়েছে। সবচেয়ে বেশি বেড়েছে আন্তর্জাতিক জাহাজ ভাড়া। এর প্রভাব পড়েছে পণ্যের দামেও। বাংলাদেশে ভোজ্যতেলের দাম বেড়েছে ৩২ শতাংশ, কোমল পানীয়ের দাম ২৮ শতাংশ, গণপরিবহণের ভাড়া ২২ শতাংশ, বিবিধ খাদ্যপণ্যের দাম ১২ শতাংশ, সবজির দাম ১৬ শতাংশ, ডিম ও মাংসের দাম ১২ শতাংশ, শস্যজাতীয় পণ্যের দাম ৮ শতাংশ, জ্বালানি তেলের দাম ২০ শতাংশ ও কেরোসিনের দাম বেড়েছে ৫ শতাংশ।
সূত্র জানায়, গত জুনের পর জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে ৪৮ থেকে ৫২ শতাংশ। যা গত ৫ আগস্ট থেকে কার্যকর হয়েছে। গত মে থেকে ডলারের দামও বেড়েছে। এর প্রভাবে জুনের পর পণ্যের দাম আরও বেড়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, গত এপ্রিল থেকে জুন এই তিন মাসে ভারতে সবজির দাম বেড়েছে ১৪ শতাংশ, গাড়ির জন্য পেট্রোলের দাম ১৪ শতাংশ, ভোজ্যতেলের দাম ১৩ শতাংশ, মসলার ১২ শতাংশ, অন্যান্য জ্বালানি তেলের ১২ শতাংশ, মাছ ও মাংসের দাম ১১ শতাংশ ও গণপবিরহণের ভাড়া বেড়েছে ৯ শতাংশ। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনে দেখা যায়, প্রায় সব পণ্যের দামই ভারতের চেয়ে বাংলাদেশে বেশি হারে বেড়েছে। একই সময়ে মালদ্বীপে মাংসের দাম ২৫ শতাংশ, বিদ্যুৎ, গ্যাস ও জ্বালানির দাম ২০ শতাংশ, ভোজ্যতেলের দাম ১৮ শতাংশ, অন্যান্য খাদ্যপণ্যের দাম ১৬ শতাংশ, মাছের দাম ৫ শতাংশ, দুধ ও দুগ্ধজাতীয় পণ্যের দাম ৪ শতাংশ, বিমান ভাড়া ৩ শতাংশ বেড়েছে। আলোচ্য তিন মাসে পাকিস্তানে প্রক্রিয়াজাত সবজির দাম ৭০ শতাংশ, গাড়ির জ্বালানি ৬০ শতাংশ, গণপরিবহণ ৪০ শতাংশ, সবজি ৩৮ শতাংশ, গম ২৫ শতাংশ, জ্বালানি তেল ২০ শতাংশ ও বিদ্যুতের দাম ১৮ শতাংশ বেড়েছে। প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, পাকিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশে পণ্যমূল্য কম বেড়েছে। কিন্তু মালদ্বীপের চেয়ে বাংলাদেশে বেশি বেড়েছে। প্রতিবেদন তৈরির সময় যেসব পণ্য যে দেশে বেশি ব্যবহৃত হয় ওইসব পণ্যের দাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়। যেমন বাংলাদেশে কৃষি ও দরিদ্র মানুষের ঘরে জ্বালানি হিসাবে কেরোসিন ব্যবহৃত হয়, এ কারণে বাংলাদেশে এর মূল্যবৃদ্ধি দেখানো হয়েছে। অন্য দেশে এর ব্যবহার কম বলে তা দেখানো হয়নি। মসলার ব্যবহার ভারতে বেশি এ কারণে এর দাম বৃদ্ধি তাদের দেশের অংশে দেখানো হয়েছে। অন্য দেশে দেখানো হয়নি। মালদ্বীপের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিমানে। এজন্য বিমান ভাড়ার তথ্য দেখানো হয়েছে। অন্য দেশে এটি দেখানো হয়নি। এ দেশে স্থল যোগাযোগ কম বলে গণপরিবহণের ভাড়া দেখানো হয়নি।
গত বছরের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত সময়ে গড়ে গমের দাম ভারতে ৫ দশমকি ২ শতাংশ, বাংলাদেশে ১১ দশমিক ৪ শতাংশ ও পাকিস্তানে ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়েছে। আলোচ্য সময়ে বিশ্বে ডিজেলের দাম বেড়েছে ৪৭ শতাংশ। এর প্রভাবে ভারতে ১০ দশমিক ৩ শতাংশ, বাংলাদেশে ৭ দশমকি ৭ শতাংশ, পাকিস্তানে ২৫ দশমিক ৬ শতাংশ বেড়েছে। ভোজ্যতেলের দাম বিশ্বে বেড়েছে ২৯ দশমিক ৪ শতাংশ, ভারতে ১১ দশমিক ৯ শতাংশ, বাংলাদেশে ১৫ দশমিক ৭ শতাংশ এবং পাকিস্তানে ১৭ দশমিক ২ শতাংশ বেড়েছে। চিনির দাম বিশ্বে বেড়েছে ২৪ দশমিক ৬ শতাংশ। এর প্রভাবে ভারতে ১০ দশমিক ২ শতাংশ, বাংলাদেশে ১৬ দশমিক ৭ শতাংশ, পাকিস্তানে ১৮ দশমিক ৮ শতাংশ বেড়েছে।
মিয়ানমারের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সেন্ট্রাল ব্যাংক অব মিয়ানমারের প্রতিবেদনে দেখা যায়, ওই দেশে পণ্যমূল্য খুব বেশি বাড়েনি। কারণ তাদের আমদানি কম। এছাড়া বাণিজ্যের বড় অংশই হয় চীনের সঙ্গে। যে কারণে খুব বেশি প্রভাব পড়েনি। তবে সবজি, মাছ, মাংস, চাল এসব পণ্যের ক্ষেত্রে মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৫ থেকে ৭ শতাংশ। গণপরিবহণে হয়েছে ৬ শতাংশ। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি মূল্যস্ফীতি হয়েছে শ্রীংলকায় ২৮ শতাংশ। মুদ্রার অবমূল্যায়নও তাদের দেশে বেশি। ডলারের বিপরীতে ভুটানের মুদ্রার কোনো অবমূল্যায়ন হয়নি। বরং তাদের মুদ্রার মান বেড়েছে। বাংলাদেশের মুদ্রার মান কমেছে কম। বাকি দেশগুলোর মধ্যে পাকিস্তান, নেপাল, আফগানিস্তানের মুদ্রার মান অনেক বেশি কমেছে। সংশ্লিষ্টরা মনে করেন, যেহেতু বাংলাদেশে ডলারের বিপরীতে টাকার মান সার্ক দেশগুলোর তুলনায় কম কমেছে সে কারণে আমদানি পণ্যের দামও কম বাড়ার কথা। কিন্তু অন্য দেশের তুলনায় বেশি বেড়েছে বাংলাদেশে। এর নেপথ্যে তারা সিন্ডিকেট, কারসাজি ও বাজার তদারকিতে ব্যর্থতাকে দায়ী করেছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।